Advertisement
০২ মে ২০২৪

ভোটের ময়দানে অফসাইডের ফাঁদে ভাইচুং

বুধবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেলিকপ্টার শিলিগুড়ি ডুয়ার্সের দিকে ওড়ার কিছু পরেই, তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া পৌঁছন শিলিগুড়ি কলেজে। সেখান থেকে গিয়েছিলেন শিলিগুড়ি মহিলা কলেজেও। দুই কলেজেই পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে, অধ্যক্ষ-অধ্যক্ষা এবং শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেন, ভোট প্রচার করেন।

শিলিগুড়ি মহিলা কলেজে প্রচারে ভাইচুং ভুটিয়া। বুধবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

শিলিগুড়ি মহিলা কলেজে প্রচারে ভাইচুং ভুটিয়া। বুধবার বিশ্বরূপ বসাকের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৬ ০২:১৮
Share: Save:

‘কোচে’র ভুলেই কি ‘অফ-সাইড’-এর ফাঁদে পড়লেন তৃণমূলের স্ট্রাইকার?

বুধবার দুপুরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হেলিকপ্টার শিলিগুড়ি ডুয়ার্সের দিকে ওড়ার কিছু পরেই, তৃণমূল প্রার্থী ভাইচুং ভুটিয়া পৌঁছন শিলিগুড়ি কলেজে। সেখান থেকে গিয়েছিলেন শিলিগুড়ি মহিলা কলেজেও। দুই কলেজেই পড়ুয়াদের সঙ্গে কথা বলে, অধ্যক্ষ-অধ্যক্ষা এবং শিক্ষাকর্মীদের সঙ্গেও কথা বলেন, ভোট প্রচার করেন। কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভোট প্রচার যে করা যায় না, তা কমিশনের আর্দশ আচরণবিধি (মডেল কোড অব কনডাক্ট) তথা এমসিসি-তে স্পষ্ট উল্লেখ্য রয়েছে, সরকারি-বেসরকারি কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ভোট প্রচার চালানো যায় না।

এরপরেই কেউ বলছেন, ভোটের ময়দানে ‘ফাউল’ করেছেন ভাইচুং। কারও দাবি, আত্মঘাতী গোল। সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকারই বিধিভঙ্গের অভিযোগ জানিয়েছেন কমিশকে। তাঁর কথায়, ‘‘নিঃসন্দেহে ভাইচুং ফুটবল ভাল খেলেন। কিন্তু ভোটের ময়দানের ব্যাকরণ তাঁর জানা নেই। ভাইচুঙের কোচেরাও তা খুব একটা জানেন বলে মনে হল না।’’

তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের থেকে ভাইচুংকে যুব প্রজন্মের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশ মানতেই এ দিন ভাইচুং দুই কলেজে প্রচারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে খবর।

তৃণমূলের প্রার্থীদেরও সাম্প্রতিক অতীতে কলেজে গিয়ে প্রচারের উদহারণ অন্তত শিলিগুড়িতে নেই। তৃণমূলের জেলা নেতাদের একাংশ অবশ্য এ দিন ভাইচুঙের সটান কলেজে উপস্থিত হওয়াকে ‘সেম সাইড গোল’ না বলে ‘ফাউল’ বলে মনে করছেন। তাঁদের দাবি, নেহাতই ভুল করে ভাইচুং ছাত্র নেতাদের ডাকে সাড়া দিয়ে ফেলেছেন। যাতে বড় জোর হলুদ কার্ড দেখার আশঙ্কা রয়েছে।

ভাইচুঙের নিয়মভঙ্গ নিয়ে ইতিমধ্যেই সক্রিয় ম্যাচ রেফারিও। কলেজে ঢুকে প্রচার চালানোর কথা জানিয়ে ইতিমধ্যে জেলা নির্বাচনী দফতরে বিধিভঙ্গের অভিযোগ জানিয়েছে বামেরা। অভিযোগ পাওয়ার পরে ভাইচুং কলেজে থাকাকালীন ভিডিও ফুটেজ এবং ছবি সংগ্রহ করেছে কমিশন। কোনও কলেজে রাজনৈতিক দলের প্রার্থী, নেতা-কর্মীরা কলেজে পৌঁছলেই প্রশাসনকে জানাতে এ দিন তড়িঘড়ি নির্দেশ পাঠানো হয়েছে কলেজ কর্তৃপক্ষগুলিকে। সূত্রের খবর, বিধি ভেঙে প্রচারের জন্য কমিশনের থেকে সর্তকিত হতে পারেন ভাইচুং। কেন তাঁর বিরুদ্ধে পদক্ষেপ হবে না তা জানতে চাইতে পারে কমিশন।

লোকসভার পরে শিলিগুড়ির বিধানসভাতে তৃমমূলের প্রার্থী হয়ে ময়দানে ‘পাহাড়ি বিছে’ নামে পরিচিত ভাইচুং দাবি করেছিলেন, তিনি প্রচারের ‘টিম’ করেছেন। সেই ‘টিমে’র সিদ্ধান্তেই প্রচার চালাবেন। ফুটবলার ভাইচুঙের নির্বাচনী প্রচারের এই ‘ভুল’কে কটাক্ষ করতেও ছাড়ছেন না বিরোধীরা। সিপিএমের জেলা সম্পাদক জীবেশ সরকারই বিধিভঙ্গের অভিযোগ জানিয়েছেন কমিশকে। তাঁর কথায়, ‘‘নিঃসন্দেহে ভাইচুং ফুটবল ভাল খেল। কিন্তু ভোটের ময়দানের ব্যকরণ তাঁর জানা নেই। ভাইচুঙের কোচেরাও তা খুব একটা জানেন বলে মনে হল না।’’ তৃণমূল সূত্রে জানা গিয়েছে, দলের থেকে ভাইচুংকে যুব প্রজন্মের সঙ্গে জনসংযোগ বাড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিল। সেই নির্দেশ মানতেই এ দিন ভাইচুং দুই কলেজে প্রচারে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন বলে দল সূত্রে খবর।

শিলিগুড়ি কলেজে ঢোকার পরে ভাইচুংকে তৃণমূলের প্রতীক আঁকা উত্তরীয় পরিয়ে সংবর্ধনা দেয় টিএমসিপি নেতা-কর্মীরা। ফুটবলার ভাইচুঙের সঙ্গে নিজস্বী তুলতে শুরু করেন ছাত্র-ছাত্রীরা। সেলফি তোলার পরে পড়ুয়াদের রাজনীতি নিয়ে নানা পরামর্শও দেন ভাইচুং। দেখা করেন কলেজের অধ্যক্ষ উজ্জ্বল সরকারের সঙ্গে। কলেজের ফুটবল টিম নিয়ে খোঁজখবর করেন। কলেজের শিক্ষাকর্মীদের বসার ঘরে গিয়ে সকলের সঙ্গে ছবি তোলেন, কলেজ চত্বরে থাকা কর্মীদের আবাসনে গিয়ে ভোট প্রচার করেন। এর পর ডাবগ্রামের মহিলা কলেজে গিয়েও একই ভাবে প্রচার চালিয়েছেন ভারতীয় ফুটবল দলের প্রাক্তন অধিনায়ক।

সে কারণেই ভাইচুঙের পা থেকে আসা ‘আত্মঘাতী’ গোল সামলাতে দলকে বেশ ঝক্কিও পোহাতে হবে বলে মনে করছেন তৃণমূলের জেলা নেতারা। তবে ভাইচুং অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি ফুটবল মাঠের মতো, ভোটের ময়দানের নিয়মও জানেন। তাঁর দাবি, ‘‘আমি তো কলেজে গিয়ে সরাসরি কারও কাছে ভোট চাইনি, কোনও পতাকা নিয়ে যায়নি। স্লোগানও হয়নি। তাই বিধিভঙ্গ হয়নি।’’ জেলা তৃণমূল সভাপতি রঞ্জন সরকার দাবি করেছেন, ‘‘দুই কলেজেই খেলার মাঠ রয়েছে। খেলোয়াড় হিসেবেই ভাইচুং মাঠ দেখতে গিয়েছিল। পরে সৌজন্যের খাতিরে কলেজের অধ্যক্ষ-কর্মীদের সঙ্গে দেখা করেন।’’

কংগ্রেসের জেলা (সমতল) সভাপতি শঙ্কর মালাকারের অভিযোগ, ‘‘তৃণমূল প্রশাসনকে ব্যবহার করে গায়ের জোরে প্রচার চালায়। শিলিগুড়িতে তা ফের প্রমাণ হল।’’ কমিশনকে নালিশ জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপিও। দলের জেলা সভাপতি অরুণ সরকার বলেন, ‘‘আমরা কমিশনের দিল্লির অফিসে ফ্যাক্স পাঠিয়ে নালিশ জানাব।’’

প্রার্থী হওয়ার পরে প্রতিদিনই সকালে শহরের কোনও না কোনও মাঠে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের সঙ্গে জনসংযোগে গিয়ে ফুটবল খেলেছেন ভাইচুং। খুদেদের খেলার নিয়ম শিখিয়েছেন। তবে ভোটের মাঠে নিজেই নিয়মভঙ্গের অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন। পড়েছেন ‘রেফারি’র নজরেও। এখন রেফারির পকেট থেকে হলুদ না লাল কোন রঙের কার্ড বের হয় কিনা তা নিয়েই দুশ্চিন্তা জেলা তৃণমূল নেতাদের।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Assembly Election 2016
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE