Advertisement
E-Paper

বাপনের চিকিৎসক হওয়ার ইচ্ছেতে বাদ সাধছে অভাব

সকাল হলেই দিনমজুরির খোঁজে বেরিয়ে যেতে হয় বাবা মন্টু সিংহকে। ভাঙাচোরা সাইকেল চালিয়ে চলে যান ১০ কিলোমিটার দূরে বিহারে। কেননা সেখানে গেলে বাড়তি মজুরি মেলে। আর হাটবারে চট পেতে চাল বিক্রি করেন বাড়তি কিছু রোজগারের আশায়। বাবার সঙ্গে হাটে হাটে চাল বিক্রি করতে হয় ছেলে বাপনকেও।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৯ মে ২০১৫ ০২:৫৩
বাপন সিংহ। নিজস্ব চিত্র।

বাপন সিংহ। নিজস্ব চিত্র।

সকাল হলেই দিনমজুরির খোঁজে বেরিয়ে যেতে হয় বাবা মন্টু সিংহকে। ভাঙাচোরা সাইকেল চালিয়ে চলে যান ১০ কিলোমিটার দূরে বিহারে। কেননা সেখানে গেলে বাড়তি মজুরি মেলে। আর হাটবারে চট পেতে চাল বিক্রি করেন বাড়তি কিছু রোজগারের আশায়। বাবার সঙ্গে হাটে হাটে চাল বিক্রি করতে হয় ছেলে বাপনকেও।

সেই ছেলের পরীক্ষার ফল যেদিন বের হল কাজের চাপে সেদিন বাড়িতেই ফিরতে পারেননি বাবা। পরদিন রাতে বাড়ি পৌঁছে শুনলেন ছেলে স্কুলের সবার মধ্যে সব থেকে বেশি নম্বর পেয়ে পাশ করেছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। পরদিন সকাল হতেই ফের বাড়ি থেকে দিনমজুরির খোঁজে বেরিয়ে পড়তে হয়েছে বাবা মন্টু সিংহকে। কেননা তা না হলে দুই ছেলেমেয়ের খাবার জুটবে না। বাপনের মা নেই। বাড়িতে রয়েছে বোন নন্দিনী। সে ক্লাস নাইনে পড়ে। তাই ভাইবোন মিলে সকালে রান্না করে। সেদ্ধভাত খেয়ে স্কুলে যেতে হয় তাদের। এটাই রোজকার ছবি।

বাবার কষ্ট দেখে টিউশন নেওয়ার কথাও বলতে পারেনি সে। তারপরেও সব প্রতিকূলতা জয় করে সবকটি বিষয়েই লেটার-সহ ৮৭ শতাংশের বেশি নম্বর পেয়ে মাধ্যমিক পাশ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছে বাপন সিংহ। মালদহের হরিশ্চন্দ্রপুরের তুলসিহাটা হাইস্কুল থেকে এ বার মাধ্যমিক পরীক্ষা দিয়েছিল সে। স্কুলের ২৩৮ জনের মধ্যেও সবার থেকে বেশি নম্বর পেয়ে পাশ করেছে বাপন। তার প্রাপ্ত নম্বর ৬১০। কিন্তু ভাল ফল করলেও কীভাবে তার পড়াশুনা চলবে তা নিয়ে বাবা-মায়ের পাশাপাশি দুশ্চিন্তায় পড়েছে বাপনও। সে বাংলায় ৮১, ইংরেজিতে ৮০, অঙ্কে ৯২, ভৌতবিজ্ঞানে ৯১, জীবনবিজ্ঞানে ৯৪, ইতিহাসে ৮০ ও ভূগোলে ৯১ পেয়েছে।

তুলসিহাটা গ্রামেই বাড়ি বাপনদের। বাড়ি বলতে কাদা দিয়ে গাঁথা ইটের দেওয়ালের উপরে টালির ছাদ। সেই বাড়ি তৈরি করে দিয়েছিলেন তার ঠাকুর্দা! কিন্তু সংস্কারের অভাবে তার জরাজীর্ণ অবস্থা। বাবা মন্টু সিংহ এক সময় সামান্য পুঁজি নিয়ে সাইকেলে গ্রামে গ্রামে ঘুরতেন। বাসিন্দাদের কাছ থেকে এক, দুই কিলোগ্রাম চাল কিনে জোগাড় করে তা বেচে সংসার চালাতেন। কিন্তু দুই ছেলেমেয়ের পড়ার খরচ চালাতে গিয়ে সেই ক্ষুদ্র ব্যবসার টাকাও শেষ। ফলে এখন ভরসা দিনমজুরি। আর বাড়তি রোজগারের জন্য এখন দিনমজুরির টাকা বাঁচিয়ে গ্রামে ঘুরে ঘুরে পাঁচ-দশ কিলোগ্রাম চাল কিনে তা হাটে বিক্রি করতে বসে পড়েন বাবাছেলে।

বাপনরা বিপিএল তালিকাভুক্ত। সেই সুবাদে কিছুদিন আগে বাড়িতে বিদ্যুতের সংযোগ মিলেছে। বাবা বেশিরভাগ দিন বাড়িতে না থাকায় রান্না থেকে শুরু করে সংসারের যাবতীয় কাজ মূলত বাপনকেই সারতে হয়। তার মধ্যেই নিজের চেষ্টাতেই পড়াশুনা চালিয়ে যেতে হয়েছে তাকে। তার স্কুলের প্রধানশিক্ষক হরেন্দ্রনাথ পাল বলেন, ‘‘ও ক্লাসের ফার্স্ট বয় ছিল। অত্যন্ত মেধাবী। পারিবারিক সমস্যা না থাকলে ও আরও ভাল ফল করতে পারত। তবু ও যা করেছে তাতেই আমরা খুশি। ওকে সবরকম সাহায্য করা হবে।’’ বাপন জানায়, ‘‘ইচ্ছে রয়েছে বিজ্ঞান নিয়ে উচ্চমাধ্যমিক পড়ে চিকিত্সক হওয়ার। কিন্তু কী হবে জানি না।’’

bapan singh chachol poor BPL money
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy