Advertisement
২৮ মে ২০২৪

শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি, সমস্যায় দুই জেলার চাষিরা

বুধবার রাতের শিলা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি মুখে নদিয়া, মুর্শিদাবাদের চাষিরা। আমের মুকুল, সজনের ফুল থেকে আলু, কুমড়ো, সর্ষে সব ধরনের ফসলই নষ্ট হয়েছে মাঠে। ভাঁজ পড়েছে চাষিদের কপালে। বুধবার গভীর রাতে দুই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাপক শিলা বৃষ্টি শুরু হয়। জানা গিয়েছে নদিয়ায় প্রায় ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে শিল পড়েছে দেদার। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই শিলা বৃষ্টির ফলে নাকাশিপাড়া ব্লকের ৮টি প্রাম পঞ্চায়েতের মোট ৫২টি মৌজায় ক্ষতি হয়েছে। ফলে মাঠে থাকা গম, সর্ষে, ডাল, মশলা, সব্জি ও পেঁয়াজের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে।

নদিয়ার সন্ধ্যামাঠ পাড়ায় শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত পান গাছ দেখাচ্ছেন চাষি। (ডান দিকে) শিল পড়ে নষ্ট হয়েছে মুসুরির গাছ। নিজস্ব চিত্র।

নদিয়ার সন্ধ্যামাঠ পাড়ায় শিলাবৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্ত পান গাছ দেখাচ্ছেন চাষি। (ডান দিকে) শিল পড়ে নষ্ট হয়েছে মুসুরির গাছ। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ ০১:০১
Share: Save:

বুধবার রাতের শিলা বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি মুখে নদিয়া, মুর্শিদাবাদের চাষিরা। আমের মুকুল, সজনের ফুল থেকে আলু, কুমড়ো, সর্ষে সব ধরনের ফসলই নষ্ট হয়েছে মাঠে। ভাঁজ পড়েছে চাষিদের কপালে।

বুধবার গভীর রাতে দুই জেলার বিভিন্ন প্রান্তে ব্যাপক শিলা বৃষ্টি শুরু হয়। জানা গিয়েছে নদিয়ায় প্রায় ১৮ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে শিল পড়েছে দেদার। জেলা কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এই শিলা বৃষ্টির ফলে নাকাশিপাড়া ব্লকের ৮টি প্রাম পঞ্চায়েতের মোট ৫২টি মৌজায় ক্ষতি হয়েছে। ফলে মাঠে থাকা গম, সর্ষে, ডাল, মশলা, সব্জি ও পেঁয়াজের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে। জেলায় যে পরিমান ডাল ও সর্ষের ফলন হয়েছিল তার প্রায় ৩০-৩৫ শতাংশ এ দিনের শিলা বৃষ্টিতে নষ্ট হয়ে গিয়েছে। বিশেষ করে নাকাশিপাড়া, চাপড়া, তেহট্ট ২ ও কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকে ফসলের ব্যপক ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষি দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে।

আচমকা শিলাবৃষ্টির পরে এই সব এলাকায় বিঘার পর বিঘা জমির ফসল একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছে। গাছ থেকে ঝরে গিয়েছে ধনের, কালো জিরের ফল ও ফুল। সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত সর্ষে চাষিরা। কৃষকরা জানিয়েছেন, কিছু কিছু জায়গা মাঠ থেকে সর্ষে কেটে নেওয়া হলেও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এখনও ফসল মাঠেই ছিল। সেই সর্ষে কাটার তোড়জোড়ও শুরু করে দিয়েছিলেন চাষিরা। কিন্তু তার আগেই এই শিলাবৃষ্টির ফলে মাঠের সর্ষে মাঠেই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।

চাপড়ার পদ্মমালা গ্রামের বাসিন্দা মান‌স রায় ৪ বিঘা জমিতে ধনে ও কালো জিরে চাষ করেছিলেন। কিন্তু এই শিলা বৃষ্টিতে তার প্রায় ৮০ শতাংশ ফসলই নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তিনি বলেন, “শুধু আমারই নয়। আমাদের ফার্মার্স ক্লাবের সদস্যরা প্রায় ৪০০ বিঘা জমিতে নানান ধরনের ফসলের চাষ করেছিলেন। এই শিলা বৃষ্টিতে তার প্রায় সবটাই নষ্ট হয়ে গিয়েছে।”

কৃষ্ণগঞ্জ ব্লকের ২টি জিপির ১৫টি মৌজার ডাল শস্য,৪৫০ হেক্টর জমির বোরো ধান, ১শো হেক্টর জমির মশলা,১৫০ হেক্টর জমির সর্ষে ও ২শো হেক্টর জমির সব্জি নষ্ট হয়েছে। এছাড়াও ৯টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ৬৩টি মৌজার ৯শো হেক্টর জমির গম, ৪ শো হেক্টক জমির ডাল শস্য, ৫ শো হেক্টর জমির সর্ষে,৩২০ হেক্টর জমির মশলা ও ১৪শো হেক্টর জমির সব্জি নষ্ট হয়েছে।

এর বাইরেও কোনও কোনও এলাকায় পেঁয়াজ চাষের ক্ষতি হয়েছে বলে কৃষকরা জানিয়েছেন। জেলার কৃষি আধিকারিক বিকাশ বিশ্বাস বলেন, “শিলা বৃষ্টিতে ঠিক কী পরিমাণ ফসলের ক্ষতি হয়েছে বা কতজন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এই ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা যাতে ক্ষতিপূরণ পান তার জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরে জানাবো।”

অন্য দিকে মুর্শিদাবাদের শস্যগোলা কান্দি মহকুমার বিভিন্ন এলাকায় এখনও পাকা আলু খেত থেকে ঘরে তোলেননি অনেক চাষিই। অন্যদিকে আম গাছে আমের মুকুল, সজনে গাছে ফুল এসেছিল। বুধবার রাতের ঝড় বৃষ্টিতে অধিকাংশই ঝরে গিয়েছে। পাশাপাশি আলুর জমিতে আলুর সঙ্গে বেড়ে উঠছিল কুমড়োও। ফলে কুমড়ো চাষেরও ব্যাপক ক্ষতি হবে বলেও মনে করছেন কৃষকরা।

ফাল্গুন মাসের বৃষ্টিতে সাধারণত চাষের ক্ষতিই বেশি হয় বলে দাবি বাসিন্দাদের। এই সময়ে মাঠ জুড়ে থাকে আলু আর গ্রীষ্মকালীন সব্জি। পাশাপাশি সবে আমগাছে মুকুল আসতে শুরু করেছে বা কোনও কোনও গাছে গুটি ধরারও সময় হয়ে গিয়েছে। এমন সময়ে শিলাবৃষ্টিতে সব পণ্ড। কান্দির চাষি হৃদয় দে, পরেশ ঘোষরা বলেন, খেতে সেচের জল দেওয়া হয়েছিল কিছুদিন আগে। সে জল দাঁড়িয়ে আছে। তার পরে বৃষ্টির জলে ব্যপক ক্ষতি হবে। বিশেষত আলু আর কুমড়োর।

এই সময় আলুর চাষের সঙ্গেই আলুখেতে কুমড়ো বীজ রোপন করেন চাষিরা। কুমড়ো গাছ বড় হতে হতে আলু পেকে যায়। তখন ওই জমিতে ওই কুমড়োর গাছ ছড়িয়ে যায়। বাড়তি রাসায়নিক সার প্রয়োগের কোনও প্রয়োজন থাকে না বলে দাবি চাষিদের। এতে বাড়তি লাভ হয়।

কিন্তু সেখানে বাড়তি ক্ষতির আশঙ্কা করছেন তাঁরা। একরাতে প্রায় ১৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত, সেই সঙ্গে শিল পড়ার ফলে কুমড়ো গাছের গোড়ায় জল জমছে। খেতে জল জমলে আলুতেও পচন ধরবে। কৃষি দফতরের কর্তাব্যাক্তিদের দাবি আলু, কুমড়ো, বা যে কোনও সব্জির খেতে যাতে জল না জমে সেই দিকে কড়া নজর রাখতে হবে। খেতে জল বসে গেলেও আলুর ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা।

আমের মুকুলে ও সজনে গাছের ফুলে অসময়ের জল পড়লে মুকুল ও ফুল ঝরে যায়। ছত্রাক আক্রমণের সম্ভাবনাও থাকে। বড়ঞা ব্লকের সহকারি কৃষি আধিকারিক রবিশঙ্কর দাস বলেন, “বসন্ত কালের বৃষ্টিতে বোরো ধানের ক্ষতি হবে না বরং ভালোই হবে। কিন্তু আলু, আম, সজনে-সহ অন্যান্য সব্জি চাষের ক্ষতির মুখে।”

তেহট্টে এলাকায় বাসিন্দা আশিস ঘোষ বলেন, “আমাদের এখানে প্রচুর শিল পড়ে ডাল জাতীয় ফসল যেমন ছোলা, মসুর, মটর প্রভৃতি ফসলের গাছ পুড়ে গিয়েছে। ছোট ছোট ধান গাছেরও বৃদ্ধি কম হবে।” একই অবস্থা করিমপুরের। এলাকার চাষি বিশ্বনাথ বিশ্বাস জানান, “এলাকার প্রধান ফসল পান চাষের পক্ষে ভীষণ ক্ষতিকর। বৃষ্টির জল পান পাতায় পড়লে পাতায় দাগ দেখা যাবে আর কিছুদিন পর যখন পান গাছে রোদ পড়বে তখন গাছের লতায় পচন ধরবে।”

তেহট্টের এসডিও অর্ণব চট্টোপাধ্যায় বলেন, “কিছু কিছু এলাকায় বৃষ্টির ফলে চাষের ক্ষতি হয়েছে। কোথায় কেমন ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা বিডিওদের জানতে বলা হয়েছে।”

জানা গিয়েছে তেহট্ট-২ ব্লকের ৩ টি গ্রাম পঞ্চায়েতের ১২টি মৌজার ১১শো হেক্টর জমির গম ও ৩৫০ হেক্টর জমির ডাল শস্য নষ্ট হয়েছে।

এ দিকে বুধবার গভীর রাতের ঝড়বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ল শিবরাত্রির মেলার ম্যারাপ। শক্তিপুরের শতাব্দী প্রাচীন কপিলেশ্বর ধামের ১৭ ফেব্রুয়ারি শুরু হওয়া মেলা চলবে ২৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এ দিনের ঝড়ে মেলার একাধিক স্টল, সাংস্কৃতিক মঞ্চ ও বেশ কয়েকটি মনোহারি দোকান ভেঙে পড়ে। সব থেকে ক্ষতি হয়েছে ১২০ ফুট লম্বা একটি রেস্তোরাঁর সামিয়ানা ভেঙে পড়ে। শক্তিপুর শিবচতুদর্শী মিলন মেলা কমিটির সম্পাদক তাপস ঘোষ বলেন, “প্রায় ১০ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে। প্রশাসনকে বিষয়টি জানিয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

rain hail
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE