E-Paper

ঝড়ের প্রভাব সামান্যই, খুঁটি পড়ে বিদ্যুৎ বিভ্রাট

রেমালের ধাক্কায় দক্ষিণবঙ্গের নদিয়া জেলাও বিপর্যস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। এমনকি, এই জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৮ মে ২০২৪ ০৭:০৬
বাতাসে ছিঁড়ে উড়ে যাচ্ছে রাস্তার ধারের ফ্লেক্স। দুর্ঘটনার হাত থেকে শহরবাসীকে বাঁচাতে ঝড় বৃষ্টির মধ্যেই

বাতাসে ছিঁড়ে উড়ে যাচ্ছে রাস্তার ধারের ফ্লেক্স। দুর্ঘটনার হাত থেকে শহরবাসীকে বাঁচাতে ঝড় বৃষ্টির মধ্যেই সেই ফ্লেক্স গুলো খুলে ফেলছেন পুরসভার কর্মীরা। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে । ছবি : সুদীপ ভট্টাচার্য।

আশঙ্কা ছিল, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে রবিবার মধ্যরাত্রে তীব্র ঝড়-বৃষ্টি হবে। তার দাপটে জেলায় প্রবল ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল। সেই মতো বিপর্যয় মোকাবিলায় চূড়ান্ত পর্বের প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছিল জেলা প্রশাসন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন মাত্রায় বিপর্যয় না হওয়ায় স্বস্তি ফিরেছে। প্রশাসনের কর্তা থেকে শুরু করে জেলার সাধারণ মানুষ— রবিবার সকাল থেকে সকলের মধ্যেই একটা আতঙ্ক কাজ করছিল। তবে শেষ অবধি জেলার বিভিন্ন প্রান্তে কয়েকটি বিদ্যুতের খুঁটি উপড়ে যাওয়া, গাছের ডাল-গাছ ভেঙে পড়া ছাড়া তেমন কোনও মারাত্মক পর্যায়ের ক্ষয়ক্ষতির কথা জানা যায়নি। ঘটেনি কোনও প্রাণহানির ঘটনাও। তাই খানিক হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছেন প্রশাসনের কর্তারা। তবে প্রবল বৃষ্টিতে জেলার বেশ কিছু নিচুএলাকায় জল জমে গিয়েছে। চাষের জমিতেও ঝড়-বৃষ্টির কারণে ফসলের ক্ষতি হয়েছে। তবে জনজীবনে রেমালের তেমন কোনও প্রভাব পড়েনি বলেই কর্তাদের দাবি।

রেমালের ধাক্কায় দক্ষিণবঙ্গের নদিয়া জেলাও বিপর্যস্ত হওয়ার কথা জানিয়েছিল আবহাওয়া দফতর। এমনকি, এই জেলায় কমলা সতর্কতা জারি করা হয়েছিল। শুধু ভারী বা অতি ভারী বৃষ্টিপাতই নয়, ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা ছিল, তেমনটাই জানিয়েছেন আবহাওয়া দফতরের কর্তারা। সেই মতো ২৯ জন ডুবুরি থেকে শুরু করে প্রায় দুশো জন সিভিল ডিফেন্সের সদস্যকে তৈরি রাখা হয়। পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্রাণসামগ্রীও মজুত করা হয়। যুদ্ধকালীন তৎপরতায় বিপর্যয় মোকাবিলার জন্য গোটা জেলা জুড়ে বিশেষ বহিনী তৈরি করেছিল বিদ্যুৎ সরবরাহ দফতর। কিন্তু এই সকল আয়োজনের কিছুই প্রায় কাজে লাগেনি। কারণ, নদিয়া জেলায় রেমালের তেমন কোনও প্রভাবই পড়ল না। ফলে, বড়সড় বিপর্যয়ের হাত থেকে বেঁচে গেলেন নদিয়া জেলার মানুষ।

রবিবার গোটা রাত অস্বস্তি আর আতঙ্কের মধ্যে কাটিয়ে, সোমবার সকালে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন প্রশাসনের কর্তাব্যক্তি তথা সাধারণ মানুষ। রবিবার রাতে নদিয়ায় ভয়ঙ্কর ঝড়ের দেখা না মিললেও প্রবল বেগে বাতাস বয়ে গিয়েছে। সঙ্গে ছিল মাঝারি বৃষ্টি। এর ফলে জেলার আম, জাম, লিচুর পাশাপাশি নানা আনাজ ও ফুলের ক্ষতি হয়েছে। সেই সঙ্গে জল জমেছে বহু এলাকায়। রবিবার শেষ রাত থেকে শুরু হওয়া ঝড়ের দাপটে নবদ্বীপ শহর এলাকায় অন্তত হাফ ডজন গাছ ভেঙে পড়েছে। তবে কোথাও কোনও হতাহতের খবর নেই। রবিবার রাতে নবদ্বীপ রানির ঘাটে গঙ্গার তীরবর্তী প্রাচীন বটগাছের বড় অংশ ভেঙে পড়ে। রাতেই সেটি পরিষ্কার করা হয়। সোমবার সকালে পুরসভার ৩, ৪, ১৭, ১৮, ২০ এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিভিন্ন জায়গায় গাছ পড়ে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের গাছটি একটি বাড়ির উপরে পড়ে যায়। তবে কোনও ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। ঝড়ে শান্তিপুর পুরসভা এলাকায় একটি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। অন্য দিকে, কৃষ্ণনগরের ঘূর্ণী এলাকায় কিছু রাস্তায় জল জমেছে বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে।

রেমালের প্রভাবে রবিবার রাতের বৃষ্টিতে চাকদহ-বনগাঁ রাজ্য সড়কে জল জমে যায়। দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। চাকদহ শহরের পূর্ব পাড়ে বাসস্ট্যান্ডের কাছ থেকে জাতীয় সড়কে যাওয়ার রাস্তায় কিছুটা অংশ জলমগ্ন হয়ে রয়েছে। চাকদহ-বনগাঁ রাজ্য সড়কের এলাকায় জল জমে থাকায় আশপাশের দোকানে জমা জল ঢুকেছে। এ ছাড়া, শিমুরালি এলাকায় রাস্তায় জল জমেছে। চাকদহ থানা এলাকার নিচু জায়গাতেও বৃষ্টিতেজল জমেছে।

সোমবার দুপুর ১২টা নাগাদ গাছ পড়ে কাষ্টডাঙা-১ পঞ্চায়েতের মহাদেবপুরের রাস্তা আটকে যায়। রেমালের প্রভাবে রবিবার রাত থেকে বৃষ্টি হ‌ওয়ায় গাছের গোড়ার মাটি নরম হয়ে গিয়েছিল। সোমবার দুপুরে হঠাৎ‌ দমকা হাওয়ায় চলমান অটোর সামনেই গাছটি ভেঙে পড়ে। কোন‌ও মতে বেঁচে যান অটোচালক ও যাত্রীরা। বিকেল চারটে নাগাদ গাছ কেটে রাস্তা পরিষ্কার করা হয়।

এর পাশাপাশি হরেকৃষ্ণপুরের গোপালপুর এলাকায় গাছ পড়ে বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে যায়। রানাঘাট ২ ব্লকের শঙ্করপুর মোড়েও গাছ পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটায়। সোমবার রাত পর্যন্ত জেলায় প্রায় ৫১টি বিদ্যুতের খুঁটি পড়ে গিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন ঘটিয়েছে। ১০টি ট্রান্সফরমার পুড়ে গিয়েছে। সব মিলিয়ে জেলার প্রায় ৫৭৮টি এলাকা বিদ্যুৎ-বিচ্ছিন্ন হয়েছে। তবে সকল এলাকায় দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া হচ্ছে।

জেলা শাসক এস অরুণ প্রসাদ বলেন, “জেলায় কোথাও তেমন কোনও ক্ষতি হয়নি। দ্রুত পরিস্থিতি সামাল দেওয়া গিয়েছে।”

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Nadia

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy