প্রতীকী ছবি।
নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজের মতো রাজ্যের প্রথম সারির সরকারি হাসপাতালের ভাঁড়ারে ওষুধের জন্য ‘পরিকল্পিত’ বাজেটে পাওয়া টাকার মধ্যে আপাতত অবশিষ্ট রয়েছে ১৫৮ টাকা ৯৩ পয়সা! আর ‘অপরিকল্পিত’ বাজেটে পাওয়া টাকার মধ্যে পড়ে আছে সাকুল্যে ৮৮ টাকা ৬৪ পয়সা!
অথচ সরকারি নীতি অনুযায়ী ওই হাসপাতালে প্রতিদিন কয়েক হাজার মানুষকে নিখরচায় সব রকম ওষুধ দেওয়ার কথা। বিশেষ করে হেমাটোলজি ও ক্যানসার বিভাগে অসংখ্য রোগী আছেন, যাঁদের এক-এক জনের প্রতি মাসের ওষুধের খরচ দেড় থেকে দু’লক্ষ টাকা! হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষই জানিয়েছেন, ভাঁড়ারের শোচনীয় অবস্থার জন্য দু’মাস ধরে ওঁদের প্রায় কাউকেই ওষুধ দেওয়া যাচ্ছে না। ওই রোগীদের অধিকাংশই এত গরিব যে, বাইরে থেকে এত দামি ওষুধ কিনে খাওয়ার সামর্থ্য নেই।
রক্তের ক্যানসারে আক্রান্ত মিনা ঘোষ, মধ্যমগ্রামের রণজিৎ গৌর, গুসকরার বিপ্লব গোস্বামী, পাথরপ্রতিমার রহিমা লস্কর, ভাঙড়ের জিনা বিবি মণ্ডল এবং হিমোফিলিয়ায় আক্রান্ত বারুইপুরের দেবাশিস ঘোষের মতো অসংখ্য রোগী দু’মাসেরও বেশি সময় ধরে ওষুধ না-পেয়ে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা জানিয়েছেন, ওষুধের খোঁজে হাসপাতালে গেলেই তাঁদের শুনতে হচ্ছে, ‘মমতা দিদি টাকা পাঠালে তবে ওষুধ আসবে।’
কর্তৃপক্ষের কথায়, অর্থসঙ্কট এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে, সরকারি তালিকাভুক্ত অ্যান্টিবায়োটিক বা স্যালাইন, গজ-তুলোটুকুও কেনা যাচ্ছে না। সুপার হাসি দাশগুপ্ত বলেন, ‘‘আমাদের অসুবিধার কথা জানিয়ে স্বাস্থ্য দফতরকে ক্রমাগতই মেল করছি। ওঁরা শুধু ‘দিচ্ছি দিচ্ছি’ করছেন। কিন্তু কিছুই দিচ্ছেন না।’’
একই রকম দুরবস্থা অন্য বেশ কিছু হাসপাতালেও। কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ কর্তৃপক্ষ জানান, এপ্রিলে এক কোটি ৩০ লক্ষ টাকা পাওয়া গিয়েছিল। তার পর থেকে ওষুধের খাতে আর কোনও টাকাই আসেনি। অথচ প্রতি মাসে ওষুধের জন্য সাড়ে চার কোটি টাকার বেশি লাগে। ভাঁড়ারে সব মিলিয়ে এখন ১৫ হাজার টাকা পড়ে রয়েছে।
নবান্ন সূত্রের খবর, অর্থ দফতর ইতিমধ্যে স্বাস্থ্যের জন্য ৩৫০ কোটি টাকা দিয়েছে। তা হলে হাসপাতালের ভাঁড়ারের এই অবস্থা কেন?
‘‘সকলের টাকাই ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট হাসপাতালগুলিতে কেন তা পৌঁছয়নি, খতিয়ে দেখতে হবে,’’ বলছেন স্বাস্থ্য দফতরের বিশেষ সচিব সুবীর চট্টোপাধ্যায়। বিষয়টির দায়িত্বে আছেন তিনিই।
টাকা ছেড়ে দিলে হাসপাতাল কেন তা পাবে না, সেই বিষয়ে সুবীরবাবু বিশদ ভাবে কিছু বলতে চাননি। তবে স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, টাকা সময়মতো আসছে না দেখে স্বাস্থ্য দফতর জানুয়ারি থেকে ‘শ্যাডো অ্যালটমেন্ট’ নামে নতুন একটি ব্যবস্থা চালু করে। তাতে বলা হয়, স্বাস্থ্য দফতরের প্রশাসনিক অনুমোদন নিয়ে অনলাইনে ওষুধের অর্ডার বা বরাত দেওয়া যাবে। ওষুধ চলেও আসবে। কিন্তু বিল পাশ হবে না। টাকা এলে অর্থ দফতরের অনুমোদন নিয়ে বিল পাশ হবে। এই ভাবে জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত অনেক টাকার ওষুধ কেনা হয়ে যায়। প্রচুর টাকা বকেয়া হয়। এপ্রিলে কিছু টাকা আসা মাত্র বকেয়া মেটাতে তার অর্ধেক বেরিয়ে যায়। তার পরে আর টাকা আসেনি।
নীলরতন এবং মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের দাবি, এপ্রিল থেকে এখনও পর্যন্ত শ্যাডো অ্যালটমেন্টেরও কোনও অর্ডারে স্বাস্থ্য দফতর অনুমোদন দেয়নি। ফলে ধারেও ওষুধ কেনা যাচ্ছে না।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy