Advertisement
E-Paper

‘সকলে ঝাঁপালে হয়তো বাঁচত বিপ্লব-কুন্তল’

বৃহস্পতিবার মাঝরাতে ফেসবুকে লিখেছেন ব্রিটেনের গোর্খা রেজিমেন্টের অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক এবং ‘স্পিড ক্লাইম্বার’ নির্মল পুরজা। সাত মাসে হিমালয়ের ১৪টি আট হাজারি শৃঙ্গ জয়ের লক্ষ্যে (মিশন পসিবল) বুধবার অন্যদের সঙ্গে পা মেলান নির্মল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৮ মে ২০১৯ ০৩:১৬
রুদ্রপ্রসাদ হালদার ও রমেশ রায়। কাঠমান্ডুর হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

রুদ্রপ্রসাদ হালদার ও রমেশ রায়। কাঠমান্ডুর হাসপাতালে। নিজস্ব চিত্র

‘কাঞ্চনজঙ্ঘায় সে-দিন প্রায় ৫০ জন পর্বতারোহী ছিলেন। দু’টি জীবন বাঁচানো যেত, যদি কেউ সাহায্যের সাহস দেখাতেন। আমাদের মিশন পসিবল টিমের শুধু একটু সাহায্যের প্রয়োজন ছিল। কিন্তু কিছুই মেলেনি।’

বৃহস্পতিবার মাঝরাতে ফেসবুকে লিখেছেন ব্রিটেনের গোর্খা রেজিমেন্টের অবসরপ্রাপ্ত সৈনিক এবং ‘স্পিড ক্লাইম্বার’ নির্মল পুরজা। সাত মাসে হিমালয়ের ১৪টি আট হাজারি শৃঙ্গ জয়ের লক্ষ্যে (মিশন পসিবল) বুধবার অন্যদের সঙ্গে পা মেলান নির্মল। তার পরে শেরপা সঙ্গীদের নিয়ে শীর্ষ থেকে ফেরার সময় কী ভাবে দুই বাঙালি অভিযাত্রী বিপ্লব বৈদ্য ও কুন্তল কাঁড়ারকে উদ্ধারের প্রাণপণ চেষ্টা করেন, তার পুঙ্খনাপুঙ্খ বর্ণনা দিয়েছেন ফেসবুকে। জানিয়েছেন, অতিরিক্ত অক্সিজেন সিলিন্ডার নিয়ে উপরে আসার জন্য ক্যাম্প ফোরে বার্তা পাঠানো সত্ত্বেও কেউ আসেনি। তাই প্রশ্ন উঠছে, উচ্চতাজনিত অসুস্থতায় কাবু বিপ্লব-কুন্তলকে কি সাহায্য করেনি কেউই?

শুক্রবার সকালে কাঞ্চনজঙ্ঘা ক্যাম্প টু থেকে হেলিকপ্টারে কাঠমান্ডু পৌঁছেছেন বাকি দুই বাঙালি আরোহী— রুদ্রপ্রসাদ হালদার ও রমেশ রায়। রুদ্রের ডান হাতের চারটি আঙুলে ফার্স্ট ডিগ্রি ফ্রস্টবাইট বা তুষারক্ষত, রমেশের হাতে সেকেন্ড বা থার্ড ডিগ্রি। হাসপাতালের শয্যা থেকে ফোনে রুদ্রপ্রসাদ জানান, ক্যাম্প ফোরে ফিরে বিপ্লবদের সাহায্য করার জন্য শেরপাদের হাতে-পায়ে ধরে উপরে পাঠিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু বিপ্লবের বদলে সেই উদ্ধারকারী দল পথে পেয়ে যায় রমেশকে! তাঁকে নিয়েই রাত ১০টা নাগাদ ক্যাম্পে ফিরে আসেন শেরপারা। অক্সিজেন নিয়ে উপরে উঠলেও বিপ্লবকে নিয়ে নামতে থাকা নির্মলের কাছ পর্যন্ত পৌঁছয়নি ওই উদ্ধারকারী শেরপার দল। রুদ্র বলেন, ‘‘ক্যাম্পে পৌঁছে শুনেছিলাম, রমেশদা পৌঁছে গিয়েছে, অন্য তাঁবুতে রয়েছে। বিপ্লবদা নামছে বলে আমার বিশ্বাস ছিল, তাই তার কথা ভেবেই শেরপাদের উপরে যেতে রাজি করাই। ওরাও তখন ২৫-৩০ ঘণ্টা সামিট পুশ করে ফিরেছে। তবু বেরিয়ে রাতে যাকে উদ্ধার করে নিয়ে এল, দেখলাম, সে রমেশদা।’’ আর কুন্তল? রুদ্র জানাচ্ছেন, শৃঙ্গ জয়ের আগেই অসুস্থতার জন্য কুন্তল পিছিয়ে পড়েছিলেন। শৃঙ্গ জয় করে ফেরার পথে ৮২০০ মিটার উচ্চতায় (সেখান থেকেই এসওএস করেছিলেন রুদ্র) ফের কুন্তলের সঙ্গে দেখা হয় রুদ্রের। ‘‘ও তখন স্বাভাবিক ছিল না। নিজের অক্সিজেন মাস্কটাই ছিঁড়ে ফেলেছে, যা উচ্চতাজনিত অসুখের লক্ষণ। কিছুটা ধরে ধরে নামাই। মানসিক ভাবে চাঙ্গা করতে চড়চাপড় মারি। কিন্তু ও খালি বলতে থাকে, আমাকে একটু শুতে দে না! মনে হল, ওকে একা নামাতে পারব না। ভাবলাম, তাড়াতাড়ি নেমে বরং শেরপা পাঠাই উদ্ধারের জন্য,’’ বলেন রুদ্র। যে-সংস্থার হাত ধরে কুন্তল-রুদ্রেরা অভিযানে গিয়েছিলেন, তাদের তরফে কেশব পোড়িয়ালও এ দিন বলেন, ‘‘আমাদের শেরপারা সাহায্যে কোনও ত্রুটি রাখেনি। আমাদের একশো শতাংশ দিয়ে ওঁদের ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি।’’

বাঙালি অভিযাত্রীরা নামার সময় আলাদা হয়ে গেলেন কী করে? রুদ্র জানাচ্ছেন, ফেরার পথে আট হাজারি উচ্চতায় দেড়-দু’ঘণ্টা অক্সিজেন ছাড়াই নামতে হয়েছিল তাঁকে। যেখানে তৃতীয় সিলিন্ডারটি মজুত ছিল, সেখানে পৌঁছতে হাঁটার গতি বাড়িয়ে দেন রুদ্র। পিছিয়ে পড়েন বিপ্লব এবং তাঁর শেরপা। পর্বতারোহী সত্যরূপ সিদ্ধান্ত বলেন, ‘‘পাহাড়ে ওই উচ্চতায় এক অভিযাত্রী ও তাঁর শেরপা হল একটা টিম। চার জন যে একসঙ্গে, একই গতিতে নামতে পারবেন, তার মানে নেই। এক-এক জনের শরীরের উপরে হাঁটার গতি নির্ভর করে।’’

কাঞ্চনজঙ্ঘা জয় করেও ফেরার পথে বিপ্লব-কুন্তলের মৃত্যুর জন্য দায়ী করা হচ্ছে উচ্চতাজনিত অসুস্থতাকেই। পর্বতারোহী বসন্ত সিংহরায় বলছেন, ‘‘ওই অসুখের লক্ষণ যে দেখা যাচ্ছে, সেটা নিজে সে-ভাবে বোঝা যায় না। সহ-অভিযাত্রী বা সঙ্গে থাকা শেরপা বুঝতে পারেন।’’ কিন্তু অভিযানে সাফল্যের ‘চাপ’-এর মুখে পড়ে সেই সত্যিটাকে অনেকেই মানতে চান না। সত্যরূপের কথায়, ‘‘কে কখন কবে ডেথ জ়োনে পৌঁছে অসুস্থ বোধ করবেন, তা আগে থেকে বলা যায় না। আর এই ধরনের অভিযানে খরচের ধাক্কা প্রচুর। তাই সাফল্যের চাপও বেশি থাকে। অনেক কিছুর সঙ্গে সমঝোতা করতে হয়। তাই অসুখের জন্য ফেরা উচিত মনে হলেও ফিরতে পারেন না অনেকে।’’

কাঞ্চনজঙ্ঘার তুষারশয্যা থেকে কুন্তল-বিপ্লবকে ফিরিয়ে আনতে রওনা হয়েছে শেরপার দল।

Kangchenjunga Mountaineering Kuntan Karar Biplab Baidya
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy