Advertisement
০২ মে ২০২৪
কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়

সাইটে তথ্য-ঘাটতি, আতান্তরে পড়ুয়ারা

• বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে সবে এমএ পাশ করেছেন অতনু রায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল করার জন্য ফর্মও কিনেছেন।

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ ডিসেম্বর ২০১৫ ০৩:৪৬
Share: Save:

• বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে সবে এমএ পাশ করেছেন অতনু রায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে এমফিল করার জন্য ফর্মও কিনেছেন। কিন্তু কয়েক দিন পরেই বিশ্ববিদ্যালয়-কর্তৃপক্ষ ফোন করে জানালেন, অতনু যে-বিষয়ে পড়তে চেয়ে আবেদন করেছেন, সেই পাঠ্যক্রম সাময়িক ভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। অথচ বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইট দেখাচ্ছে, এমফিলের ফর্ম মিলবে কলেজ স্ট্রিট ক্যাম্পাসে।

• বিশ্ববিদ্যালয়ের ইন্টারনাল পরীক্ষার জন্য ভোরবেলায় বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন বাংলা বিভাগের ছাত্রী সহেলি দাস। ডায়মন্ড হারবার থেকে চার ঘণ্টার রাস্তা পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পৌঁছে তিনি জানতে পারলেন, পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছে আগের দিনই! অথচ ওয়েবসাইটে তার কোনও বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়নি।

কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের বিভ্রাটে এ ভাবেই নিত্য নাজেহাল হতে হচ্ছে ছাত্রছাত্রীদের। ক্ষুব্ধ পড়ুয়ারা জানাচ্ছেন, ওয়েব-পরিকাঠামোর অভাব ও অসম্পূর্ণতার দরুন পরীক্ষা পিছোলে বা ফল প্রকাশিত হলে কোনওটাই তাঁরা ঠিক সময়ে যথাযথ ভাবে জানতে পারেন না। সময়মতো তথ্য ‘আপডেট’ বা হালতামামি না-হওয়ায় বিভ্রান্তি ছড়ায় বলে মনে করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী থেকে শিক্ষক সকলেই। ভুক্তভোগীরা জানান, ওয়েবসাইটে যে-নোটিফিকেশন সেকশন আছে, হালতামামির কাজে তাদের গড়িমসির জন্যই তাঁদের বিপাকে পড়তে হচ্ছে। আর আপডেটিংয়ের কাজটা যে ঠিকঠাক হচ্ছে না, কর্তৃপক্ষের কাছে সেই অভিযোগ জানাতে গেলে তাঁদের হয়রান হতে হয় আরও বেশি।

ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ, ভর্তি পর্ব থেকে পঠনপাঠন পর্যন্ত নানা পর্যায়ে ওয়েবসাইটের সাহায্য নিতে গিয়ে বেকুব বনে যেতে হচ্ছে। বিভিন্ন পাঠ্যক্রমে ভর্তির জন্য ন্যূনতম কত শতাংশ নম্বর পেতে হবে, সেই যোগ্যতা সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে বিভ্রান্ত করছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাইট। যেমন এমফিলে ভর্তির জন্য ওয়েবসাইটের এক জায়গায় বলা হচ্ছে, স্নাতকোত্তর স্তরে ৫০ শতাংশ নম্বর পেতেই হবে। আবার সাইটেরই অন্যত্র জানানো হচ্ছে, ন্যূনতম নম্বর ৫৫। কোনটা ঠিক, সেটা যাচাই করে নিয়ে সাইট সংশোধনের কাজটুকু করার কেউ নেই। অনেক ক্ষেত্রে পাঠ্যক্রম
ও পঠনপাঠনের সম্পূর্ণ তথ্য উল্লেখ করা হয়নি সাইটে। সেই অসম্পূর্ণতায় দিশাহারা হয়ে পড়ছেন পড়ুয়ারা।

যে-সব শিক্ষক অবসর নিয়েছেন, ওয়েবসাইটে বিভাগীয় শিক্ষক হিসেবে এখনও তাঁদের নাম ও যোগাযোগ নম্বর জ্বলজ্বল করছে বলে জানালেন পড়ুয়ারা। তথ্য সংশোধনের তাগিদ অনুভব করেনি ওয়েবসাইট বিভাগ। যেমন ইতিহাসের এক পড়ুয়া বললেন, ‘‘সাইট থেকে ফোন নম্বর নিয়ে দর্শন বিভাগের এক শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলাম। ওই শিক্ষক জানালেন, তিনি অনেক দিন আগেই অবসর নিয়েছেন।’’

ছাত্র-শিক্ষকের অনুপাত ঠিক না-থাকায় পঠনপাঠন মার খাচ্ছে বলে বহু ক্ষেত্রেই অভিযোগ ওঠে। অনুপাতটা কেমন হওয়া উচিত, ওয়েবসাইট থেকে তার দিশা পাওয়া মুশকিল। ওয়েবসাইটের সেল্ফ স্টাডি রিপোর্ট (এসএসআর)-এ শিক্ষক-পড়ুয়ার যে-হিসেব আছে, তার সঙ্গে ওয়েবসাইটে উল্লিখিত বিভাগীয় বিবরণের মিল নেই। যেমন
সেল্ফ স্টাডি রিপোর্ট অনুযায়ী বাংলা বিভাগে ছাত্র-শিক্ষক অনুপাত ৯৩:১। কিন্তু ওয়েবসাইটে বিভাগের যে-বিবরণ দেওয়া আছে, তাতে অনুপাতটা দাঁড়ায় ৪৫:১।

মহানগরের সব বিশ্ববিদ্যালয়েই যে ছবিটা এমন বিভ্রান্তিকর, তা নয়। যেমন প্রেসিডেন্সি বা যাদবপুরের ছবি অনেকটাই আলাদা। ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটে নিয়মিত হালতামামির কাজ হয়। ওই দুই ক্ষেত্রে যাঁরা ওয়েবসাইট দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন, তাঁরা জানাচ্ছেন, সাইট আপডেট করার জন্য আলাদা টিম আছে। সেই টিম নিয়মিত সব বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ রাখে। তাই সময়মতো সাইটের হালতামামি সেরে রাখতে সমস্যা হয় না তাদের।

প্রেসিডেন্সি বা যাদবপুর যা পারছে, প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয় কলকাতা সেই কাজে পিছিয়ে কেন?

ওয়েব পরিষেবায় যে ত্রুটি আছে, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ তা মেনে নিয়েছেন। কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয়, পরিবর্তিত তথ্য কর্তৃপক্ষকে জানানোর দায়িত্ব বিভাগীয় প্রধানদের। তাঁরা দেরি করেন বলেই হালতামামি বিলম্বিত হয়। বিভাগীয় প্রধানেরা অবশ্য তথ্যের জোগানে দেরির অভিযোগ মানতে নারাজ। সহ-উপাচার্য (শিক্ষা) স্বাগত সেন বলেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ ওয়েব পরিষেবার বিষয়ে যথেষ্ট সক্রিয়। তবে এত বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগাযোগের ক্ষেত্রে অনেক সময়েই ত্রুটি থেকে যায়।’’

বড় বিশ্ববিদ্যালয় বলে যোগাযোগ ব্যবস্থায় খামতি, কর্তৃপক্ষের এই যুক্তি মানতে রাজি নন শিক্ষকদের একাংশ। তাঁদের প্রশ্ন, ‘‘প্রেসিডেন্সি বা যাদবপুর আয়তনে কলকাতার থেকে ছোট। কিন্তু বিশ্বে কলকাতার থেকেও বড় বিশ্ববিদ্যালয় আছে। অথচ তাদের ওয়েব-পরিষেবা যথেষ্ট ভাল। তা হলে কলকাতা কেন পারছে না?’’

পারা না-পারার প্রশ্নে কর্তৃপক্ষ বেবাক চুপ। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সোমা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘আমি নতুন এসেছি। এ ব্যাপারে কিছু বলতে পারব না।’’ আর উপাচার্য সুগত মারজিত বলছেন, ‘‘ওয়েবসাইট আপডেটের বিষয়টি আমি দেখি না। তাই কিছু বলতে পারব না।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE