১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট ভারতের জাতীয় পতাকা তুলছেন কোচবিহারের মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ। সূত্র: কুচবিহার দর্পণ পত্রিকা
১৯৪৭ সালের ১৫ অগস্ট ‘নূতন যুগের ভোরে’ প্রায় গোটা দেশে যখন উড়ছে তেরঙা জাতীয় পতাকা, তখন উত্তরবঙ্গের কিছু অংশে উড়েছিল পাকিস্তানের পতাকা। তখনও স্পষ্ট ছিল না সে অংশগুলি ভারতে জুড়বে, না পাকিস্তানে। সিরিল জন র্যাডক্লিফ দেশ ছাড়ার পরে, ১৭ অগস্ট যখন তাঁর চূড়ান্ত রিপোর্ট জানা যায়, তখন এলাকাগুলি থেকে পাকিস্তানের পতাকা খুলে, অবশেষে ওড়ে ভারতের জাতীয় পতাকা।
বঙ্গীয় ইতিহাস সমিতির সভাপতি তথা প্রাক্তন অধ্যাপক, ইতিহাসবিদ আনন্দগোপাল ঘোষ জানান, দেশ ভাগের সময়ে দার্জিলিং জেলা চেয়েছিল পাকিস্তান। কারণ, দার্জিলিং ছিল বনাঞ্চলে ভরা। জঙ্গল থেকেই আসত কাঠের জোগান। তা থেকে তৈরি করা যাবে নৌকা। প্রাথমিক পর্যায়ে সে সম্মতিও মেলে। তাই মুসলিম লিগ ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট পাকিস্তানের পতাকা তোলে দার্জিলিঙে। সে পতাকা দু’দিন ছিল। জলপাইগুড়ি ছিল আদিবাসী-প্রধান। আর ছিলেন রাজবংশী তথা ক্ষত্রিয়েরা। আনন্দবাবুর কথায়, ‘‘তাঁরা মনে করতেন, ভারতে থাকলে বর্ণহিন্দুরা তাঁদের শাসন করবে। তাই তাঁরাও ছিলেন পাকিস্তানে ভুক্ত হওয়ার পক্ষে।’’ জানা যায়, জলপাইগুড়ির নবাব মোশারফ হোসেন ছিলেন মুসলিম লিগে। তিনি চেষ্টা করেন, জলপাইগুড়ি পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হোক। তাই জলপাইগুড়ির কিছু জায়গায় ১৫ অগস্ট উড়েছিল পাকিস্তানের পতাকা। ইতিহাস গবেষক সমিত ঘোষ জানান, দেশভাগের পরে, বালুরঘাটকে ‘নোশনাল’ এলাকার (ধারণাগত) মধ্যে ফেলা হয়। ফলে, ১৫ অগস্ট এখানে সরকারি ভাবে জাতীয় পতাকা না উঠলেও, মহিলা কংগ্রেসের নেতৃত্বে বালুরঘাটের কংগ্রেস পাড়ায় জাতীয় পতাকা তোলা হয়। এই এলাকার ভারতভুক্তির জন্য কংগ্রেস নেতৃত্ব উপরমহলে দাবি জানান। ১৮ অগস্ট বালুরঘাটের সঙ্গে রায়গঞ্জ, গোয়ালপোখর ভারতভুক্ত হয়। ১৮ অগস্ট ৪২-এর আন্দোলনের নেতা সরোজরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে মহকুমাশাসকের দফতরে ভারতের জাতীয় পতাকা ওঠে। আনন্দ জানান, মালদহ ও মুর্শিদাবাদের পাকিস্তানে যাওয়ার কথা ছিল। তাই সেখানে পাকিস্তানের পতাকা উঠেছিল।
‘কুচবিহার দর্পণ’ পত্রিকা থেকে জানা যায়, ১৯৪৭-এর ১৫ অগস্ট নীলকুঠির মাঠে ভারতের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ। অনেকের মতে, ভারতের স্বাধীনতাকে সম্মান এবং শ্রদ্ধা জানিয়ে পতাকা উত্তোলন করেন মহারাজ। ‘বন্দে মাতরম্’ ও ‘জয় হিন্দ’ ধ্বনিও ওঠে। গবেষকদের কারও কারও দাবি, স্বাধীনতার আগেই, কোচবিহারের ভারতভুক্তির বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy