Advertisement
E-Paper

বিয়ে রুখতে পুলিশকে কাজে লাগানোর নালিশ

ছেলের সঙ্গে তাঁদের মেয়ের বিয়ে দেবে বলে বেশ কিছুদিন ধরে আশ্বস্ত করেছিলেন প্রেমিক যুবক রাজেশের বাবা শঙ্কর মাহাতো। কিন্তু বাস্তবে, যাতে এই বিয়ে না হয় সে জন্য পুলিশের একাংশকে গ্রামের ধনী ব্যবসায়ী শঙ্কর বাবু হাত করে নিয়েছিল বলে অভিযোগ ফালাকাটার আত্মঘাতী তরুণী অর্পিতার পরিবারের।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২১ জুলাই ২০১৫ ০২:১৪
রাজেশের পোড়া বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

রাজেশের পোড়া বাড়ি। —নিজস্ব চিত্র।

ছেলের সঙ্গে তাঁদের মেয়ের বিয়ে দেবে বলে বেশ কিছুদিন ধরে আশ্বস্ত করেছিলেন প্রেমিক যুবক রাজেশের বাবা শঙ্কর মাহাতো। কিন্তু বাস্তবে, যাতে এই বিয়ে না হয় সে জন্য পুলিশের একাংশকে গ্রামের ধনী ব্যবসায়ী শঙ্কর বাবু হাত করে নিয়েছিল বলে অভিযোগ ফালাকাটার আত্মঘাতী তরুণী অর্পিতার পরিবারের। পুলিশের সঙ্গে শঙ্কর মাহাতোর যোগসাজশের অভিযোগ তুলতে শুরু করেছেন গ্রামবাসীরাও।

তাঁদের অনেকেরই সন্দেহ, বিয়ের নাম করে আট দিন ধরে প্রতিবেশী তরুণী অর্পিতাকে নিয়ে এলাকা ছাড়া রাজেশ গ্রামে ফিরে সম্পর্কের কথা অস্বীকার করলে কোনও মতে যে পার পাবে না, তা আগেভাগেই ধরে নিয়েছিলেন শঙ্করবাবু। সে জন্য আইনানুগ ভাবে যাতে অর্পিতার সঙ্গে তাঁর ছেলের সম্পর্ক ছিন্ন করা যায় সে জন্য তিনি পুলিশকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন বলে মনে করছেন বাসিন্দাদের একাংশ।

বাসিন্দারা জানিয়েছেন, অর্পিতার বাবা নেই। দাদা গ্রামে চায়ের দোকান চালান। তাদের বাড়ির উল্টোদিকে শঙ্কর মাহাতের বাড়ি। এলাকার বড় ব্যবসায়ী ও প্রচুর জমির মালিক। তাঁর ছেলের সঙ্গে আট বছর ধরে সম্পর্ক ছিল অর্পিতার। অর্পিতার বাড়ির লোকজন তা জানতেন। তবে শঙ্করবাবু গোড়া থেকেই তা মানতে পারেননি। রাজেশ বিয়ে করার নাম করে বাড়ি থেকে বেড়িয়ে অর্পিতাকে নিয়ে সোনাপুর গ্রামে তাঁর পিসি-র বাড়িতে চলে যায়। দু দিনের মধ্যে ছেলের খোঁজ পেয়ে যান শঙ্কর বাবু। সম্পর্কের ছেদ ঘটাতে তিনি নিজে সোনাপুর গ্রামে গিয়ে রাজেশ কে অর্পিতার সঙ্গে বিয়ে না করার জন্য চাপ দেন বলে অভিযোগ। প্রতিবেশী তরুণীর সঙ্গে সম্পর্ক রাখলে সে সম্পত্তি সে পাবে না বলেও রাজেশ কে তিনি জানিয়ে আসেন। অর্পিতার সঙ্গে সম্পর্ক ছেদ করতে তিনি সে সময় পুলিশি অস্ত্রের কথাও ছেলেকে জানিয়ে দেন বলে গ্রামের বাসিন্দাদের অনেকের অভিযোগ।

তবে শঙ্করবাবু ছেলেকে বিয়ে না করার জন্য চাপ দিলেও ফালাকাটার রাইচেঙ্গা গ্রামে ফিরে তিনি অবশ্য অর্পিতার বাড়ির লোকজনকে বিয়েতে রাজি বলে আশ্বস্ত করেন। এমনটাই অভিযোগ অর্পিতার দাদা অনিমেষ মল্লিকের। অনিমেষ বাবুর কথায়, ‘‘আমরা বিয়েতে রাজি ছিলাম। তার জন্য তোড়জোড় করতে থাকি। আমাদের সহজ সরল পেয়ে ধনী ওই ব্যবসায়ী পুলিশকে হাতে করে নেয়। বাড়ি ফেরার নাম করে রাজেশ বোন কে নিয়ে থানায় চলে যায়। শঙ্কর বাবু বা রাজেশ জানত গ্রামে ফিরে সে বোনকে বিয়ে করবে না একথা বললে কেউ তা মেনে নেবে না।’’

গত শুক্রবার রাজেশ তার প্রেমিকা অর্পিতা কে নিয়ে ফালাকাটা থানায় ওঠে । সেখানে সে জানিয়ে দেয় অর্পিতার সঙ্গে তার কোন সম্পর্ক নেই। হতভম্ব অর্পিতা তখন কিছুই বুঝে উঠতে পারেনি। রাজেশের নামে অভিযোগ করার জন্য অর্পিতাকে বলে পুলিশ। তবে অর্পিতা তাতে রাজি হয়নি। পরের দিন তাদের ৪১ নম্বর ধারায় আলিপুরদুয়ার আদালতে পাঠায় পুলিশ। সেখানে দুজনের জামিন হয়। রাজেশ ও অর্পিতা নিজেদের বাড়ি চলে যায়। অপমানিত ওই তরুণী এরপরে গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করে। খবর ছড়িয়ে পড়তেই ক্ষিপ্ত গ্রামবাসী রাজেশদের বাড়ি জ্বালিয়ে দেয়। রাজেশ ও তার বাবা সহ চার জনের নামে অর্পিতার মা গীতা দেবী আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ জানায়।

সোমবার গ্রামের পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হলেও ঘটনা নিয়ে গ্রামে আলোচনা চলছে। রাজেশ বিয়ে করবে না তা গ্রামে এসে না জানিয়ে কেন থানায় গিয়ে তা বলল সেই প্রশ্নই তুলেছেন তাঁরা। পুলিশকে আগেভাগে শঙ্কর মাহাতো হাত করে নিয়েছিল কি না তা নিয়েও তদন্তের দাবি উঠেছে। সারা রাত অর্পিতাকে থানায় বসিয়ে রাখা হলেও কেনই বা পুলিশ উদ্যোগ নিয়ে তাঁর পরিবারের লোকজনকে খবর দিল না প্রশ্ন উঠেছে তা নিয়েও ।

এলাকার তৃণমূল নেতা চঞ্চল অধিকারীর কথায়, ‘‘ওই ঘটনায় পুলিশ যুক্ত বলে সকলে মনে করছে। যেন তেন উপায়ে ছেলেকে অর্পিতার কাছ থেকে দূরে সরাতে মরিয়া হয়ে পড়ে শঙ্করবাবু। তাতে পুলিশের একাংশকে কাজে লাগায় সে। আইনত যাতে দুই জনের ছাড়াছাড়ি হয় সে দিকে এগোন তিনি। অর্পিতা কোন অভিযোগ করলে যদি ছেলে গ্রেফতার হত তাতেও শঙ্কর বাবু রাজি ছিল বলে মনে হচ্ছে। কারণ, বিয়ে না করলে গ্রামবাসীরা ছেড়ে কথা বলবে না বলে তিনি জানতেন।’’ সিপিএম নেতা বীরেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের কথায়, শঙ্কর মাহাতো নিশ্চয় পুলিশের একাংশ কে আগেভাগে হাত করেছিল। পুলিশ অবশ্য সবই অস্বীকার করেছে। ফালাকাটার আইসি ধ্রুব প্রধানের দাবি, আইন মেনেই পদক্ষেপ করা হয়েছে।

ভ্রম সংশোধন

গতকাল এই সংস্করণে তেরোর পাতায় প্রকাশিত ফালাকাটায় পলাতক রাজেশ মাহাতোর পোড়া বাড়ির ছবির ক্যাপশনে ভুলবশত ‘জ্বলছে রাজেশের দেহ’ লেখা হয়েছে। তা হবে ‘জ্বলছে রাজেশের বাড়ি’। অনিচ্ছাকৃত এই ত্রুটির জন্য আমরা আন্তরিত দুঃখিত ও ক্ষমাপ্রার্থী।

Allegation police north bengal falakata
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy