Advertisement
০৪ মে ২০২৪

নয় পড়ুয়ার জন্য তিন শিক্ষক

ঘরের বাইরে থেকে একটা বড় তালা ঝুলছে। কারণ এই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে কোনও পড়ুয়াই নেই।স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া সংখ্যা ৯ জন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৩, সপ্তম শ্রেণিতে ২ আর অষ্টম শ্রেণিতে ৪। স্কুলের শিক্ষিকাও হাতে গোনা, তিন জন। দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে প্রধান শিক্ষিকার পদও ফাঁকা পড়ে রয়েছে।

দুই ছাত্রী নিয়ে চলছে ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস। সোহম গুহর তোলা ছবি।

দুই ছাত্রী নিয়ে চলছে ষষ্ঠ শ্রেণির ক্লাস। সোহম গুহর তোলা ছবি।

সুব্রত গুহ
খেজুরি শেষ আপডেট: ১১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:০০
Share: Save:

ঘরের বাইরে থেকে একটা বড় তালা ঝুলছে। কারণ এই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণিতে কোনও পড়ুয়াই নেই।

স্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ুয়া সংখ্যা ৯ জন। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ৩, সপ্তম শ্রেণিতে ২ আর অষ্টম শ্রেণিতে ৪। স্কুলের শিক্ষিকাও হাতে গোনা, তিন জন। দীর্ঘদিন ধরে স্কুলে প্রধান শিক্ষিকার পদও ফাঁকা পড়ে রয়েছে। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকাই একমাত্র স্থায়ী শিক্ষিকা। ছাত্রী আর শিক্ষিকার অভাবে শিকেয় উঠেছে খেজুরির মোহাটি বিমল স্মৃতি বালিকা বিদ্যাপীঠের পঠনপাঠন। স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মালবিকা গিরির কথায়, ‘‘স্কুলের এমন হালের কথা বারবার জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসে জানানো হয়েছে। কিন্তু কোনও কাজ হয়নি।’’

খেজুরি-১ ব্লকের হেঁড়িয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের মোহাটি গ্রামের খালের ধারে খাড়া দাঁড়িয়ে রয়েছে বিমল স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়। স্কুলে গিয়ে দেখা গেল ছাত্রী আর শিক্ষিকার অভাবে পাঁচিল দেওয়া বিশাল এলাকা জুড়ে শ্মশানের নিস্তব্ধতা। ৪২ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত হওয়া এই স্কুল ১৯৭৪ সালে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের পক্ষ থেকে জুনিয়ার হাইস্কুল হিসেবে অনুমোদন পায়। মোহাটি বিমল স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয় থেকে দেড় কিলোমিটার দূরে শ্যমচকে একটি মাধ্যমিক স্কুল রয়েছে। চার কিলোমিটার দূরে রয়েছে আরও চারটি মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক স্কুল। সেই স্কুলে প়ড়ুয়াদের যথেষ্ট ভিড়। অথচ এই স্কুলের সমস্যা শুরু ২০১২ সাল থেকে। সেই বছর পড়ুয়া সংখ্যা ছিল ৪৪জন। ২০১৫ সালে স্কুলে ছাত্রী ২৫ জন, ২০১৪ সালে ২২ জন, ২০১৩ তে ৩৮ জন। আর চলতি বছরে তো পঞ্চম শ্রেণিতে কোনও পড়ুয়াই নেই।

তাহলে কি সমস্যা এই স্কুলে? গ্রা়মে স্কুল থাকতেও মেয়েরা গ্রামের বাইরে দুরের স্কুলে পড়তে যাচ্ছে কেন?

স্কুলেরই অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী পিয়ালী পানিগ্রাহীর কথায়, ‘‘আসলে এই স্কুলে তো অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত রয়েছে। নবম শ্রেণিতে নতুন করে স্কুলে ভর্তি হতে সমস্যা হতে পারে। আমার অনেক বন্ধু তো তাই বাইরের স্কুলে ভর্তি হয়ে গিয়েছে।’’ এলাকার বাসিন্দা বনবিহারী জানার বক্তব্য, “মোহাটি বিমল স্মৃতি বালিকা বিদ্যালয়ে মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ার সুযোগ নেই। নবম শ্রেণিতে কোথায় ভর্তি করব বলুন তো? তাই পঞ্চম শ্রেণিতেই অন্য স্কুলে ভর্তি করেছি।’’

সমস্যা স্বীকার করেছেন কাঁথির অতিরিক্ত জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক (মাধ্যমিক) ঝর্ণা গাঁতাইত। ঝর্ণাদেবী জানান, সমস্যা মেটাতে জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিসের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দল স্কুল ঘুরে গিয়েছেন।’’ জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শকের অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ছাত্রীসংখ্যার অনুপাতে (৪০:১) অতিরিক্ত শিক্ষিকা নিয়োগ করা হয়। মোহাটি স্কুলে ৯ জন ছাত্রী থাকায় শিক্ষিকা নিয়োগ করা যাচ্ছে না। জেলা বিদ্যালয় পরিদর্শক সুজিতকুমার মাইতির সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, “বিকল্প ব্যবস্থা নেওয়ার কাজ শুরু হয়েছে।”

সব শুনেও আশঙ্কার মেঘ স্কুলের ভারপ্রাপ্ত শিক্ষিকা মালবিকা গিরির মনে। বলেন, ‘‘তাড়াতাড়ি কোনও ব্যবস্থা না নেওয়া হলে সমস্যা বাড়বে। ষষ্ঠ শ্রেণির তিন পড়ুয়া সপ্তম শ্রেণিতে উঠলেই পঞ্চম শ্রেণির ঘরের মতো ওই ঘরেও তালা পড়বে!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

school teacher student
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE