Advertisement
০৫ মে ২০২৪

মনের জট কাটিয়ে উঠতে নয়া উদ্যোগ

শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল সম্প্রতি সাড়ে চারশো স্কুলের প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে ক্যুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

তানিয়া বন্দ্যোপাধ্যায়
শেষ আপডেট: ০৪ অক্টোবর ২০১৭ ০৭:৪৪
Share: Save:

কেউ মনখারাপের কথা জানাতে ভয় পায়। কেউ আবার পরীক্ষায় ভাল ফল করার চাপ নিতে না পেরে বাড়ি থেকে পালানোর ফন্দি আঁটে।

মনের এমনই নানা সমস্যায় আক্রান্ত তরুণ প্রজন্মের একটি বড় অংশ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (হু)-র রিপোর্ট জানাচ্ছে, পৃথিবী জুড়েই কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে বেড়ে চলেছে মানসিক অবসাদের
আধিক্য। এ শহরের মনোরোগ চিকিৎসকেরাও জানিয়েছেন একই কথা। সেই প্রবণতার কথা মাথায় রেখেই কলকাতার কিশোর ও কিশোরীদের সুস্থ রাখতে এ বার শিক্ষক-শিক্ষিকা, অভিভাবক এবং চিকিৎসকেরা একসঙ্গে বিভিন্ন কর্মশালার আয়োজন করছেন।

মনোবিদদের একাংশ জানিয়েছেন, স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে পড়াশোনা সংক্রান্ত চাপ বা়ড়ছে। ভার্চুয়াল জগতে সময় কাটানোটাই এখন তাদের প্রধান বিনোদন। যার জেরে বাস্তব কোনও সমস্যার মুখোমুখি হলেই তারা মানসিক ভাবে ভেঙে পড়ছে।

শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল সম্প্রতি সাড়ে চারশো স্কুলের প্রায় দেড় হাজার ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে ক্যুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করেছিল। মূলত একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণির পড়ুয়ারাই তাতে অংশ নিয়েছিল।

প্রতিযোগিতার আয়োজকেরা জানান, স্কুলপড়ুয়াদের মধ্যে মনোরোগ সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতেই এমন আয়োজন। তাঁদের বক্তব্য, এ দেশে মনোরোগ নিয়ে নানা ছুৎমার্গ রয়েছে। মানসিক সমস্যার কথা অনেক সময়ে কাছের মানুষকেও জানাতে ভয় পায় কিশোর-কিশোরীরা। কিন্তু নতুন প্রজন্মের এ বিষয়ে সচেতন হওয়াটা জরুরি। তাদের বোঝা দরকার, আর পাঁচটা শারীরিক অসুখের মতোই মানসিক রোগ সারিয়ে তোলা যায়। মনোরোগ বিশেষজ্ঞ সঞ্জয় গর্গ বলেন, ‘‘এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে আজকের প্রজন্ম একে অপরের সঙ্গে কথা বলার পাশাপাশি পরস্পরের সঙ্গে আনন্দ ও দুঃখ ভাগ করে নিতে শিখল।’’

বিশেষজ্ঞেরা জানান, বাস্তব সমস্যা এবং মানবিক সম্পর্ক সম্বন্ধে পড়ুয়াদের বোধ তৈরির পাশাপাশি অভিভাবকদেরও সচেতন করা
জরুরি। তাই তাঁদের জন্যও চলছে কর্মশালা। কখনও সেখানে পরীক্ষা-ভীতি নিয়ে আলোচনা চলছে। কখনও আবার ব্লু-হোয়েল আতঙ্ক নিয়ে চলছে মত বিনিময়।

মনোবিদেরা জানান, অনেক সময়ে ধারাবাহিক ভাবে পরীক্ষার ফল খারাপ হলে ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে চায় না। তখন অভিভাবকেরা রেগে গিয়ে বকাবকি করেন। যার জেরে পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়। তাই সন্তানদের সমস্যা বোঝাটা আরও জরুরি। ‘পেরেন্টিং কনস্যালট্যান্ট’ পায়েল ঘোষের কথায়, ‘‘সন্তানের বড় হয়ে ওঠার সময়ে সমস্যার ধরন বদলে যায়। অনেক সময়ে বাবা-মায়েরা বুঝতে পারেন না কী ভাবে সামলাবেন। আমরা সেটাই শেখানোর চেষ্টা করছি।’’

দক্ষিণ কলকাতার একটি স্কুলের তরফে সুপ্রিয় ধর বলেন, ‘‘এটা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। অভিভাবকদের সঙ্গে নিয়ে পড়ুয়াদের বোঝার চেষ্টা চলছে। আশা রাখি, এতে সমস্যা অনেকটাই মিটবে।’’ বাইপাস সংলগ্ন আর এক স্কুলের অধ্যক্ষ সীমা সাপ্রুর কথায়, ‘‘স্কুলে স্মার্টফোনের ব্যবহার বন্ধই যথেষ্ট নয়। বাড়িতে ওরা অনেকটা সময় কাটায়। তাই শিক্ষকদের পাশাপাশি অভিভাবকদের সজাগ থাকাটাও জরুরি। দু’পক্ষ একসঙ্গে বসে খোলামেলা আলোচনা করে জট কাটানোর চেষ্টা চালাচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Depression Medical Mental Health অবসাদ
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE