Advertisement
১৮ মে ২০২৪

ফেসবুক আর নয়, ধমক বিচারপতির

দুই সন্তানের মাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের ঘটনায় অভিযুক্ত এক যুবককে আগাম জামিন দিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘‘নো মোর ফেসবুক, নো মোর চ্যাট’’ (আর ফেসবুক নয়, আর চ্যাট নয়)। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ওই পর্যবেক্ষণ করেছেন।

শমীক ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ জানুয়ারি ২০১৮ ০৪:০৮
Share: Save:

দুই সন্তানের মাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের ঘটনায় অভিযুক্ত এক যুবককে আগাম জামিন দিয়ে কলকাতা হাইকোর্টের পর্যবেক্ষণ, ‘‘নো মোর ফেসবুক, নো মোর চ্যাট’’ (আর ফেসবুক নয়, আর চ্যাট নয়)। বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ওই পর্যবেক্ষণ করেছেন।

কী ঘটনা? রাজ্য পুলিশ সূত্রের খবর, বেহালা নিবাসী বছর চল্লিশের এক মহিলা গত ১৭ ডিসেম্বর রায়গঞ্জ থানায় অভিযোগ করে জানান, সেখানকারই এক যুবক বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁর সঙ্গে সহবাস করেছেন। প্রাথমিক তদন্তের পরে রায়গঞ্জ পুলিশ জানতে পারে, ওই যুবক বিবাহিত এবং তাঁর স্ত্রী ও দুই ছেলে রয়েছে। তদন্তে এ-ও জানা যায়, অভিযোগকারী মহিলাও বিবাহিত এবং তাঁর দুই মেয়ে রয়েছে। মহিলার আরও অভিযোগ, অভিযুক্ত যুবক জোর করে তাঁর গর্ভপাতও করিয়েছেন। ওই যুবককে থানায় ডেকে পাঠিয়ে জিজ্ঞাসাবাদও করা হয় বলে পুলিশ জানায়।

তদন্তকারীরা জানতে পারেন, বছর চারেক আগে ফেসবুকে বেহালার ওই মহিলার সঙ্গে রায়গঞ্জের ওই যুবকের আলাপ হয়। বহু বার ফেসবুকে তাঁরা চ্যাট করেন। হোয়াটসঅ্যাপেও মহিলা ও যুবকের মধ্যে কথাবার্তা হত। এর পরে রায়গঞ্জ ও বেহালায় একাধিক বার দু’জন একসঙ্গে কাটিয়েছেন।

পুলিশের কাছে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাসের অভিযোগ জমা পড়ায় হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন জানান ওই যুবক। এ দিন সেই মামলারই শুনানি ছিল।
যুবকের আইনজীবী জয়ন্তনারায়ণ চট্টোপাধ্যায় আদালতে জানান, তাঁর মক্কেল যে বিবাহিত এবং তাঁর যে স্ত্রী ও দুই পুত্র রয়েছে, মহিলার তা অজানা নয়। বিয়ের প্রতিশ্রুতির অভিযোগ ঠিক নয়। তাঁর মক্কেলও জানেন, মহিলা বিবাহিত ও তাঁর দুই কন্যা রয়েছে। অভিযুক্ত ও অভিযোগকারী দু’জনেই সাবালক। এই পরিস্থিতিতে ধর্ষণের অভিযোগ ধোপে টেকে না। যুবকের আইনজীবী আদালতে জানান, তাঁর মক্কেল একটি রাজনৈতিক দলের পদাধিকারী ছিলেন। তিনি দল ছেড়ে অন্য দলে যোগ দেওয়ায় পুলিশ মিথ্যা মামলায় তাঁকে ফাঁসিয়েছে।

এ কথা শুনে ক্ষোভ প্রকাশ করে বিচারপতি বাগচী যুবকের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, ‘‘এর মধ্যে রাজনীতির প্রসঙ্গ আসছে কী ভাবে? যদি রাজনীতির প্রসঙ্গই তোলেন, তা হলে বলতে হয়, অবৈধ একটি সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য অভিযুক্তের জেলেই যাওয়া উচিত। এই ধরনের রাজনৈতিক নেতা হলে তাঁর অনুগামীরা কী শিক্ষা পাবেন?’’ সরকারি আইনজীবী রুদ্রদীপ্ত নন্দী আগাম জামিনের বিরোধিতা করে বলেন, ওই যুবকের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে। সরকারি কৌঁসুলির সওয়াল শুনে বিচারপতি বাগচী মন্তব্য করেন, ‘‘অন্য মামলার প্রসঙ্গই বা উঠছে কেন? এই মামলার সঙ্গে সেই সব মামলার কোনও সম্পর্ক রয়েছে কি?’’ বিচারপতি বাগচীর পর্যবেক্ষণ, একে অন্যের মত নিয়ে পরিণত এক মহিলার সঙ্গে পরিণত এক পুরুষ আবেগবশত ঘনিষ্ঠ হলে তাতে ‘অপরাধ’ কোথায়।

বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী ও বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, মহিলার অভিযোগের বিচার নিম্ন আদালতে হবে। অভিযুক্ত যুবক আগাম জামিন পাওয়ার যোগ্য। তবে আদালতের অনুমতি ছাড়া রায়গঞ্জ থানা এলাকার বাইরে যেতে পারবেন না। এই নির্দেশ দিয়ে অভিযুক্তের আইনজীবীর উদ্দেশে বিচারপতি বাগচীর পর্যবেক্ষণ, ‘‘মাথায় রাখবেন, ওই মহিলার সঙ্গে নো মোর ফেসবুক, নো মোর চ্যাট।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE