Advertisement
E-Paper

প্রকাশ্যে সব্জিতে মিশছে রং, উদাসীন প্রশাসন

বড় একটি সিমেন্টের গামলায় এনে ফেলা হচ্ছে মাঠ থেকে তোলা টাটকা সব্জি। গামলায় জলের বদলে রয়েছে তুঁতের মিশ্রণ। সেই জল থেকে তোলা পটল, কাঁকরোল, উচ্ছে বস্তায় পুরে পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন বাজারে ও ভিন রাজ্যে।

সীমান্ত মৈত্র

শেষ আপডেট: ১৩ জুন ২০১৬ ০৬:৫০
মেশানো হচ্ছে রং। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

মেশানো হচ্ছে রং। ছবি: নির্মাল্য প্রামাণিক।

বড় একটি সিমেন্টের গামলায় এনে ফেলা হচ্ছে মাঠ থেকে তোলা টাটকা সব্জি। গামলায় জলের বদলে রয়েছে তুঁতের মিশ্রণ। সেই জল থেকে তোলা পটল, কাঁকরোল, উচ্ছে বস্তায় পুরে পাঠানো হচ্ছে বিভিন্ন বাজারে ও ভিন রাজ্যে।

উত্তর ২৪ পরগনার বনগাঁ, বাগদা, গাইঘাটা, গোপালনগর, হাবরা, অশোকনগর, গুমা, বিড়া, দত্তপুকুর, মছলন্দপুর, স্বরূপনগর, বাদুড়িয়ার হাটে বাজারে হামেশাই দেখা যাচ্ছে এই চিত্র। স্থানীয় হাটগুলিতে রাস্তার উপরেই চলছে রং মেশানোর কাজ। কিন্তু সব জেনেও চুপচাপ প্রশাসন বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

খাবারে তুঁতে (কপার সালফেট) মেশানোটা বেআইনি। কিন্তু অনায়াসে সবার সামনেই এই কাজ চলছে। বিশেষ করে পটলের মধ্যে এই রং বেশি মেশানো হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।

ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের বনগাঁ শাখার সম্পাদক তথা চিকিৎসক আশিসকান্তি হীরা বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে তুঁতে মেশানো পটল বা সব্জি খেলে মানুষের লিভারের অসুখ হতে পারে।’’

তুঁতে মেশানোর কারণ কী?

কৃষি বিশেষজ্ঞ ও ব্যবসায়ীরা জানান, মূলত দু’টি কারণে সব্জিতে তুঁতে মেশানো হয়। এক, পটল, উচ্ছে, কাঁকরোলের মতো সব্জি যাতে দ্রুত পচে না যায় তার জন্য তুঁতে মেশানো হয়ে থাকে। দুই, দীর্ঘদিন রঙটা সবুজ থাকে। তা ছাড়া এতে সব্জিগুলি দেখতেও টাটকা লাগে। তবে স্থানীয় বাজারে তুঁতে মেশানো পটল বা অন্য সব্জি বিক্রি হয় কম। তা বেশির ভাগই বাইরে চলে যায়। ব্যবসায়ীদের দাবি, পটল বা অন্য সব্জিতে তুঁতে সামান্য মেশানো হয়। যাতে মানুষের কোনও অসুবিধা না হয়। তবে ভিন রাজ্যে যে সব্জি যায় তাতে বেশি রং মেশানো হয়। কারণ সেই সব্জি গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগে। তাতে পটল বা অন্য সব্জির রঙ ফিকে হয়ে যেতে পারে। তা ছাড়া সব্জি পচে যাওয়ারও সম্ভবনা থাকে। সে কারণেই রঙ মেশানো হয়।

তবে চাষি, ব্যবসায়ীরা কেউই সব্জিতে রং মেশান না বলে তাঁদের দাবি। তাঁরা ওই সব্জি হাটে বাজারে এনে বিক্রি করেন মাত্র। তা হলে রং মেশান কারা? চাষিরা জানান, ফোড়ে মারফত ওই সব্জিগুলি পাইকারি ব্যবসায়ীরা কিনে নেন। ওই সমস্ত ব্যবসায়ীরাই সব্জিতে তুঁতে মেশান বলে অভিযোগ। কিন্তু এতে ভোগান্তি হচ্ছে মানুষের। জেলা উদ্যান পালন আধিকারিক দীপককুমার সারেঙ্গি বলেন, ‘‘যাঁরা সব্জি কিনছেন তাঁদের পক্ষে রং করা সব্জি বোঝা সম্ভব নয়। সে কারণে ব্যবসায়ীদেরই সচেতন হতে হবে।’’

এক্ষেত্রে রং মেশানো সব্জি কিনে আনার পর কী করা উচিত?

বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বাজার থেকে সব্জি কিনে এনে গরম জলে ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপরে ভেজা কাপড় বা ভেজা কাগজ দিয়ে সব্জির গায়ে থাকা রঙ তুলে ফেলতে হবে।

তবে ক্রেতাদের কাছে এই বিষয়টি অজানা নয়। কিন্তু তাঁরা নিরুপায়। বাধ্য হয়েই এই রং মেশানো সব্জিই তাঁদের বাজার থেকে কিনে খেতে হচ্ছে। তাঁদের প্রশ্ন, সব জেনেশুনেও প্রশাসন চুপ কেন? কেনই বা সরকার সব্জিতে রং মেশানো বন্ধ করছে না?

প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর দু’য়েক আগে এই কাজের নজরদারি চালানোর জন্য জেলা পর্যায়ে একটি কমিটি তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু সেই কমিটিকে কোনও কাজ করতে দেখা যায়নি। তা ছাড়া সংশ্লিষ্ট দফতরগুলির পরিকাঠামোরও অভাব রয়েছে। বিশেষ করে কর্মীর অভাবেই নজরদারি চালানো সম্ভব হয় না। উদ্যানপালন দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বিষয়টি দেখার দায়িত্ব স্বাস্থ্য দফতরের। জেলার কৃষি আধিকারিক অরূপ দাস বলেন, ‘‘আমারা নিয়মিত প্রচার করে মানুষকে সচেতন করার চেষ্টা করি।’’ কৃষি দফতর সূত্রে জানানো হয়েছে, বিষয়টি দেখার দায়িত্ব খাদ্য দফতরের। রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, ‘‘সব্জিতে রং মেশানো বন্ধ করার বিষয়টি দেখার কথা এগ্রিকারচালার মার্কেটিং ডিপারমেন্টের।’’

কী বলছেন জেলা স্বাস্থ্য দফতর? জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রলয় আচার্য বলেন, ‘‘তুঁতে মেশানো সব্জি খাওয়া শরীরের পক্ষে ক্ষতিকর। খাদ্যে কোনওরকম ভেজাল কিছু মেশানো হচ্ছে কিনা তা যাচাই করতে জেলাতে ডেপুটি সিএমওএইচ ২ এর নেতৃত্বে মাঝে মধ্যেই তল্লাশি চালানো হয়। হোটেল ও দোকানগুলিও বাদ দেওয়া হয় না।’’

colour vegetables colour
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy