শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ না-থাকা কোনও প্রার্থীকে আর প্রাথমিক বা মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ করতে পারবে না রাজ্য সরকার। ন্যাশনাল কাউন্সিল ফর টিচার্স এডুকেশন (এনসিটিই) এত দিন প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগে যে ছাড় দিয়েছিল, তার মেয়াদ আর বাড়ানো যাবে না বলে শুক্রবার কলকাতায় জানিয়ে দিয়েছেন কেন্দ্রীয় মানবসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী স্মৃতি ইরানি।
অর্থাৎ এখন থেকে সরকারি ও সরকারি সহায়তাপ্রাপ্ত স্কুলের শিক্ষক হওয়ার জন্য প্রাথমিকের ক্ষেত্রে ডিপ্লোমা ইন এলিমেন্টারি এডুকেশন (ডিএলএড) এবং মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের ক্ষেত্রে বিএড ডিগ্রি থাকতেই হবে। প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীরা শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষাতে বসতে পারবেন না। এই সিদ্ধান্তের কারণ ব্যাখ্যা করে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, “এ রাজ্যে যথেষ্ট প্রশিক্ষিত প্রার্থী আছেন। ফলে প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগে ফের নিয়ম শিথিল করার প্রয়োজন নেই।” এনসিটিই ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এ দিন দুপুরে রাজ্য বিজেপি-র সদর দফতরে স্কুল সার্ভিস কমিশনের তালিকায় নাম থাকা বিএড এবং ডিএলএড প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থীদের কয়েকটি সংগঠন স্মৃতির সঙ্গে দেখা করেন। তাঁরা অভিযোগ করেন, রাজ্য সরকারের শিক্ষক নিয়োগে পদ্ধতিতে অস্বচ্ছতা রয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, দলীয় কর্মী-সমর্থকদের চাকরি পাইয়ে দিতে গিয়ে বঞ্চিত করা হয়েছে প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের। প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগের জন্য রাজ্যকে যে বিশেষ অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তার মেয়াদ আর না বাড়ানোর দাবি করেন তাঁরাই।
প্রশিক্ষিত প্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলার পরে স্মৃতি কেন্দ্রীয় স্কুলশিক্ষা সচিব রাজর্ষি ভট্টাচার্যকে ফোন করে জানতে চান, প্রশিক্ষণহীনদের নিয়োগের ক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের জন্য যে নিয়ম শিথিল হয়েছিল, তা এখনও বহাল কি না। সচিব জানান, ওই বিশেষ সুযোগের মেয়াদ শেষ হয়ে গিয়েছে। স্মৃতি বলেন, সারা দেশে যে নিয়ম কার্যকর রয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের জন্যও যেন তা-ই করা হয়। এনসিটিই আইনে যা বলা আছে, তার বাইরে যেন কিছু না করা হয়। এটাই সরকারের নীতি বলেও সচিবকে জানান স্মৃতি।
কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে খুশি নন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়। তবে এখনই এ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে বিরোধিতায় যেতে চান না তিনি। তাঁর কথায়, “কেন্দ্র সরকারি ভাবে কিছু জানায়নি। তার আগে কিছু বলব না।”
তবে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে রাজ্যের শিক্ষক নিয়োগ প্রক্রিয়া বেশ ধাক্কা খাবে বলে মনে করা হচ্ছে। স্কুলশিক্ষা দফতরের খবর, প্রাথমিক স্তরে শূন্য পদের সংখ্যা ২০ হাজারের মতো। এই পদের শিক্ষক বাছাইয়ের পরীক্ষা টেট-এ বসার জন্য আবেদন করেন প্রায় ১৮ লক্ষ প্রার্থী। দফতর সূত্রের খবর, প্রাথমিকে শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ (ডিএলএড) রয়েছে, এমন প্রার্থী প্রায় ২২ হাজার। ফলে শুধু প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের দিয়েই অন্তত প্রাথমিক স্তরে শূন্যপদে নিয়োগ সম্ভব।
আবার পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে শূন্য শিক্ষক পদের সংখ্যা সাড়ে পাঁচ হাজারের কিছু বেশি। এই স্তরের শিক্ষক বাছাইয়ের জন্য টেট নেওয়ার দায়িত্ব এসএসসি-র। কমিশন সূত্রের খবর, এই পরীক্ষার জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন ৫ লক্ষ ৩০ হাজার পরীক্ষার্থী। শিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, এই স্তরের শিক্ষকতার প্রশিক্ষণ অথবা বিএড ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা ২০ থেকে ২৫ হাজার মতো। কিন্তু এই প্রার্থীদের অধিকাংশেরই বিষয় বাংলা বা ইতিহাস। বিজ্ঞানের বিষয়গুলিতে বিএড ডিগ্রিধারী প্রার্থীর সংখ্যা অত্যন্ত কম। তাই সেখানে ডিগ্রিহীন প্রার্থীদের নিয়োগ না করে উপায় নেই বলেই জানাচ্ছেন স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি)-এর কর্তারা।
স্কুলশিক্ষা দফতরের এক কর্তাও শুক্রবার বলেন, “এসএসসি-তে শিক্ষক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অঞ্চল, বিষয়, শ্রেণি, লিঙ্গ, পার্শ্বশিক্ষকদের জন্য সংরক্ষিত আসনের সংখ্যা ইত্যাদি মাথায় রাখতে হয়। ফলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত প্রার্থী এবং শূন্যপদের সংখ্যা সামগ্রিক ভাবে দেখে লাভ নেই।”
প্রাথমিকের টেট গত ৩০ মার্চ এবং এসএসসি টেট ২৯ মার্চ হওয়ার কথা ছিল। আদালতের রায়ে দু’টি পরীক্ষাই আপাতত স্থগিত। ইতিমধ্যে প্রশিক্ষণহীন প্রার্থীদের নিয়োগের জন্য এনসিটিই-র দেওয়া ছাড়ের সময়সীমা (৩১ মার্চ, ২০১৪) পেরিয়ে গিয়েছে। যার জেরে এই প্রার্থীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। রাজ্য সরকার ইতিমধ্যেই এনসিটিই-র কাছে চিঠি লিখে সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন জানিয়েছে। কিন্তু সেই চিঠির উত্তর মেলেনি বলে বিকাশ ভবনের খবর। এর মধ্যেই স্মৃতি এই ব্যাপারে কেন্দ্রীয় সরকারের নীতি স্পষ্ট করে দেওয়ায় পরিস্থিতি আরও জটিল হবে বলেই মনে করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy