• লাইনে কাজ করছিল গ্যাংম্যানের দল। বুধবার সকালে নৈহাটি ও কাঁকিনাড়ার মাঝখানে। আচমকাই ছুটে এল শিয়ালদহমুখী আসানসোল ইন্টারসিটি এক্সপ্রেস। তারই চাকায় কাটা পড়লেন দু’জন। ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হল তাঁদের। চোখের সামনে সহকর্মীদের এ ভাবে বেঘোরে মরতে দেখে রেলকর্মীরা প্রশ্ন তুলেছেন, লাইনে কাজের সময় স্টেশনমাস্টার ও কেবিন, এমনকী কন্ট্রোলেও তো খবর দেওয়া থাকে। তার পরেও চালক কেন বুঝতে পারলেন না যে, ওই জায়গায় ট্রেন আস্তে চালাতে হবে?
• মঙ্গলবার বিকেলে টিটাগড় স্টেশনের কাছে এক নম্বর লাইনের একটি সিগন্যাল পোস্টের গায়ে লাগানো সিঁড়ির এক দিকের লোহার দণ্ডটি ভেঙে লাইনের দিকে চলে আসে। তখনই ওই লাইন দিয়ে যাচ্ছিল আপ রানাঘাট লোকাল। ভিড়ে ঠাসা ট্রেনের দরজায় দাঁড়ানো জনা দশেক যাত্রী জখম হলেন ওই দণ্ডে ধাক্কা খেয়ে। নিয়ম অনুযায়ী প্রতিদিনই চার-পাঁচ ঘণ্টা অন্তর লাইন পরীক্ষা করার কথা রেলকর্মীদের। প্রশ্ন উঠছে, ওখানে সেই পরীক্ষা হয়েছিল কি? হয়ে থাকলে দণ্ডে অত লোক জখম হলেন কী ভাবে?
• মঙ্গলবার রাত ১১টা। ঘটনাস্থল ডিভিশনের সদর স্টেশন শিয়ালদহ। ঘরুমখো যাত্রীরা ১১টা ১০ মিনিটের নৈহাটি লোকালের অপেক্ষায়। ইলেকট্রনিক বোর্ডেও তত ক্ষণে লিখে দেওয়া হয়েছে, ‘দু’নম্বর প্ল্যাটফর্ম থেকে ছাড়বে নৈহাটি লোকাল’। কিন্তু ১১টা ২০ মিনিটেও চালক বা গার্ডের দেখা নেই। আর কোনও ঘোষণাও নেই। ফলে উত্তেজনা বাড়তে থাকে। তিতিবিরক্ত যাত্রীরাই এক সময় উঠে পড়েন গার্ডের কেবিনে। এক জনকে বলতে শোনা গেল, ‘‘যাত্রীরাই ট্রেন চালাবে।’’ উত্তেজিত হয়ে কেউ কেউ যন্ত্রপাতিও নাড়াচাড়া শুরু করে দেন। হন্তদন্ত হয়ে ছুটে আসে আরপিএফ। প্রায় হাতজোড় করে গার্ডের কেবিন থেকে নামানো হয় যাত্রীদের। কিন্তু সাড়ে ১১টার পরেও ওই ট্রেনটি ছাড়তে পারেননি রেল-কর্তৃপক্ষ। শেষ পর্যন্ত রাতের শেষ ট্রেনে উঠতে বাধ্য হন বেশির ভাগ যাত্রী।
দৃষ্টান্ত অসংখ্য। রেল প্রশাসনের ঢিলেমিতে কয়েক মাস ধরে যে-ভাবে একের পর এক বিপত্তি ঘটে চলেছে, তাতে শিয়ালদহ ডিভিশনে রেলের দফতরগুলির মধ্যে আদৌ কোনও সমন্বয় আছে কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। রেলকর্তাদের একাংশের কথায়, সময়ে ট্রেন ছাড়া তো দূরের কথা। ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা পরিচালনার জন্য ন্যূনতম নিয়মকানুনও মানছেন না শিয়ালদহ ডিভিশনের বহু কর্তা-কর্মী। যান্ত্রিক ত্রুটিতে নিত্যদিনই যেখানে-সেখানে দাঁড়িয়ে পড়ছে ট্রেন। ঘটছে দুর্ঘটনাও। যেমন রবিবার ভোরে ট্রেন বেমালুম উঠে পড়ল শিয়ালদহের একটি প্ল্যাটফর্মে। কেন? না, চালক নাকি ঘুমিয়ে পড়েছিলেন! এমনকী চালক-গার্ডের সমস্যায় দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকছে যাত্রী-ঠাসা ট্রেন। এই ধরনের সব বিপত্তিকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলে দায় এড়াচ্ছেন রেলকর্তারা। যেমন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক রবি মহাপাত্র সরাসরি বলে দিলেন, ‘‘এগুলি নিছকই দুর্ঘটনা। এতে সমন্বয়ের অভাব দেখি না।’’
ঢোল পিটিয়ে কাজের ফিরিস্তি দিতেও কসুর করছে না রেল। দিন পনেরো আগেই কলকাতায় এসেছিলেন রেল বোর্ডের কর্তারা। পূর্ব, দক্ষিণ-পূর্ব ও মেট্রো— তিনটি জোনের কর্তাদের নিয়েই বৈঠক করেন তাঁরা। সেখানে বারে বারেই যে-কোনও মূল্যে সুষ্ঠু পরিষেবা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। তার আগে মে মাসে হয়ে গিয়েছে রেলের উপভোক্তা পক্ষ। সেখানেও যাত্রীদের তরফে পরিষেবা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। হাল বদলাবে বলে রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভুও বারবার আশ্বাস দিচ্ছেন।
কিন্তু রেলগাড়ি চলিয়াছে সেই নড়িতে নড়িতেই! সমস্যা নিয়ে তার বিশেষ হেলদোল নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy