Advertisement
১৭ মে ২০২৪
Nandigram

শংসাপত্র পাননি নন্দীগ্রামে মৃত, নিখোঁজদের অনেকেই

প্রশাসন সূত্রে দাবি, নিখোঁজদের পরিবারের হাতে প্রয়োজনীয় নথি নেই। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুর শংসাপত্র পেতে আদালতের নির্দিষ্ট অর্ডারের প্রতিলিপি প্রয়োজন।

মৃতদের অনেকের পরিবারের লোক মৃত্যুর শংসাপত্র পাননি।

মৃতদের অনেকের পরিবারের লোক মৃত্যুর শংসাপত্র পাননি। প্রতীকী ছবি।

কেশব মান্না
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৩ ০৫:১৮
Share: Save:

পনেরো বছর আগের কথা। সিপিএমের তথাকথিত ‘অপারেশন সূর্যোদয়ের’ দিনে আরও এক বার রক্তাক্ত হয় নন্দীগ্রাম। মৃত্যু হয় চার জনের। নিখোঁজ ছিলেন ১১ জন। ২০০৭ সালের ১০ নভেম্বরের সেই ঘটনার পরে ১৫ বছর কেটে গিয়েছে, এখনও মৃতদের অনেকের পরিবারের লোক মৃত্যুর শংসাপত্র পাননি। এই শংসাপত্র পাননি নিখোঁজদের অনেকের পরিবারও। পরিবারগুলির তরফে দাবি করা হয়েছে, এর ফলে তাঁরা নানাবিধ সমস্যায় পড়ছেন। বঞ্চিত হচ্ছেন অনেক সুযোগ-সুবিধা থেকেও।

২০১১ সালে তৃণমূলকে ক্ষমতায় আনতে নন্দীগ্রাম অনুঘটকের কাজ করেছিল বলে দাবি অনেকেরই। স্থানীয়রা বলছেন, এখন এখানকার বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারী বিধানসভায় বিরোধী দলনেতাও। তিনি তো বটেই, উল্টো দিকে তৃণমূল শিবিরও গত কয়েক বছর ধরে নন্দীগ্রামের ‘শহিদদের’ স্মরণে সভা করছে। ১০ নভেম্বর দিনটিও দু’দলের তরফেই পৃথক ভাবে পালন করা হচ্ছে ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে। অথচ ওই সময়ে মৃতদের মৃত্যুর শংসাপত্র নিয়ে জট কাটেনি এত বছরেও। এই নিয়ে শুভেন্দু নিজেও সরব। সম্প্রতি তিনি বলেছেন, ‘‘নির্দিষ্ট সময় পেরোনোর পরেও অনেক শহিদ পরিবারকে মৃত্যুর শংসাপত্র দেওয়া হচ্ছে না। প্রয়োজনে ওই পরিবারগুলি হাই কোর্টের দ্বারস্থ হবে। আমরা তাঁদের পাশে থাকব।’’

২০০৭ সালের ১০ নভেম্বর গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান শ্যামলী মান্না ও ভরত মণ্ডল। শ্যামলীর স্বামী প্রকাশ মান্নার দাবি, ‘‘স্ত্রীর দেহের ময়নাতদন্তের পরে একটি মাত্র কাগজ দেওয়া হয়েছিল। বার বার বিভিন্ন দফতরে জানানোর পরেও মৃত্যুর শংসাপত্র হাতে পাইনি।’’ ভরতের স্ত্রী রিঙ্কু মণ্ডল বলেন, ‘‘প্রশাসনের কাছে সব নথি জমা দিয়েছি। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর শংসাপত্র আজও পেলাম না।’’ ওই ১০ নভেম্বরই নিখোঁজ হন সুবল মাজি, সত্যেন গোল, আদিত্য বেরা-সহ ১১ জন। অভিযোগ, খুন করে তাঁদের দেহ গায়েব করে দেওয়া হয়। সুবলের স্ত্রী কৃষ্ণা মাজি বলছেন, ‘‘স্বামীর তিন ভাই। বাড়িতে সম্পত্তি ভাগাভাগি হবে। কিন্তু স্বামীর মৃত্যুর শংসাপত্র না থাকায় উত্তরাধিকারী হিসেবে প্রাপ্যটুকু পাচ্ছি না।’’ কৃষ্ণার বক্তব্য, ‘‘কেউ একটানা ১২ বছর নিখোঁজ থাকলে তাঁর পরিবারকে মৃত্যুর শংসাপত্র দিতে হয়। সেই মতো দু’বার আবেদন জানিয়েছি ব্লক প্রশাসনে। তা-ও শংসাপত্র পাইনি।’’ একই সমস্যা সাউথখালির বাসিন্দা, মৃত বলরাম সিংহ বা নিখোঁজ গোকুলনগরের আদিত্য বেরার পরিবারেরও।

কিন্তু সমস্যাটা ঠিক কোথায়?

প্রশাসন সূত্রে দাবি, নিখোঁজদের পরিবারের হাতে প্রয়োজনীয় নথি নেই। এ ক্ষেত্রে মৃত্যুর শংসাপত্র পেতে আদালতের নির্দিষ্ট অর্ডারের প্রতিলিপি প্রয়োজন। মৃতদের ক্ষেত্রেও নথি খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নন্দীগ্রাম ১-র বিডিও সুমিতা সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘এর জন্য যাবতীয় নথি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। সে সব পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।’’ নন্দীগ্রাম জমি আন্দোলনের নেতা তথা তৃণমূলের তমলুক সাংগঠনিক জেলা চেয়ারম্যান পীযূষ ভুঁইয়ার আবার বক্তব্য, ‘‘প্রশাসনিক জটিলতায় বিষয়টি কিছু দিন আটকেছিল। কেউ কেউ আবার আদালতে গিয়েছেন। তাই মামলার নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত কাউকেই মৃত্যুর শংসাপত্র দেয়নি প্রশাসন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Nandigram Death West Bengal
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE