(বাঁ দিকে) মৃত অমিত। শোকার্ত পরিবার। — নিজস্ব চিত্র
ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ফের একজনের মৃত্যু হল শিলিগুড়িতে। মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতের নাম অমিত ছেত্রী (২৮)। বাড়ি শহরের ১১ নম্বর ওয়ার্ডের ক্ষুদিরামপল্লিতে। কয়েকদিন ধরেই জ্বর হওয়ায় গত ১১ নভেম্বর তাঁকে পানিট্যাঙ্কি মোড়ের কাছে একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছিল। পরদিন তাকে প্রথমে শিলিগুড়ি জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে রেফার করা হয়েছিল তাঁকে। বুধবার রাতে এখানেই মৃত্যু হয় তাঁর।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের চিকিৎসকদের তরফে অমিতের মৃত্যুর কারণ হেমারেজিক ডেঙ্গি বলে উল্লেখ করা হলেও দার্জিলিং জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জানান, কার্ড টেস্ট পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়েছে। তবে ম্যাক এলাইজা পরীক্ষার রিপোর্ট এখনও মেলেনি। তা পেলেই বোঝা যাবে।
ঘটনাচক্রে বৃহস্পতিবার উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে পরিদর্শনে যান স্বাস্থ্য বিষয়ক হাইপাওয়ার কমিটির চেয়ারম্যান চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও স্বাস্থ্য শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়। ফের ডেঙ্গিতে মৃত্যুর প্রসঙ্গে জানতে চাওয়া হলে কিছু বলতে চাননি চন্দ্রিমাদেবী। তিনি বলেন, ‘‘ডেঙ্গির ব্যাপারে কিছু জানি না। কিছু বলতেও পারব না।’’
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের একটি সূত্রের খবর, এ দিনের বৈঠকে মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিষেবার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন চন্দ্রিমাদেবী। ডেঙ্গি, এনসেফ্যালাইটিস-সহ বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার জন্য পর্যাপ্ত ওষুধ কিনতে অর্থ দেওয়া হলেও তা সময় মতো কেন কেনা হচ্ছে না তা নিয়ে তিনি প্রশ্ন তোলেন। ওই খাতে দেড় কোটির বেশি টাকা পড়ে থাকলেও সময় মতো ওষুধ কেনা হচ্ছে না কেন তা জানতে চান তিনি। কাজকর্ম নিয়ে বৈঠকের মধ্যেই ডেপুটি সুপার, সহকারি সুপারদের ভর্ৎসনা করেন।
স্টোর এবং ফিনান্স অফিসারের উপরেই ওষুধ কেনার বিষয়টি নির্ভর করে বলে তারা জানান। স্টোর কী করে পরিচালনা করতে হবে সে ব্যাপারে পরামর্শ দেওয়ার জন্য কলকাতা থেকে অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের পাঠানোর কথা জানিয়েছেন চন্দ্রিমাদেবী। মেঝেতে বা একই শয্যায় একাধিক রোগী রাখার যে সমস্যা রয়েছে তা মেটাতে শয্যা বাড়ানোর বিষয়টি অনুমোদন করার জন্য স্বাস্থ্য দফতরে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন।
চিকিৎসকদের একাংশের হাজিরা নিয়েও বৈঠকে প্রশ্ন ওঠে। স্বাস্থ্য শিক্ষা অধির্কতা বলেন, ‘‘সরকার এ ব্যাপারে কড়া ব্যবস্থা নেবে। কেউ যদি মনে করেন কাজ না করে চালিয়ে যাবেন তা হবে না। কাজ করতে না-চাইলে তিনি চলে যান তাতে কোনও সমস্যা নেই।’’ সম্প্রতি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের অন্তত ৭ জন চিকিৎসক কাজে ইস্তফা চেয়ে চিঠি দিয়েছেন। তাঁরা কাজে আসছেন না বলে জানা গিয়েছে। অধ্যক্ষ সমীর ঘোষ রায় জানিয়েছেন, না জানিয়ে অনুপস্থিত থাকলে চিকিৎসকদের বেতন বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসকেরা ছুটি অনুমোদন করানোর পরে বেতন পাচ্ছেন।
ওষুধ কিনতে অবহেলার মতোই বিভিন্ন চিকিৎসা সরঞ্জাম কিনতে না পারা, হাসপাতাল চত্বর পরিষ্কার রাখতে না পারা, সিটি স্ক্যান, নতুন যন্ত্র কেনার ব্যবস্থা করতে না পারার জন্য কর্তৃপক্ষের উদাসীনতাকেই দায়ী করা হয়েছে। মেডিক্যালে অগ্নি নির্বাপন ব্যবস্থা এবং অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা সামাল দিতে জলাধার নির্মাণের বিষয়টি দ্রুত অনুমোদন করে কাজ শুরু করতে বলা হয়েছে।
উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে পূর্ত দফতরের যে বিভাগ রয়েছে তাদেরও তৎপর হতে বলা হয়েছে। হাসপাতালের সুপার নির্মল বেরা বলেন, ‘‘ওষুধ কেনার যে টাকা পড়ে রয়েছে তা দ্রুত কাজে লাগানো হবে। ই-টেন্ডারের মাধ্যমে সমস্ত প্রক্রিয়া শীঘ্রই শুরু করা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy