Advertisement
E-Paper

ঋণ মকুবের দাবিতে অবরোধ চাষিদের

আলু নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত উত্তরবঙ্গে। সহায়ক মূল্যে আলু কেনা এবং কৃষি ঋণ মকুবের দাবিতে বিষের শিশি হাতে নিয়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন একদল চাষি। মঙ্গলবার ধূপগুড়ি-গয়েরকাটা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের আংরাভাসা এলাকায় ওই অবরোধ হয়। চাষিদের দাবি, সহায়ক মূল্যে তাঁদের কাছ থেকে সমস্ত আলুই কিনে নিতে হবে। সেই সঙ্গে, সমবায় সংস্থার মাধ্যমে যে টাকা ঋণ নিয়ে চাষ করেছেন, সেটাও মুকুব করতে হবে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৫ ০৩:১৪
আংরাভাসা এলাকায় জাতীয় সড়কে  অবরোধে আলুচাষিরা। মঙ্গলবার রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।

আংরাভাসা এলাকায় জাতীয় সড়কে অবরোধে আলুচাষিরা। মঙ্গলবার রাজকুমার মোদকের তোলা ছবি।

আলু নিয়ে বিক্ষোভ অব্যাহত উত্তরবঙ্গে। সহায়ক মূল্যে আলু কেনা এবং কৃষি ঋণ মকুবের দাবিতে বিষের শিশি হাতে নিয়ে জাতীয় সড়ক অবরোধ করলেন একদল চাষি। মঙ্গলবার ধূপগুড়ি-গয়েরকাটা ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের আংরাভাসা এলাকায় ওই অবরোধ হয়। চাষিদের দাবি, সহায়ক মূল্যে তাঁদের কাছ থেকে সমস্ত আলুই কিনে নিতে হবে। সেই সঙ্গে, সমবায় সংস্থার মাধ্যমে যে টাকা ঋণ নিয়ে চাষ করেছেন, সেটাও মুকুব করতে হবে।

আংরাভাসা এলাকায় এ দিন সকাল ১১টা নাগাদ রাস্তায় আলু ফেলে অবরোধে বসেন কৃষকেরা। প্রায় তিন ঘণ্টা অবরোধ চলে। যানজটে জেরবার হতে হয় নিত্যযাত্রীদের। এদিকে অবরোধ আন্দোলন চলাকালীন জলপাইগুড়িতে জেলা প্রশাসনের কর্তারা আলোচনায় বসে সহায়ক মূল্যে আলু কেনার সিদ্ধান্ত নেন। আজ, বুধবার ধূপগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি সদর ব্লকে সমবায় সংস্থার মাধ্যমে সাড়ে পাঁচ টাকা কেজি দামে আলু কেনা শুরু হবে।

জেলা কৃষি আধিকারিক সুজিত পাল বলেন, জেলার সাতটি ব্লকে সহায়ক মূল্যে আলু কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। চাষি পিছু পাঁচশো কেজি আলু কেনা হবে। এক সপ্তাহে দেড় হাজার মেট্রিক টন আলু কেনা হবে। এদিন জেলাশাসকের দফতরে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক, মহকুমাশাসক, জেলা কৃষি এবং কৃষি বিপণন আধিকারিকরা। আলোচনার পরে জেলা কৃষি আধিকারিক জানান, সমবায় সংস্থাগুলির মাধ্যমে আলু কেনা হবে। প্রথম পর্যায়ে ধূপগুড়ি এবং জলপাইগুড়ি সদর ব্লকে সহায়ক মূল্যে আলু কেনার কাজ চলবে। আগামী সপ্তাহে ফের আলোচনায় বসে অন্য ব্লকে একই পদ্ধতিতে আলু কেনার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

জেলা প্রশাসনের কর্তারা জানান, কেনা আলু স্কুলে মিড ডে মিলে ছাত্রদের মাথা পিছু সপ্তাহে এক কেজি করে বিনা মূল্যে বিলি করা হবে। এদিনের সভায় কৃষি বিপণন দফতরের কর্তারা জানান, জেলায় এবার প্রায় ৭ লক্ষ টন আলু উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে। ১৮ টি হিমঘরে ৩ লক্ষ মেট্রিক টন আলু মজুতের ব্যবস্থা আছে। তাঁদের ধারণা স্থানীয় বাজার এবং ভিন রাজ্যে প্রায় ৩ লক্ষ মেট্রিক টন আলু বিক্রি হবে। বাড়তি ১ লক্ষ মেট্রিক টন আলু থাকবে। জেলা কৃষি আধিকারিক জানান, ওই আলুর কতটা সহায়ক মূল্যে কেনা যায়, সেটা দেখা হচ্ছে।

এ দিন আংরাভাসায় শিলিগুড়ি-অসম যাতায়াতের ৩১ নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখানোর সময় ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছলেও কৃষকরা তাতে কোনও সাড়া দেননি। শেষ পর্যন্ত বুধবার প্রশাসনিক স্তরে বৈঠক করে কৃষকদের পক্ষে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে ধূপগুড়ি ব্লকের কৃষি আধিকারিক বিক্ষোভকারীদের জানালে, তিন ঘণ্টা বাদে অবরোধ তুলে দেওয়া হয়। টানা তিন ঘণ্টা ধরে রাস্তা অবরোধের ফলে রাস্তার দু’ধারে কয়েক’শো গাড়ি আটকে পড়ে নাজেহাল হতে হয় বাসযাত্রীদের।

পাশের ফালাকাটা ব্লকে সহায়ক মূল্যে আলু কেনা শুরু হলেও, ধূপগুড়িতে তা শুরু হয়নি। তবে সরকার যে কৃষক প্রতি মাত্র ৫০০ কিলোগ্রাম আলু সহায়ক মূল্যে কিনছেন, তাতে সোমবারই কৃষকরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। উত্তরবঙ্গের অন্যতম প্রধান আলু বলয় ধূপগুড়ির ক্ষেত্রে সম পরিমাণ আলু কেনা হলে সে ক্ষেত্রে আপত্তি জানানো হবে বলে জানিয়ে দিয়েছেন তাঁরা। ধূপগুড়ি ব্লক কৃষি আধিকারিক দেবাশিস সর্দারের কথায়, “বুধবার আমরা স্থানীয় প্রশাসনিক স্তরে আলোচনা করে আলু কিনতে শুরু করব।”

মঙ্গলবার ফালাকাটা ও পার্শ্ববর্তী ধূপগুড়ি ব্লকের পাইকারি বাজারে জ্যোতি আলুর দাম কমে দাঁড়ায় কিলো প্রতি ৩ টাকা ১০ পয়সায় আর লালপাহাড়ি সাড়ে চার টাকায় বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন কৃষকরা। ধূপগুড়ির মোট ১২ হাজার হেক্টর জমিতে ৩ লক্ষ ৬০ হাজার মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। ফালাকাটা ব্লকের ৬ হাজর হেক্টর জমিতে তার অর্ধেক পরিমাণ আলু হয়েছে। দুই ব্লকের মোট ১৪ হিমঘরে উৎপাদিত আলুর অর্ধেক পরিমাণ মজুত রাখার মতো জায়গা রয়েছে। ফলে সব কটি হিমঘর পূর্ণ। ফলে ব্যাপক পরিমাণ আলু কৃষকদের জমিতে পড়ে রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, অসম, বিহারে ব্যাপক আলুর ফলন হয়েছে, সেখানে আলুর চাহিদা নেই। তা ছাড়া, ব্যবসায়ীরা আলু কিনে মজুত করে রাখতে পারবেন না বলে সে ভাবে আলু কিনছেন না। তাঁরা জানিয়েছেন, গত বছর এ সময় পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব ভারতের চার রাজ্যে ৩৫টি মালগাড়ি বোঝাই আলু রফতানি হলেও এ পর্যন্ত মাত্র ১২টি মালগাড়ি আলু রফতানি করা গিয়েছে। ধূপগুড়ির আলু ব্যবসায়ী সংগঠনের পক্ষে স্বপন দত্ত বলেছেন, “আলু কিনে আমরা রাখবোটা কোথায়? ভিন রাজ্যেও পাঠাতে পারছি না, ফলে এই দাম ক্রমশ কমবে।”

কৃষকেরা জানিয়েছেন, বিঘা প্রতি আলু উৎপাদনে খরচ ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। এক বিঘাতে ৪ হাজার কিলো আলু মেলে। তা প্যাকেটজাত করা ও পরিবহণ খরচ মিলিয়ে আরও ১০ হাজার টাকা খরচ হয়। ৩০ হাজার টাকা খরচ করে সে আলু ১২ হাজার টাকায় বিক্রি করতে হচ্ছে। এদিন আংরাভাষায় বিক্ষোভরত আলু চাষি অরবিন্দ রায় বলেছেন, “১২ বিঘা আলু চাষ করেছি ধার দেনা করে। বাজারে দাম নেই। সরকার উদাসীন। এ অবস্থায় ঋণ মকুব বা সহায়ক মূল্যে সমস্ত আলু না কেনা হলে আত্মহত্যা ছাড়া অন্য পথ খোলা নেই।”

সহায়ক মূল্যে কৃষকদের সমস্ত আলু কেনার দাবিতে আন্দোলনে নামার হুমকি দিয়েছে সিপিএম-এর কৃষক সভা। জলপাইগুড়ি জেলা কৃষক সভার সভাপতি বনমালী রায়ের কথায়, “যে পরিমাণ আলু সরকার কিনছে, তাতে সমুদ্র থেকে কয়েক বালতি জল তোলার মতো অবস্থা। এটা চলতে পারে না।”

উত্তর দিনাজপুরের ইসলামপুরে সাদা আলু বাজার মূল্য প্রায় প্রতি কুইন্টাল ২৫০০। তবে চাহিদা না থাকায় বাজার মূল্য আরও কমতে পারে। কৃষি দফতর সূত্রে খবর, ইসলামপুর মহকুমায় এ বছর আলুর চাষ হয়েছে প্রায় ১২,২৪০ হেক্টর জমিতে। গত বছরের তুলনায় তা প্রায় ৫০০ হেক্টর বেশি। তবে এবছর কিষান ক্রেডিট কার্ড ইস্যু হয়েছে প্রায় ২০৪৯টি। আলু ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সম্পাদক তথা উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সদস্য নেপাল দত্ত জানিয়েছেন, আলু কেনার সাহস পাচ্ছেন না ব্যবসায়ীরা, কাজেই এক সপ্তাহের মধ্যেই আলুর দাম আরও পড়বে। ইসলামপুরের হিমঘর ৪টি। সেখানে প্রায় ১৪ লক্ষ প্যাকেট আলু রাখা সম্ভব হলেও বাইরে পড়ে থাকবে প্রায় ৫ থেকে ৬ লক্ষ প্যাকেট আলু।

এদিন কোচবিহারের বিভিন্ন মহকুমায় আলু কেনার কাজ শুরুর ব্যাপারে বৈঠক করে প্রশাসন তুফানগঞ্জের মহকুমাশাসক পালদেন শেরপা জানান, গ্রাম পঞ্চায়েত ভিত্তিক শিবির করে বুধবার থেকে আলু কেনা হবে। আগ্রহী কৃষকদের থেকে ন্যূনতম এক কুইন্টাল করে আলু কেনার লক্ষ্যমাত্রা নেওয়া হয়েছে।

anrabhasa agitation road blocked potato moratorium
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy