Advertisement
E-Paper

শিশু সুরক্ষায় কমিশন আছে কি, জবাব নেই

বছর চারেকের মেয়ে আর দু’বছরের ছেলেকে দিদিমার কাছে রেখে উত্তরপ্রদেশে কাজের খোঁজে গিয়েছিলেন দমদমের পূজা ঠাকুর। বাচ্চা দু’টি বাড়িতে নিগ্রহের ‘শিকার’ হতে থাকায় পুলিশি হস্তক্ষেপে জেলার শিশু কল্যাণ সমিতি (সিডব্লিউসি)-র জিম্মায় পাঠানো হয় তাদের। তার পরেই বিপত্তি। সমিতির নির্দেশে বারাসতের একটি বেসরকারি হোমে পাঠানো হয়েছিল দু’টি শিশুকেই। বছরখানেক আগে সেখান থেকে লোপাট হয়ে যায় তারা। অভিযোগ, শিশু দু’টিকে ‘দত্তক’ হিসেবে কোনও নিঃসন্তান দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

দীক্ষা ভুঁইয়া

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০২:৪৭

বছর চারেকের মেয়ে আর দু’বছরের ছেলেকে দিদিমার কাছে রেখে উত্তরপ্রদেশে কাজের খোঁজে গিয়েছিলেন দমদমের পূজা ঠাকুর। বাচ্চা দু’টি বাড়িতে নিগ্রহের ‘শিকার’ হতে থাকায় পুলিশি হস্তক্ষেপে জেলার শিশু কল্যাণ সমিতি (সিডব্লিউসি)-র জিম্মায় পাঠানো হয় তাদের। তার পরেই বিপত্তি।

সমিতির নির্দেশে বারাসতের একটি বেসরকারি হোমে পাঠানো হয়েছিল দু’টি শিশুকেই। বছরখানেক আগে সেখান থেকে লোপাট হয়ে যায় তারা। অভিযোগ, শিশু দু’টিকে ‘দত্তক’ হিসেবে কোনও নিঃসন্তান দম্পতির হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে।

ওই হোম থেকেই কয়েক মাসের শিশুকে ফেরত পেতে জেরবার হচ্ছেন হাবরার শীলা বিশ্বাস। স্বামী দক্ষিণ ভারতে কাজে ব্যস্ত ছিলেন। সেই সময়েই অসুস্থ হয়ে পড়ায় বাচ্চাকে পড়শির কাছে রাখেন শীলাদেবী। সেই পড়শি শিশুটিকে আর ফেরত দিতে না-চাওয়ায় শিশু কল্যাণ সমিতির নির্দেশে হোমে ঠাঁই হয় তার। সমিতির নির্দেশ অনুযায়ী বাচ্চার জন্মের নথিপত্র পেশ করা সত্ত্বেও তাঁর সন্তানকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে না বলে শীলাদেবী অভিযোগ করেছেন।

বারাসতের ওই বেসরকারি হোমের বাচ্চাদের নিয়ে বারে বারেই এমন অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। সব অভিযোগই শিশু সুরক্ষা কমিশনকে লিখিত ভাবে জানানো হয়েছে বলে দাবি জেলা স্তরের শিশু সুরক্ষা আধিকারিকদের। সরাসরি জেলাশাসকের অধীনে কর্মরত ওই আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ওই হোমের বিরুদ্ধে ওঠা কোনও অভিযোগের ক্ষেত্রেই কমিশন কিছু করে উঠতে পারেনি।

কমিশন তা হলে করছেটা কী?

সিডব্লিউসি-র সদস্যদের সঙ্গে যোগসাজশে ওই হোমের এক শ্রেণির আধিকারিক শিশুদের দত্তক দেওয়ার ঘটনায় যুক্ত বলেও অভিযোগ। সেই বিষয়ে কাগজপত্রও জমা দেওয়া হয় কমিশনের দফতরে। কিন্তু হোমের শিশুদের উদ্ধার করা বা অভিযুক্ত হোম-কর্তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার ব্যাপারে কমিশনের তরফ থেকে কোনও সুপারিশই জেলা আধিকারিক বা সরকারের কাছে পৌঁছয়নি। বিষয়টি নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজার কানে ওঠায় তাঁর নির্দেশে ওই হোমের লাইসেন্স বাতিল হয়ে যায়। কিন্তু পূজাদেবী, শীলাদেবীর মতো যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা এখনও সন্তান ফেরত পাননি। অভিযোগের কোনও তদন্ত হয়নি। কোনও শাস্তি হয়নি অভিযুক্ত হোম-কর্তাদেরও।

শিশু সুরক্ষা কমিশনের চেয়ারপার্সন অশোকেন্দু সেনগুপ্ত জানাচ্ছেন, গত কয়েক মাসে বিভিন্ন জেলা থেকে একাধিক অভিযোগ জমা পড়লেও বারাসতের ওই হোম সম্পর্কে কোনও লিখিত অভিযোগ তাঁর কাছে আসেনি। ওই হোমের কথা জেনে খোদ মন্ত্রী ব্যবস্থা নেওয়ায় আর কোনও তদন্তের প্রয়োজন আছে বলেও মনে করেননি তিনি। তবে বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে তিনি তিনটি কমিটি তৈরি করেছেন।

কমিশন সূত্রের খবর, তিনটির মধ্যে একটি কমিটি হোমের শিশুদের দত্তক দেওয়ার বিধি খতিয়ে দেখে সরকারের কাছে প্রয়োজন অনুযায়ী সুপারিশ করবে। বাকি দু’টি কমিটি শিশু সুরক্ষা ও অধিকার এবং সেই সম্পর্কে সচেতনতার বিষয়টি স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানোর জন্য পাঠ্যক্রম তৈরি করবে।

হঠাৎ তিন-তিনটি কমিটি কেন, প্রশ্ন উঠছে বিভিন্ন মহলে। যেখানে কমিশনেরই সক্রিয়তার প্রমাণ অণুবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে খুঁজতে হচ্ছে, সেখানে কমিটি কী করবে, সংশয় দেখা দিয়েছে জেলা স্তরের শিশু আধিকারিকদের মধ্যেও। তাঁদের অভিযোগ, এক বছর ধরে কমিশনে বিভিন্ন বিষয়ে অভিযোগ জানানো সত্ত্বেও কোনওটারই সুরাহা হয়নি। তাই কমিশনের সব গাল-ভরা পরিকল্পনা, কমিটি গঠন ইত্যাদিতে কাজের কাজ কতটা হবে, তা নিয়েই তাঁদের মনে সংশয় দেখা দিয়েছে।

রাজ্য মানবাধিকার কমিশন বা মহিলা কমিশনের স্বাধীন অস্তিত্ব নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। কমিশনের সদস্যেরা রাজ্য সরকারের মনোনীত। সরকার অস্বস্তিতে পড়ে, এমন অনেক ঘটনায় তাঁদের বিরুদ্ধে সক্রিয়তায় খামতির অভিযোগও উঠেছে। একই প্রশ্ন উঠছে শিশু সুরক্ষা কমিশনকে নিয়েও। রাজ্য প্রশাসনের কোনও কোনও মহলেরই প্রশ্ন, কমিশন আদৌ আছে তো?

প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রায় সব জেলাতেই শিশু কল্যাণ সমিতিগুলি মেয়াদ-উত্তীর্ণ অবস্থায় বহাল থেকেছে। তাদের বিরুদ্ধে শিশু সুরক্ষা সংক্রান্ত বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠলেও কমিশন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কমিশন-প্রধানের দাবি, ‘‘আমাদের কাজ সুপারিশ করা। যা করার সরকারকেই করতে হবে।’’ যদি তা-ই হয়, সেটাও কি ঠিকঠাক করছে কমিশন? কমিশনের তরফে সরকারের কাছে খুব বেশি সুপারিশের নমুনা কিন্তু মিলছে না।

‘‘কমিশন জেলায় জেলায় ঘুরে কিছু অনিয়ম নিয়ে পরামর্শ দিয়েছে। তবে লিখিত সুপারিশের কথা মনে পড়ছে না,’’ বলছেন মন্ত্রী শশীদেবীই।

Child private home barasat police
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy