রীনা ওঁরাওয়ের বাড়ির দেওয়ালে গুলির দাগ দেখাচ্ছে তাঁর ছেলেরা।
শুঁড় উচিয়ে ধেয়ে আসা হাতির দল তাড়াতে ছররা গুলি ছুড়েছিল বনকর্মীরা। তাই এসে বিঁধল জলদাপাড়া জঙ্গল লাগোয়া মাদারিহাটের শলামণ্ডল এলাকার দুই বাসিন্দার বুকে। গুরুতর জখম দু’জনকেই আলিপুরদুয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
শুক্রবার রাত ৯টা নাগাদ একটি হাতির দল ঢুকে পড়েছিল ওই এলাকায়। হাতি ঢুকেছে খবর পেয়ে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বাসিন্দারা রাস্তা ছেড়ে বিভিন্ন বাড়িতে আশ্রয় নেন। জানা গিয়েছে মোবাইলে চার্জ দিতে পড়শি রীনা ওঁরাও এর বাড়িতে গিয়েছিলেন বিপুল ওঁরাও। হাতির ভয়ে বাড়ির উঠোন থাকা রীনাদেবী তড়িঘড়ি বারান্দায় উঠেছিলেন। অন্যদিকে গণ্ডগোল শুনে বারান্দায় বেড়িয়ে এসেছিলেন বিপুলবাবু। আচমকাই ছুটে আসা ছররা গুলিতে জখম হন দু’জন।
দুই বাসিন্দা জখম হওয়ার খবর ছড়াতেই উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এলাকা। বনকর্মীদের আটকে রেখে রাতভর বিক্ষোভ চলে। বাসিন্দাদের অভিযোগ, বনকর্মীদের কয়েকজন মদ্যপ থাকাতেই এই ঘটনা ঘটেছে। তাঁদের দাবি, হাতি বা অন্য কোনও বুনোর দলকে তাড়াতে শূন্যে গুলি ছোড়ার নিয়ম রয়েছে। শূন্যে ছোড়া গুলি কী করে বাসিন্দাদের বুকে বিঁধল তা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তাঁরা।
মদ্যপ থাকলেই এমন নিশানায় ভুল হতে পারে বলে অভিযোগ। যদিও, বন দফতর থেকে অভিযোগ অস্বীকার করা হয়েছে। তাদের পাল্টা দাবি। তাড়াতে গেলে বনকর্মীদের দিকেই হাতির দলটি তেড়ে আসে। উন্মত্ত দাঁতালের একেবারে সামনে পড়ে যান কয়েকজন বনকর্মী। তাঁদের বাঁচাতে গিয়েই শূন্যে না ছুঁড়ে নীচের দিকে গুলি ছোঁড়া হয়েছিল। বনকর্মীদের কেউ মদ্যপ ছিলেন না বলেও দাবি বন আধিকারিকদের।
জলদাপাড়ার সহকারী বন্যপ্রাণ ওয়ার্ডেন বিমল দেবনাথ বলেন, “হাতির দল যাতে নিরাপদে এলাকা ছেড়ে চলে যেতে পারে সে জন্য সার্চ লাইটও দেখানো হচ্ছিল। হঠাৎই হাতির দলটি ঘুরে গিয়ে কর্মী ও বাসিন্দাদের দিকে তেড়ে আসে। তখন মরিয়া হয়ে কর্মীরা দু’রাউন্ড ছররা গুলি চালায়৷ গুলির শব্দ শুনে হাতির দল পালিয়ে যায়৷ কিন্তু গুলিতে দুই বাসিন্দা জখম হয়েছেন। তাঁদের চিকিৎসার ভার আমরা নেব।’’
জানা গিয়েছে, এলাকাটি হাতির করিডরের মধ্যে অবস্থিত। গত শুক্রবার রাতে দাঁতালের দলটি জলদাপাড়া থেকে খয়েরবাড়ির দিকে যাচ্ছিল। হঠাৎই বনবস্তির দিকে ঘুরে দাঁড়ায় তারা। এ দিন রীনাদেবীর বাড়িতে গিয়ে দেখা মিলল তাঁর দুই ছেলের। বারান্দার দেওয়ালে গুলির ছাপ। রীনাদেবীর আট বছরের ছেলে অজয় বলে, ‘‘বিপুলকাকু বারান্দায় দাঁড়িয়ে ছিল৷ আর মা বারান্দা থেকে ঘরে ঢুকছিল৷ হঠাৎ দুজনেই যন্ত্রণায় চিৎকার করতে থাকে৷ চিৎকার শুনে আশপাশের বাড়ির সকলে চলে আসে।”
স্থানীয় বাসিন্দা সুষমা খাড়িয়া, আলিমা খাড়িয়াদের অভিযোগ, “গতকাল যখন বনকর্মীরা হাতিগুলিকে লক্ষ্য করে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে শুরু করে তখম আমরা চিৎকার করে তাদের গুলি চালাতে বারণ করি৷ কিন্তু ওরা শোনেনি৷ তাহলে এমন ঘটনা হত না৷” তবে আধিকারিকরা স্বীকার না করলেও পরিকাঠামোয় গলদ যে আছে তা উঠে এল এক বনকর্মীর কথায়। ওই কর্মী বলেন, ‘‘মান্ধাতা আমলের বন্দুক নিয়ে আমাদের টহলে বের হতে হয়৷ কর্মীর সংখ্যাও প্রয়োজনের চেয়ে কম৷ যারা রয়েছেন তাদের অনেকেরই বয়স পঞ্চাশ পেরিয়ে গেছে৷ তাঁদের আধুনিক প্রশিক্ষণও নেই৷ সব কিছু ঠিকঠাক থাকলে হয়তো এই ঘটনা এড়ানোও যেত।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy