Advertisement
০৫ মে ২০২৪
Maldaha College

পুলিশকর্তা দেখেই ছুট যুবকদের

ফোনে কথা বলতে অসুবিধে কোথায়? ওই যুবক বলেন, “ভর্তি করানোর জন্য অনেক ফোন আসছে। অনেকে আবার টাকার অঙ্কও জানতে চাইছেন। এখন সবার ফোনেই কল রেকর্ডিং হয়।

নজর: বালুরঘাট কলেজেই মঙ্গলবার উপস্থিত জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

নজর: বালুরঘাট কলেজেই মঙ্গলবার উপস্থিত জেলা পুলিশ সুপার প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

অভিজিৎ সাহা
মালদহ শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৮ ০৪:৪৮
Share: Save:

ডান হাতের দু’আঙুলের মাঝে সিগারেট। মঙ্গলবারের বৃষ্টি ভেজা দুপুরে ক্যান্টিনে মধ্যমণি হয়ে বসে রয়েছেন রোগা পাতলা চেহারার এক যুবক। তাঁকে ঘিরে জনা দশেক আরও কিছু ছেলে। প্রত্যেকেরই হাতে সিগারেট। সিগারেটের ধোঁয়ায় ধোঁয়াময় ক্যান্টিন। ঠিক সেই সময় মোবাইল ফোনটি বেজে উঠল ওই যুবকের। ফোন রিসিভ করেই তাঁর জবাব, ফোনে কথা হবে না। ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে কথা বলতে হলে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। ফোনে কোন কথায় বলতে পারব না। ফোনে কথা বলতে অসুবিধে কোথায়? ওই যুবক বলেন, “ভর্তি করানোর জন্য অনেক ফোন আসছে। অনেকে আবার টাকার অঙ্কও জানতে চাইছেন। এখন সবার ফোনেই কল রেকডিং হয়। তাই ফোনে ভর্তি সংক্রান্তের বিষয় এড়াতে হচ্ছে।”

এ দিন এমনই ছবি দেখা গিয়েছে মালদহ কলেজে। কলেজের গেটে নিরাপত্তারক্ষী থাকলেও পরিচয়পত্র দেখার কোনও বালাই নেই। ফলে অবাধ প্রবেশ কলেজ চত্বরে। ফলে ভর্তির জন্য লাইন না থাকলেও একদল যুবক-যুবতীদের ভিড়ে গমগম করছে কলেজ প্রাঙ্গণ।

এমন সময়ে আচমকা কলেজে হাজির মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ। কলেজে গিয়ে ভর্তি হতে আসা পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। ভর্তি সংক্রান্ত কোনও সমস্যা থাকলে পুলিশের হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বরে মেসেজ করারও বার্তা দেন অর্ণববাবু। আর ইংরেজবাজার থানার আইসি পূর্ণেন্দু কুন্ডুকে দ্রুত কলেজে পুলিশের বিজ্ঞাপনটি টাঙিয়ে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। তিনি বলেন, “পুলিশ সর্বত্র সক্রিয় রয়েছে। এখন পর্যন্ত ভর্তি সংক্রান্ত বিষয়ে অভিযোগ মেলেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে।”

আর তিনি কলেজে ঢুকতেই খবর চাউর হয়ে যায়। সেই খবরে হঠাৎই ফাঁকা হয়ে যায় কলেজ চত্বরে।

এমনকি, ক্যান্টিনে মধ্যমণি হয়ে বসে থাকা ওই যুবকও ছুটলেন মাঠের দিকে। পুলিশ সুপার কলেজ চত্বর ছাড়তেই ভর্তিতে দুর্নীতি রুখতে ফ্লেক্স টাঙাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েন একদল যুবক। প্রত্যেকেই তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সক্রিয় কর্মী। সেই দৃশ্য দেখে মুচকি হাসছেন কলেজের কিছু অধ্যাপক। এক অধ্যাপক বলেন, “যাদের জন্য কলেজে পুলিশ ঢুকছে, এখন তারা আবেদনকারীদের সচেতন করতে সক্রিয়।” তৃণমূল ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি প্রসূন রায় বলেন, “আমাদের ছাত্রনেতাদের পড়ুয়া না হলে কলেজ যেতে নিষেধ করা হয়েছে। এ ছাড়া কলেজ পড়ুয়া ছাত্র নেতাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে পুলিশের হোয়াট্সঅ্যাপ নম্বর সকলের কাছে ছড়িয়ে দিতে।”

মালদহ কলেজে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে ভর্তির অভিযোগ বিগত বছর উঠেছিল। জানা গিয়েছে, স্টাফ কোটা চালু ছিল কলেজে। কলেজের স্টাফের ছেলে-মেয়েরা সেই কোটায় ভর্তির সুযোগ পাবেন। বিগত বছর সেই কোটা নিয়ে তুমুল হইচই হয় রাজ্য জুড়ে। আপাতত কলেজের সেই কোটা তুলে দেওয়া হয়েছে। ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ প্রভাস চৌধুরী বলেন, “নিয়ম মেনেই আমাদের ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে। স্টাফ কোটায় ভর্তির বিষয়ে এ বারে কোনও আবেদন জমা পড়েনি।” গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য স্বাগত সেন বলেন, “কলেজগুলিতে আমরাও নজর রাখছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE