পুরভোটের প্রচারের সময় বারেবারেই বেআইনি বহুতল ভাঙার দাবি উঠেছিল শহরে। রাজ্যের প্রাক্তন পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য শিলিগুড়ির হাসমি চক লাগোয়া এলাকায় রেলের জমি নিয়ে বেসরকারি নির্মাতা সংস্থাকে শপিং মল করতে দেওয়াটা ‘ভুল’ হয়েছিল বলে কবুল করেছিলেন। সুযোগ পেলে তিনি যে ওই ভুল শুধরে নেবেন সেটাও ঘোষণা করেছিলেন। উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব সহ তৃণমূলের কাউন্সিলরদের অনেকেই হাসমি চকের বিতর্কিত ভবনটির নির্মাতা সংস্থাকে ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমিটি নিয়ে ‘পার্কিং’ তৈরির পক্ষে মত প্রকাশ করেছিলেন। তাতে শহরের বিশিষ্ট জনেরা অনেকেই আশার আলো দেখেছিলেন। এমনকী, শিলিগুড়ির বাসিন্দা তথা রাজ্যের প্রবীণ বিদ্বজ্জনদের অন্যতম অশ্রু কুমার শিকদারও হাসমি চকের বিতর্কিত বহুতল ভাঙার পক্ষে সরব হয়েছিলেন।
তাই অশোকবাবু মেয়র হওয়ার পরে বোর্ডের প্রথম বৈঠকে ওই বিতর্কিত বহুতল সরাতে কোনও প্রস্তাব পেশ হবে বলে আশা প্রকাশ করেছিলেন শহরের অনেকেই। কিন্তু, বাস্তবে দেখা গেল তার ধারকাছ দিয়েও গেলেন না অশোকবাবু। বরং শিলিগুড়ি পুরসভার মেয়রের ডাকা প্রথম মাসিক অধিবেশনেই ২৩২ টি নতুন বিল্ডিং প্ল্যান পাশ করানো হল।
বেশির ভাগই বহুতল, তার মধ্যে কয়েকটি বহুতলের উপরে আবার নতুন করে নির্মাণের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার বামফ্রন্ট, কংগ্রেস ও বিজেপির মোট ৩০ জন কাউন্সিলরের সম্মতিতে তা পাশ হতে কোনও অসুবিধা হয়নি। বিরোধী তৃণমূলের কাউন্সিলররা অধিবেশনে যোগ দিলেও পরে মতের অমিল হওয়ায় অধিবেশন বয়কট করে বেরিয়ে যান। শুধু তাই নয়, তৃণমূলের কয়েকজন কাউন্সিলর পুরসভায় দাঁড়িয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে জানান, হাসমি চকের বিতর্কিত বহুতলটি সরিয়ে নিজের ভুল সংশোধনের কথা ঘটা করে বলেছিলেন অশোকবাবু, অথচ মেয়র হওয়ার পরে কোনও উচ্চ বাচ্য করছেন না কেন সেই রহস্য সামনে আসা দরকার।
কংগ্রেস ও বিজেপির কয়েকজনের প্রশ্ন, কংগ্রেসের মেয়র থাকার সময়ে হাসমি চকের ওই ভবন সরানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়নি। পুরসভা প্রশাসকের হাতে থাকার সময়েও উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী ওই বিতর্কিত ভবনের জায়গায় পার্কিং লট করাতে উদ্যোগী হননি। এমনকী, নির্মাতা সংস্থার তরফে কয়েকজন উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ পেলে তারা নির্মাণ বন্ধ করে অন্যত্র সরে যাবেন বলার পরেও পুর প্রশাসন আসরে নামেনি। সে জন্য বামেরা ফের পুরসভা দখলের পরে দ্রুত ওই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে ভেবেছিলেন অনেকেই।
কিন্তু, বামেরা সে পথে হাঁটেনি। উপরন্তু, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর অরবিন্দ ঘোষ ওরফে অমুবাবু, যিনি শহরের বিতর্কিত বহুতল নিয়ে বরাবর সরব তিনিও হাসমি চকের ভবনটি নিয়ে বোর্ড মিটিঙে কোনও প্রশ্ন তোলেননি দেখে কাউন্সিলরদের একাংশ বিস্মিত। তৃণমূল কাউন্সিলর কৃষ্ণ পাল বলেন, ‘‘নতুন বোর্ড শহরের স্বার্থে কী করছে তা রাস্তাঘাটের জঞ্জাল জমে থাকা থেকে স্পষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিতর্কিত বহুতল নিয়ে নয়া বোর্ডের ভূমিকা-রহস্য স্পষ্ট হতে দেরি নেই।’’ সেই সঙ্গে ‘সিসমিক জোনে’ থাকা শহরে এতটা তাড়াহুড়ো করে বিল্ডিং তৈরির অনুমতি দেওয়ার আগে আরও ধৈর্য ধরা উচিত ছিল বলে মনে করছেন প্রাক্তন মেয়র কংগ্রেস নেত্রী গঙ্গোত্রী দত্তও।
যদিও সবই নতুন পদ্ধতিতে করা হবে বলে জানিয়েছেন মেয়র অশোক ভট্টাচার্য। তাঁর দাবি, ‘‘যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাঁদের বিশেষজ্ঞ দিয়ে কী রকম ভবন শিলিগুড়ি শহরের জন্য উপযুক্ত তার একটা রূপরেখা তৈরি করা হবে।’’ তবে তা করার আগে কেন এই বিল্ডিংগুলোর অনুমতি দেওয়া হচ্ছে? তিনি জানান, ‘‘এই বৈঠকে পাশ করানো হল। দ্রুত সমস্ত ব্যবস্থা হবে।’’
যদিও গোটা পদ্ধতিতেই গলদ রয়েছে বলে দাবি তৃণমূলের। কৃষ্ণবাবুর অভিযোগ, ‘‘নিয়ামানুযায়ী আগে বিল্ডিং কমিটি তৈরি হবে। তার পরে সেই কমিটি বিল্ডিং নিয়ে সিদ্ধান্ত নেবে। এ ভাবে কখনও পাশ হতে পারে না।’’ এদিন অধিবেশন চলাকালীন শহরের একাধিক জায়গায় আইন লঙ্ঘন করে বিল্ডিং তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ তোলেন পুরসভার তৃণমূল কাউন্সিলরদের দলনেতা নান্টু পাল। নির্দিষ্ট করে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়ার পরামর্শ দেন পুরসভার বিল্ডিং বিভাগের মেয়র পারিষদ নুরুল ইসলাম।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy