বোলপুরের আইসি এবং তাঁর পরিবারকে জড়িয়ে কু-কথা ও হুমকি দেওয়ায় অভিযুক্ত অনুব্রত (কেষ্ট) মণ্ডলের ব্যাপারে রাজ্য পুলিশ কী করেছে, তা জানতে চেয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশন। ওই ঘটনায় কমিশন রাজ্য পুলিশের ডিজি রাজীব কুমারকে বৃহস্পতিবার চিঠি পাঠিয়ে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ‘অ্যাকশন টেকন রিপোর্ট’ চেয়েছে। অন্য দিকে, অনুব্রতের আইনজীবী বিপদতারণ ভট্টাচার্যের অভিযোগকে ঘিরে চর্চা শুরু হয়েছে বীরভূম জেলা তৃণমূলের অন্দরে। ওই আইনজীবী দাবি করেছিলেন, তৃণমূলের বীরভূম জেলা কোর কমিটির এক সদস্য লোক পাঠিয়ে তাঁকে অনুব্রত সম্পর্কে ‘কিছু’ বলতে বলেছিলেন, যা তিনি মানেননি। তার প্রেক্ষিতে ওই আইনজীবীকে ফোন করে ঘটনার সত্যতা জানতে চেয়েছেন জেলা পরিষদের সভাধিপতি তথা তৃণমূলের কোর কমিটির সদস্য কাজল শেখ।
উত্তরপাড়ায় শুক্রবার এক জনশুনানিতে এসে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার বলেন, ‘‘অনুব্রত মণ্ডল এক জন কর্তব্যরত আইসি-কে যে ভাষায় কথা বলেছেন, তা অত্যন্ত লজ্জার। এই ঘটনার পরে পুলিশ কেন কাজ করেনি? তাই আমরা ডিজি-কে চিঠি দিয়েছি।’’ অর্চনার দাবি, ‘‘(অনুব্রতের) ফোন বাজেয়াপ্ত করেনি, এখনও গ্রেফতার করেনি কেন? কেন অসুস্থ বলে পাঁচ দিন ঘুরিয়ে দিল? অন্য ক্ষেত্রে এ সব করা হয়? এই সব জানতে চেয়েছি।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘ডিজির কাছে উত্তর না পেলে, আইনে যা আছে, তা আবার লিখব।’’ প্রশাসন সূত্রের খবর, অনুব্রতের বিরুদ্ধে তদন্তে পুলিশ যে সব পদক্ষেপ করেছে, তা-ই জানানো হবে কমিশনকে। কেষ্টর ফোন বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে বলেও পুলিশ সূত্রের খবর।
ডাক্তারি শংসাপত্রের মেয়াদ শেষে, বৃহস্পতিবার পুলিশের কাছে হাজিরা দেন অনুব্রত। কী ভাবে অনুব্রত এবং আইসি-র কথোপকথন বাইরে ছড়াল, তা নিয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে। অনুব্রতের অনুগামীদের অনেকের দাবি, দলের অন্দরে কেষ্টর বিরোধী গোষ্ঠী সে কাজ করেছে। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা বিজেপির শুভেন্দু অধিকারী দাবি করেছেন, কাজল শেখের ‘ভূমিকা’ রয়েছে ওই ‘অডিয়ো ক্লিপ’ বাইরে ছড়ানোর ঘটনায়। কাজলের পাল্টা দাবি, ভিত্তিহীন অভিযোগ করেছেন শুভেন্দু। মামলা করার হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন।
এই আবহে বিপদতারণের অভিযোগ ঘিরে শোরগোল পড়ে জেলা তৃণমূলে। জেলার রাজনীতিতে অনুব্রতের বিরোধী শিবিরের বলে পরিচিত কাজল শুক্রবার বলেন, ‘‘প্রশ্ন উঠছে দেখে বিপদতারণ ভট্টাচার্যকে ফোন করে জানতে চাইলাম, যে কোর কমিটির সদস্যের কথা তিনি বলতে চাইছেন, তিনি কে। যদিও তিনি সেটা জানাননি।’’ কোর কমিটির সদস্যদের মধ্যে শুধু তিনিই কেন ফোন করলেন, সে প্রশ্নে কাজলের দাবি, ‘‘উনি আমারও আইনজীবী। আমার হয়ে বেশ কিছু মামলা লড়ছেন।’’ বিপদতারণের প্রতিক্রিয়া মেলেনি। এ দিন একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। জবাব মেলেনি মোবাইল-বার্তার।
আগামী ১৪ জুন সিউড়িতে জেলা তৃণমূলের কোর কমিটির বৈঠক হওয়ার কথা। কমিটির সদস্যদের একাংশ বলছেন,‘‘অডিয়ো-কাণ্ড নিয়ে আলোচনা হতে পারে তখনই, যদি সদস্যদের কেউ সে কথা তোলেন। সে সম্ভাবনা কম। কারণ, বিষয়টি রাজ্য দেখছে।’’
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)