Advertisement
E-Paper

পর্যটক নেই, পাহাড় ছাড়ছেন ভিক্ষুকরাও

মালদহের আব্দুর রকিব, নকশালবাড়ির আতিকুর রহমানও কাছাকাছি ধরনের কথাই বললেন বুধবার। দার্জিলিঙে গত কয়েক বছরে পর্যটনের রমরমা দেখে তাঁরা গ্রাম ছেড়ে শৈলশহরে চলে এসেছিলেন ভিক্ষা করতে।

সৌমিত্র কুণ্ডু ও প্রতিভা গিরি

শেষ আপডেট: ২২ জুন ২০১৭ ০৪:৫৮
হতাশ: দার্জিলিং ছেড়ে শিলিগুড়ির পথে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

হতাশ: দার্জিলিং ছেড়ে শিলিগুড়ির পথে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

লন্ডনে ভিক্ষা করতে যেতেন নেভিল সেন্ট ক্লেয়ার। ‘ম্যান উইথ দ্য টুইস্টেড লিপ’ গল্পে শার্লক হোমস তাঁকে ধরে ফেলার পরে, ক্লেয়ার বলেছিলেন, ভিক্ষা করে তাঁর ভালই রোজগার হত। ঠাঁটবাটও রক্ষা করা যেত তা দিয়ে।

মালদহের আব্দুর রকিব, নকশালবাড়ির আতিকুর রহমানও কাছাকাছি ধরনের কথাই বললেন বুধবার। দার্জিলিঙে গত কয়েক বছরে পর্যটনের রমরমা দেখে তাঁরা গ্রাম ছেড়ে শৈলশহরে চলে এসেছিলেন ভিক্ষা করতে। তাঁরা অবশ্য ক্লেয়ারের মতো ছদ্মবেশ নিতেন না। ম্যাল, চকবাজারে রাস্তার ধারে বসে ভিক্ষা করতেন। তাই দিয়েই চলত গ্রামের সংসার। কিন্তু টানা বন্‌ধের ডাকে এখন পাহাড় ফাঁকা। ভিক্ষে পাওয়া তো দূরের কথা, রোজকার খাবারটাও জোগানো মুশকিল। তাই প্রথম সুযোগেই পাহাড় ছাড়লেন তাঁরা।

রকিব বলেন, ‘‘পাহাড়ে মানুষ খুশি মনে বেড়াতে আসতেন। তাই হাত খুলে ভিক্ষেও দিতেন।’’ আতিকুরও বলেন, ‘‘বিদেশিও অনেকে আসতেন। ভিক্ষে করে রোজগার করতে গেলে এখানেই বেশি সুবিধা।’’ তাই অন্ধ আতিকুর দার্জিলিঙেই
থাকতে চেয়েছিলেন।

কিন্তু এই পরিস্থিতিতে তা আর সম্ভব নয়। আতিকুরদের সঙ্গে তাই নেমে এলেন কাগজ-কুড়ানিরাও। ছাতা সেলাই বা জুতো পালিশ করে যাঁরা সংসার চালাতেন, তাঁরাও পাহাড় ছাড়তে চাইছিলেন। বন্‌ধ শুরু হওয়ার পরে এ ক’দিন রোজই চকবাজারে এসে অপেক্ষা করতেন তাঁরা। যদি কোনও গাড়ি নামে, তাঁরাও নেমে যাবেন।

বুধবার ভোরে দার্জিলিং ট্রাফিক পুলিশের ওসি দর্জি শেরপাকে দেখে এগিয়ে যান রকিব, আতিকুরদের মতো বেশ কয়েকজন। রকিব বলেন, ‘‘পাহাড়ে খাবারের দাম ক্রমশ বাড়ছে। আর ক’দিন থাকলে না খেয়ে মরতে হবে।’’ তাঁদের সে কথা শুনে দর্জি শেরপা তখন তিনটি ট্রেকারে নিখরচায় তাঁদের শিলিগুড়ি নামার ব্যবস্থা করে দেন।

আতিকুর বলেন, ‘‘এই শহরে ভিক্ষে করেই ছোট তিন ছেলেমেয়েকে বড় করছি। কিন্তু এখন আর থাকা সম্ভব নয়।’’ মালদহের জালালপুরের বাসিন্দা আব্দুলের ডান পা হাঁটুর নীচে থেকে নেই। ভিক্ষেই সম্বল। তিনিও ১০ বছর ধরে দার্জিলিঙে ভিক্ষে করেই মেয়েকে বড় করেছেন। আবার মহম্মদ মিরাজ প্লাস্টিকের বোতল কুড়িয়ে বেড়ান। স্ত্রী মনোরাবা খাতুন, মা জৈবান খাতুন, ছোট ছেলে মহম্মদ আবেদ এবং মেয়ে ফরজনাকে নিয়ে তিনিও ট্রেকারে উঠেছেন। ছাতা সারাই করেন নিসাত খান। পুলিশ নিখরচায় গাড়ির ব্যবস্থা করেছে জেনে তিনিও এ দিন দুই মেয়ে, স্ত্রীকে নিয়ে নেমে গিয়েছেন। নিসাত বলেন, ‘‘পর্যটক নেই। দোকান বন্ধ। আমারও কাজ নেই।’’ মিরাজের কথায়, ‘‘ভাগ্যিস পুলি‌শ ব্যবস্থা করল। না হলে প্রচণ্ড সমস্যায় পড়তে হত।’’

Darjeeling Tourist Gorkha Janmukti Morcha দার্জিলিং পর্যটক
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy