Advertisement
১৮ মে ২০২৪

প্রাণ থাকতে বুথ ছাড়বেন না, কর্মীদের বললেন অধীর

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তাঁর সরকার গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চাইছেন বলে একের পর এক অভিযোগ তুলে তৃণমূলকে বিঁধলেন। অন্যদিকে কংগ্রেসকে ঘুরে দাঁড় করাবার বার্তা দিলেন দলীয় নেতা-কর্মীদের। রবিবার শিলিগুড়ি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পুর ভোট উপসক্ষে দলীয় কর্মিসভায় যোগ দিয়ে তাঁদের প্রার্থী-কর্মীদের কাছে এ কথাই তুলে ধরেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী।

রামঘাট এলাকায় প্রচারে অধীর চৌধুরী।—নিজস্ব চিত্র।

রামঘাট এলাকায় প্রচারে অধীর চৌধুরী।—নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৬ এপ্রিল ২০১৫ ০২:৫৫
Share: Save:

মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তথা তাঁর সরকার গণতন্ত্র ধ্বংস করতে চাইছেন বলে একের পর এক অভিযোগ তুলে তৃণমূলকে বিঁধলেন। অন্যদিকে কংগ্রেসকে ঘুরে দাঁড় করাবার বার্তা দিলেন দলীয় নেতা-কর্মীদের। রবিবার শিলিগুড়ি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে পুর ভোট উপসক্ষে দলীয় কর্মিসভায় যোগ দিয়ে তাঁদের প্রার্থী-কর্মীদের কাছে এ কথাই তুলে ধরেন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীররঞ্জন চৌধুরী।

সম্প্রতি মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যর প্রসঙ্গ তুলে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন ‘আমি চাই উন্নয়নের জন্য পুরসভাগুলি তৃণমূলের হোক। তা হলেই উন্নয়ন হবে।’ অর্থাৎ মানুষ পুরসভাগুলি তৃণমূলের না করলে উন্নয়ন হবে না। তাঁরা চাইছেন গণতন্ত্র থাকবে না, বৈচিত্র থাকবে না। তৃণমূলের বাংলা হবে আর কোনও দল থাকবে না। মুখ্যমন্ত্রীর কথাতেই তা স্পষ্ট। এতে শিলিগুড়িবাসীর-ও শঙ্কিত হওয়ার কারণ রয়েছে।’’

অধীরবাবুর অভিযোগ, তৃণমূল হুমকি দিয়ে অনেককে প্রার্থী পদ প্রত্যাহার করতে বাধ্য করেছে। নিজেদের উপর ভরসা হারিয়েই তৃণমূল ওই কাজ করছে। তাঁদের আশঙ্কা নির্বাচন হলে যদি পরাজয় হয়, সেই ভয়ে তাঁরা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জিততে চাইছেন। দক্ষিণবঙ্গে এটা প্রকট। পুলিশ, তৃণমূল একাকার হয়ে নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করছে। শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় সেই সম্ভাবনা রয়েছে। তাই দলের কর্মীদের শপথ নিতে বলেন, ভোটের দিন তাঁরা যেন প্রাণ থাকতে বুথ ছেড়ে না যান। কংগ্রেসকে ঘুরে দাঁড় করাতে কর্মীদের আহ্বান জানান। অধীরবাবুর বক্তব্য গুরুত্বহীন বলে মনে করছেন উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তিনি বলেন, ‘‘কংগ্রেস মানুষের সমর্থন হারিয়েছে। তাদের অস্তিত্ব প্রায় নেই। অধীরবাবুর ওই সব কথার কোনও উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি না।’’

তৃণমূলের পাশাপাশি বিজেপি’কে আক্রমণ করে অধীরবাবু এ দিন বলেন, ‘‘বিকেন্দ্রে সরকার গড়ার কয়েক মাসের ব্যবধানে তারা দিল্লিতে ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে। বাংলায় তারা যে হাওয়া তোলার চেষ্টা করেছিল, তা খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুরভোটে তাই লড়াই কংগ্রেসের সঙ্গে তৃণমূলের।’’ বিজেপি’র দার্জিলিং জেলা সভাপতি রথীন্দ্র বসুর কথায়, ‘‘কংগ্রেস সাইন বোর্ডে পরিণত। তাঁদের নেতারা কংগ্রেসকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলে যাচ্ছেন। অন্য দলের সম্বন্ধে তাঁকে কিছু বলতে হবে না। অধীরবাবু আগে নিজেকে এবং তার দলকে সামলান।’’

অধীরবাবু এ দিন কটাক্ষ করেন, সারদা-সহ বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার দুর্নীতি কাণ্ডে জড়িয়ে তৃণমূল নিজের ভাবমূর্তি ধূলোয় মিশিয়েছে। কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে তাঁদের কেউ কলঙ্কিত, কেউ জেলে। তাদের মন্ত্রীরা জেলে থাকলেও পদ খোওয়া যায়নি। সারদার মতো অনেক সংস্থাই তৃণমূলের দৌলতে এ রাজ্যে লালিত হয়েছে। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীকে আমার প্রশ্ন বাংলার উন্নয়নের জন্য কালিম্পং পাহাড়ে, ডেলো পাহাড়ে যাওয়াটা কি জরুরি ছিল? উন্নয়নের আলোচনা মানুষকে সাক্ষী রেখে করা যায় না?’’

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির অভিযোগ, দূর্নীতিকে আশ্রয় করেই তৃণমূল শাখাপ্রশাখা ছড়িয়েছে। তাদের লুঠ, স্বজনপোষণ, দুর্নীতি মানুষের কাছে উপহাসের বিষয় হয়ে উঠেছে। যারা গরিব বাসিন্দাদের সর্বস্বান্ত করেছে সেই তৃণমূলের কাছে মানুষ ভাল কিছু আশা করতে পারে না।

গত পুর নিবার্চনে শিলিগুড়িতে তৃণমূলের সঙ্গে জোট বেঁধে লড়াইয়ের কথা টেনে জানান, তৃণমূলের সঙ্গে ওই আঁতাতের লক্ষ্য ছিল বাসিন্দাদের উন্নত পুর-পরিষেবা দেওয়ার। কিন্তু বোর্ড গঠনের পর তৃণমূল বিরোধিতা শুরু করেছিল, ভিতর থেকে দুর্বল করার চেষ্টা করছিল অভিযোগ। তাঁর দাবি, যখন বুঝলেন শহরবাসীর জন্য কাজ করতে দেওয়া হচ্ছে না তখন তাঁরা সরে এসেছেন। তাই তাঁর আহ্বান, ‘‘আংশিক নয় কংগ্রেসকে সম্পূর্ণ ক্ষমতা দিন। না হলে আর্থিক অবরোধ ভেঙে এগোনো যাবে না। আমরা শিলিগুড়ি পুরসভাকে দেশের মধ্যে দৃষ্টান্ত হিসাবে তুলে ধরতে চাই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE