Advertisement
০৫ মে ২০২৪

ভাণ্ডারখোলায় তৃণমূলকর্মীকে কুপিয়ে খুন

বাড়ির সামনে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে তৃণমূলের এক কর্মীকে। মৃতের নাম হানেফ শেখ (৫৯)। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে কৃষ্ণনগরের কাছে ভাণ্ডারখোলা মুসলিমপাড়ায়। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা রবিবার সকালে প্রায় এক ঘণ্টা কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান।

এখনও রক্তের দাগ মোছেনি।  ছবি:সুদীপ ভট্টাচার্য

এখনও রক্তের দাগ মোছেনি। ছবি:সুদীপ ভট্টাচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কৃষ্ণনগর শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৪ ০১:০৬
Share: Save:

বাড়ির সামনে কুপিয়ে খুন করা হয়েছে তৃণমূলের এক কর্মীকে। মৃতের নাম হানেফ শেখ (৫৯)। শনিবার রাতে ঘটনাটি ঘটেছে কৃষ্ণনগরের কাছে ভাণ্ডারখোলা মুসলিমপাড়ায়। দোষীদের গ্রেফতারের দাবিতে স্থানীয় বাসিন্দারা রবিবার সকালে প্রায় এক ঘণ্টা কৃষ্ণনগর-করিমপুর রাজ্য সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। পরে পুলিশ গিয়ে অবরোধ তুলে দেয়। নিহতের পরিবার স্থানীয় এক বাসিন্দা-সহ মোট দু’জনের বিরুদ্ধে খুনের মামলা দায়ের করেছে। জেলার পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, “খুনের কারণ এখনও পরিষ্কার নয়। ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।”

এ দিকে, হানেফের মৃত্যুর পর শুরু হয়েছে রাজনৈতিক চাপানউতোর। তৃণমূলের অভিযোগ, তাদের সক্রিয় কর্মী হানেফকে ধারাল অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে খুন করেছে বিজেপি ও সিপিএম। অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে সিপিএমের দাবি, এটা পারিবারিক বিবাদ। এর সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। আর বিজেপি-র পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এটা তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দলের ফল। সম্প্রতি নদিয়া জেলায় এই নিয়ে মোট পাঁচ জন তৃণমূল কর্মীকে খুন করা হল বলে দাবি জেলা তৃণমূলের।

পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, হানেফ সাইকেলে গ্রামে গ্রামে ইমিটেশন গয়না বিক্রি করতেন। তাঁর প্রথম পক্ষের স্ত্রী থাকেন ভাণ্ডারখোলা গ্রামের মল্লিকপাড়ায়। আর দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রী থাকেন ওই একই গ্রামের মুসলিমপাড়ায়। হানেফ দুই বাড়িতেই থাকতেন। শনিবার রাত বারোটা নাগাদা তিনি দ্বিতীয় পক্ষের স্ত্রীর বাড়িতে গিয়েছিলেন। সেখানেই তাঁকে গলায় কোপ মেরে খুন করা হয়। স্ত্রী লালবানু বেওয়া বলেন, “আমি ঘরের ভিতরে শুয়েছিলাম। হঠাৎ বাইরে থেকে মানুষটা আমার নাম ধরে দু’বার ডাকে। তারপরে ধপ করে কিছু একটা পড়ার শব্দ পাই। ছুটে বাইরে বেরিয়ে দেখি মানুষটা রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে আছে।” লালবানুর চিৎকারে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন। কিন্তু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই মারা যান হানেফ। খবর পেয়ে কোতোয়ালি থানার পুলিশ গিয়ে মৃতদেহ উদ্ধার করে নিয়ে আসে। হানেফের প্রথম পক্ষের স্ত্রী হিয়াতন বিবি বলেন, “আমার স্বামী তৃণমূল করত। কিন্তু তার তো তেমন কোনও শত্রু ছিল না। মানুষটাকে যে কারা মারল সেটাই বুঝতে পারছি না।” সম্প্রতি ভাণ্ডারখোলা এলাকায় একটি জমি বিক্রিকে কেন্দ্র করে কোনও‌ বিবাদের জেরে এই খুন কি না তা-ও পুলিশ খতিয়ে দেখছে।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, অভিযুক্তদের এক জন স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় কংগ্রেসের প্রার্থী ছিলেন। পরে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি গৌরীশঙ্কর দত্ত বলেন, “অভিযুক্ত ওই ব্যক্তি কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। এ বার লোকসভা ভোটে তিনি বিজেপি-র হয়ে কাজ করেছেন।” তাঁর দাবি, “ভাণ্ডারখোলা গ্রামপঞ্চায়েত সিপিএমের দখলে থাকলেও আমরা পঞ্চায়েত নির্বাচনের এক বছর হলেই অনাস্থা আনব। সিপিএমের কয়েকজন সদস্য এখন আমাদের সঙ্গে আছেন। আমরা এই পঞ্চায়েত দখল করব বুঝতে পেরেই বিজেপি ও সিপিএম এক সঙ্গে এলাকায় সন্ত্রাস চালাচ্ছে।”

অভিযোগ উড়িয়ে সিপিএমের জেলা কমিটির সম্পাদক সুমিত দে বলেন, “এই খুনের ঘটনার সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। এটা নিছক পারিবারিক বিবাদের জেরে খুন বলে আমরা জানতে পারছি।” আর বিজেপির জেলা কমিটির মুখপাত্র সৈকত সরকার বলেন, “আমাদের দলের কেউ এই খুনের ঘটনার সঙ্গে যুক্ত নয়। এটা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল।” সম্প্রতি ভাণ্ডারখোলা এলাকা থেকে বেশ কয়েকজন কংগ্রেস কর্মী ও সমর্থক বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। সৈকতবাবু বলেন, “জেলা জুড়ে বিভিন্ন দল থেকে নেতা-কর্মীরা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন। তৃণমূল থেকেও অনেকে আমাদের দলে যোগ দিচ্ছেন। তাতেই আতঙ্কিত হয়ে তৃণমূল আমাদের কর্মীদের মিথ্যা অভিযোগে ফাঁসাতে চাইছে।” বিজেপি-র দাবি, এর আগেও ফুলিয়াতে তৃণমূলের এক যুব নেতার খুনের ঘটনায় বিজেপি-র দিকেই আঙুল তুলেছিল তৃণমূল। কিন্তু সেই ঘটনায় তৃণমূলেরই শান্তিপুর পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। প্রকাশ্যে চলে এসেছিল তৃণমূলের গোষ্ঠীকোন্দল। এবারেও সেই একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হবে বলে দাবি বিজেপি-র জেলা নেতাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

murder tmc worker krishnanagar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE