Advertisement
৩০ এপ্রিল ২০২৪

সেতু বন্ধ, পাঁচ গুণ ভাড়া বৃদ্ধি ফেরিতে

মেরামতির জন্য ভাগীরথী সেতুতে যান চলাচল বন্ধ। সেই সুযোগে বেআইনি ভাবে অতিরিক্ত মাসুল আদায় করছে ফেরিঘাটের ইজারাদারি সংস্থা। এমনটাই অভিযোগ রঘুনাথগঞ্জের বাসিন্দাদের। জঙ্গিপুর পুরসভার নিয়ন্ত্রণে ভাগীরথী নদীর উপর দু’টি ফেরিঘাট রয়েছে রঘুনাথগঞ্জ ও জঙ্গিপুরের মধ্যে। ইজারাদারের মাধ্যমে এই ফেরিঘাট দু’টি চালায় পুরসভা। যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের জন্য মাসুল নির্ধারণ করে পুরসভাই।

রঘুনাথগঞ্জে বন্ধ সেতু। (বাঁ দিকে)। নৌকায় ভিড় উপচে পড়ছে। (ডান দিকে)। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

রঘুনাথগঞ্জে বন্ধ সেতু। (বাঁ দিকে)। নৌকায় ভিড় উপচে পড়ছে। (ডান দিকে)। ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রঘুনাথগঞ্জ শেষ আপডেট: ০৯ জুলাই ২০১৪ ০০:২৩
Share: Save:

মেরামতির জন্য ভাগীরথী সেতুতে যান চলাচল বন্ধ। সেই সুযোগে বেআইনি ভাবে অতিরিক্ত মাসুল আদায় করছে ফেরিঘাটের ইজারাদারি সংস্থা। এমনটাই অভিযোগ রঘুনাথগঞ্জের বাসিন্দাদের।

জঙ্গিপুর পুরসভার নিয়ন্ত্রণে ভাগীরথী নদীর উপর দু’টি ফেরিঘাট রয়েছে রঘুনাথগঞ্জ ও জঙ্গিপুরের মধ্যে। ইজারাদারের মাধ্যমে এই ফেরিঘাট দু’টি চালায় পুরসভা। যাত্রী ও যানবাহন পারাপারের জন্য মাসুল নির্ধারণ করে পুরসভাই। সেই অনুযায়ী যাত্রী ও পণ্য মাসুলের নির্দিষ্ট হারের বোর্ড টাঙানো রয়েছে দু’টি ফেরিঘাটে। কিন্তু সেতু বন্ধের সুযোগ নিয়ে সোমবার থেকে ইচ্ছে মতো তিন থেকে পাঁচ গুণ বেশি পয়সা আদায়ের অভিযোগ উঠেছে ইজারাদারের বিরুদ্ধে। প্রতিবাদ করে কোনও লাভ হয়নি। এমনকী দু’দিন কেটে গেলেও পুরসভা বা প্রশাসন এই জুলুম রুখতে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ।

সদরঘাট দিয়ে সোমবার বিকেলে মোটর বাইক নিয়ে পার হচ্ছিলেন এনামুল হক নামে এক বিড়ি ব্যবসায়ী। তাঁর অভিযোগ, ফেরিঘাটে দাবি করা হয় ১০ টাকা। অথচ পুরসভার পারাপারের ভাড়ার তালিকায় লেখা রয়েছে মোটর বাইক পারাপারের জন্য দিতে হবে ৩ টাকা। এ কথা জানিয়ে প্রতিবাদ করলেও ইজারাদারের লোকজন ১০ টাকার কম নিতে রাজি হননি। ঘাটে ইজারাদারকে ১০ টাকা ছাড়াও নৌকোয় দিতে হয়েছে ১০ টাকা। একই অভিজ্ঞতা রহমত শেখের। মঙ্গলবার সকালে মোটর বাইকে নদী পেরোতে গিয়ে ফেরিঘাটে এবং নৌকো ১০ টাকা করে ২০ টাকা দিতে হয়েছে তাঁকে। রহমতের অভিযোগ, ‘‘প্রতি দিন ব্যবসায়িক কাজের জন্য দু’বার করে নদী পেরোতে হয় আমাকে। সেতু বন্ধ থাকায় প্রতি দিন ৮০ টাকা করে গুনতে হবে? এ জুলুম চলতে থাকলে বুঝতে হবে পুরকর্তাদের সঙ্গে ইজারাদারের গাঁটছড়া বাঁধা আছে।”

গরীব ভ্যান চালকেরা পড়েছেন আরও সমস্যায়। রিকশা ভ্যান পারাপারে পুরসভার ৫ টাকা ধার্য করেছে। কিন্তু আদায় করা হচ্ছে ২৫ টাকা করে। এক রিকশা চালকের কথায়, “আমার ভাড়ার রিকশা। এত টাকা কোথা থেকে দেব? কিন্তু ২৫ টাকা না দিলে পার করতে রাজি হয়নি ফেরি কর্তৃপক্ষ। এমনকী ঘাটে বসে থাকা সিভিক পুলিশকে জানালে তারাও বলেছে যা চাইছে দিয়ে পার হয়ে যেতে। প্রায় আধ ঘণ্টা অপেক্ষার পর বাধ্য হই ওই টাকা দিয়েই ঘাট পার হতে।”

দু’টি ফেরিঘাটের দুই পাড়েই রয়েছে জনা দশেক সিভিক পুলিশের কর্মী। পারাপারের মাসুল লিখে দু’টি ঘাটে প্রকাশ্যে তালিকা টাঙিয়ে দিয়েছে পুরসভা। তবু পারানির কড়ি আদায়ে জোর জুলুম করে চার-পাঁচ গুণ হারে পয়সা আদায় চলছে সকলের সামনেই। ফেরিঘাটে ইজারাদারের নিজস্ব দুটি করে যন্ত্রচালিত নৌকা থাকার কথা। তা-ও নেই। ফেরিঘাটে পয়সা আদায়ে এই জুলুমবাজির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছেন প্রাক্তন কাউন্সিলার তৃণমূল নেতা গৌতম রুদ্র। তিনি বলেন, “আমি নিজে এ ব্যাপারে ফেরিঘাটের কর্মীদের কাছে প্রতিবাদ জানিয়ে এসেছি। কিন্তু মঙ্গলবারও জুলুমবাজি বন্ধ হয়নি।” উপ-পুরপ্রধান অশোক সাহাও মনে করেন অবিলম্বে এই জুলুম বন্ধ করতে পুরসভার হস্তক্ষেপ করা দরকার। তিনি পুরপ্রধানের সঙ্গে কথা বলবেন বলে জানিয়েছেন।

পুরপ্রধান সিপিএমের মোজাহারুল ইসলাম অবশ্য বলেন, ‘‘সোমবার রাতেই ফেরিঘাটে গিয়ে বলে এসেছি বেশি পয়সা আদায় না করতে। তবু যানবাহনের কাছ থেকে বাড়তি পয়সা নেওয়া হচ্ছে। ওই ইজারাদারকে পুরসভায় ডেকে পাঠানো হয়েছে।” জঙ্গিপুরের মহকুমাশাসক নিখিলেশ মণ্ডল বলেন, ‘‘সেতু বন্ধের সুযোগ নিয়ে ঘাট পারাপারে এভাবে বাড়তি পয়সা আদায় হলে প্রশাসন অবশ্যই ব্যবস্থা নেবে। আমি পুরপ্রধানের সঙ্গে কথা বলছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

raghunathganj ferry fares bridge closed
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE