Advertisement
১৯ মে ২০২৪

ফের উনুনে চাপল রসগোল্লার হাঁড়ি

সে কালে যে কোনও পারিবারিক অনুষ্ঠানেই বাড়িতে ভিয়েন বসত। সেই বাঙালি যৌথ পরিবার এখন ছানায় কড়া রসের পাক দেওয়া মিষ্টির মতোই বিরল। এখন প্যাকেজিং, হোম ডেলিভারির সময়ে জামাইষষ্ঠীর আগের দিন থেকে পাড়ার গলির দোকানের রসগোল্লাতেও মিশেছে চকোলেট।

চকোলেট রসগোল্লা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

চকোলেট রসগোল্লা। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

অনির্বাণ রায় ও সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১০ জুন ২০১৬ ০২:২২
Share: Save:

সে কালে যে কোনও পারিবারিক অনুষ্ঠানেই বাড়িতে ভিয়েন বসত। সেই বাঙালি যৌথ পরিবার এখন ছানায় কড়া রসের পাক দেওয়া মিষ্টির মতোই বিরল। এখন প্যাকেজিং, হোম ডেলিভারির সময়ে জামাইষষ্ঠীর আগের দিন থেকে পাড়ার গলির দোকানের রসগোল্লাতেও মিশেছে চকোলেট। কেতাদুরস্ত বাতানুকূল অবাঙালি দোকানেও জামাইষষ্ঠীর জন্য কাঁচাগোল্লা, রসমালাই সাজানো হয়েছে বাহারি পাত্রে।

শিলিগুড়ি শহরের নতুন-পুরোনো সব ধরনের মিষ্টির দোকানেই ষষ্ঠীর বাজার ধরার রকমারি সাজসজ্জা। কেউ কেউ ক্ষীরের প্যাঁড়া অথবা ছানাভাজার ওপরে ক্ষীর দিয়ে জামাইষষ্ঠী লিখেছেন, কেউ বা ক্ষীর দিয়ে তৈরি করেছেন মাছের আকৃতির মিষ্টি। সেই সঙ্গে রসোগোল্লায় চকোলেট মেশানোর মতো হালফিলের মার্কেটিং কৌশলও রয়েছে।

শহরের হাকিমপাড়ার মিষ্টির দোকানটি এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয়। এতদিন যে কোনও উৎসবে পার্বনে শ’তিনেক বেশি রসগোল্লা এবং কেজি দশেক দইয়ের বাড়তি আয়োজন রাখতেন। সেটাই হতো উৎসব বিশেষ উদ্যোগ। তবে এ বারে সেই পাড়ার দোকানও ষষ্ঠীর মিষ্টির বাজার ধরতে চেয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে উনুন থেকে নেমেছে রসগোল্লার কড়াই। রসের পাকে চিনির গাঢ় গন্ধের সঙ্গে চকোলেটের গন্ধও ভুরভুর করছে এলাকায়। সাদা রসোগাল্লার একদিকে গাঢ় খয়েরি ছোপ।

মিষ্টির দোকানের মালিক নিরঞ্জন বসাক গর্বিত ভঙ্গিতেই বললেন, ‘‘রসগোল্লায় চকোলেট মিশিয়েছি। শুনেছি কলকাতায় নাকি এমন পরীক্ষানিরীক্ষা হচ্ছে। তাই আমিও পরীক্ষা করলাম।’’ বিকেলে নিরঞ্জনবাবু জানালেন, চকোলেট রসোগোল্লার বিপুল কাটতি। রাতেই ফের রসোগোল্লার হাঁড়ি উনুনে চাপানো ছাড়া উপায় নেই। বেশ কিছু দিন ধরে বিধান রোডের একটি কেতাদুরস্ত মিষ্টির দোকানেও চকোলেট রসগোল্লা মিলছে। দোকানের ম্যানেজার সুব্রত সাহা বললেন, ‘‘মিষ্টি এবং চকোলেট দুই বাঙালির প্রিয়। জামাই ষষ্ঠীর বাজারেও চকোলেট রসোগোল্লার তুমুল কাটতি রয়েছে।’’

রসগোল্লা, চমচম প্রবণ বাঙালির মিষ্টিতে ঢুকে পড়েছে কাজু বরফিও। শহরের স্টেশন ফিডার রোডের একটি অবাঙালি মিষ্টির দোকানে জামাইষষ্ঠী উপলক্ষে কাজু বরফি সহ কাজুর পাঁচ রকম মিষ্টির আয়োজন হয়েছে। ছানা ভাজা, কাঁচাগোল্লাও সাজানো হয়েছে শো-কেসে। দোকানের অন্যতম কর্ণধার শ্যাম অগ্রবাল বলেন, ‘‘জামাইষষ্ঠীর প্রচুর বরাত রয়েছে। সকলেরই ফরমায়েশ কাজু বরফি।’’ বেলাকোবা থেকেও মিষ্টি আসছে শিলিগুড়িতে। টাঙাইল ঘরানার চমচমের জন্য বেলাকোবা না ছড়িয়ে পড়েছে দক্ষিণবঙ্গেও। শিলিগুড়ির জামাইয়ের পাতে পড়বে বেলাকোবার চমচমও। বেলাকোবার একটি দোকানের মালিক লিটন দত্ত বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার এবং শিলিগুড়ি দু’দিনে শিলিগুড়িতে চারশো মিষ্টি যাচ্ছে। শহরের অনেক দোকানেই আমাদের মিষ্টি পৌঁছেছে।’’

চকোলেট-কাজু-টাঙাইলের কড়াপাক সব মিলিয়ে জামাইষষ্ঠীতে শিলিগুড়ির পাতে মিষ্টিতে ঐতিহ্য-আধুনিকতা একাকার। যেমন বিধান রোড়ের দোকানে ছানার তৈরি গোল ওই সন্দেশ এক একটি ৩৫ টাকা দামে বিকোচ্ছে। উপরে লেখা থাকছে ‘জামাইষষ্ঠী’। এই দিনের খদ্দেরদের কথা ভেবেই তৈরি হয়েছে এক একটি ২৫ টাকা দামের বড় ল্যাংচা। খেজুর এবং কাঠবাদামের তৈরি বিশেয ড্রাই ফ্রুটস সন্দেশও থাকছে। তাদের দোকানের ক্ষীর দইও এই বাজারে দেদার বিক্রি হচ্ছে বলে জানান রাজেশ সিংহ।

ক্ষুদিরামপল্লির একটি দোকানে ‘আমদই’ এবং জামাইষষ্ঠী লেখা সন্দেশ ভাল বিক্রি হচ্ছে। মাটির ভাঁড়ে ১৫০ গ্রাম দই। উপরে গোলাপের পাপড়ি ছড়ানো। দাম পড়ছে ৩০ টাকা। জামাইষষ্ঠী লেখা সন্দেশ এখানে ১৫ টাকায় মিলছে। শেষ পাতে সুস্বাদু দই না রাখলে জামাইষষ্ঠীতে ভোজনরসিক বাঙালির রসনা তৃপ্তিতে ছন্দ পতনের আশঙ্কা থাকে। মাটির ভাঁড়ে ৫০০ গ্রাম, এক কেজি, দুই কেজি করে বিক্রি হচ্ছে। শিলিগুড়ি থানা লাগোয়া একটি মিষ্টির দোকানের দই এবং ক্ষীরের সিঙারার কদর রয়েছে শহরের বাসিন্দাদের কাছে। সৃষ্টিধর ঘোষের পর এখন তাঁর ছেলে নারায়ণ ঘোষ ওই মিষ্টির ব্যবসা সামলাচ্ছেন। তিনি জানান, দই, ক্ষীরের সিঙারার জন্য জামাইষষ্ঠীর মতো অনুষ্ঠানে এখনও বহু খদ্দের আসেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

chocolate rasgulla Jamaisasshthi Recipe
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE