কেউ বলছেন বীরেন কুণ্ডুর আমলে দুর্নীতি চরমে উঠেছিল। কেউ আবার বলছেন শহরের ভোল পাল্টে নতুন চেহারা দেওয়ার রূপকার তিনিই।
মত যাই হোক না কেন, কোচবিহার শহরের পুরভোট আবর্তিক হচ্ছে প্রয়াত প্রাক্তন চেয়ারম্যান বীরেনবাবুকে ঘিরেই। দেওয়াল লিখন থেকে শুরু করে পদযাত্রা, ঘরোয়া মিটিং সবেতেই উঠে আসছে বীরেনবাবুর সময়ের কথা। প্রায় পনেরো বছর কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান ছিলেন বীরেনবাবু। বরাবর কোচবিহারে কংগ্রেস নেতা হিসেবে পরিচিত বীরেনবাবু সদলবলে ২০১৩ সালে তৃণমূলে যোগ দেন। চেয়ারম্যান পদে থাকা অবস্থাতেই ২০১৪ সালের অগস্ট মাসে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় তাঁর। তার পরের সাত মাস পুরসভার চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন দীপক ভট্টাচার্য। তবে এই স্বল্প সময়ের কথা ভোটের প্রচারে কোথাও যেন জায়গাই পাচ্ছে না। বার বার উঠে আসছে সেই পনেরো বছরের কথাই।
বাম, বিজেপির দাবি, ওই সময়কালে পুরসভায় একাধিক দুর্নীতির ঘটনা ঘটেছে। কোটি কোটি টাকা তছরুপ করা হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছিল। বিজেপির তরফে শহরে লিফলেট বিলি করা হচ্ছে। তৃণমূলের তরফে দাবি করা হচ্ছে, বীরেনবাবু কর্মবীর। তাঁর আমলে শহরের উন্নয়ন হয়েছে। রাস্তা থেকে নিকাশি সবের উন্নতি হয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, বস্তি উন্নয়ন প্রকল্পে ইট কেনার জন্য তিন কোটি ৫৬ লক্ষ টাকা আগাম একটি সংস্থাকে দিয়ে দেওয়া হয়। আদৌও কটা ইট পাওয়া গিয়েছে সে সংক্রান্ত কোনও তথ্য পুরসভা দিতে পারেনি। পাওয়ার হাউস থেকে মিলিটারি ব্যারাক পর্যন্ত নিকাশি নালা তৈরির কথা বলে ৬২ লক্ষ টাকা তোলা হয়েছে। অথচ সেখানে কোনও নিকাশি নালা নেই বলে অভিযোগ। পুরসভায় অতিরিক্ত কর্মী দেখিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলা হত বলেও দাবি বিরোধীদের। আরও অভিযোগ, পুরসভায় স্থায়ী, অস্থায়ী মিলিয়ে কর্মীসংখ্যা ৮৩৩ জন। সরকারি অনুমোদন রয়েছে ৪৩৩ জনের। বাকি কর্মীরা কোথায় কাজ করেন তা পরিষ্কার নয়।
বিরোধীদের দাবি, একটি নার্সিংহোম-সহ বেশ কিছু বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের বেতন দেওয়া হতো পুরসভা থেকে। পুরসভা কাজের জন্য দুটি এজেন্সি নিয়োগ করেছে। তাঁদের নামে প্রতি মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা তোলা হত। কিন্তু কোথায় কাজ হচ্ছে তা কেউ জানে না। ভাঙারপাড়ে একটি ব্যাক্তিগত কাজে ২ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা শ্রমিকদের বিল দেওয়া হয়েছে। ওই বিষয়গুলি তুলে ধরা হচ্ছে ভোটে।
পুরসভার বিদায়ী বিরোধী দলনেতা মহানন্দা সাহা দাবি করেন, গত দুই বছরে পুরসভায় অ্যাকাউন্টস কমিটির কোনও বৈঠক হয়নি। সে কারণেই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তাঁরা হাতে পাননি। তিনি বলেন, “কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পরে আমরা দেখেছি বহু টাকার দুর্নীতি হয়েছে। বহু টাকার কোনও হিসেব নেই। বর্তমান চেয়ারম্যানকের কাছে ঘটনার তদন্ত দাবি করা হয়। আদতে কোনও কাজ ” বিজেপির কোচবিহার জেলার সাধারণ সম্পাদক তথা কোচবিহার পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বিজেপি প্রার্থী নিখিল রঞ্জন দে বলেন, “গত পনেরো বছরের শাসনকালে পুরসভায় লুঠ হয়েছে। জল প্রকল্পের পাইপ কেনার নামে টাকা চুরি হয়েছে। এখনও ওই প্রকল্পের কাজ শেষ হয়নি। মানুষ জলকষ্টে রয়েছেন। সে সব কথা আমরা তুলে ধরছি।”
বীরেনবাবু না থাকলেও এ বারে পুরসভা নির্বাচনে তাঁর ছেলে শুভজিৎবাবু ১১ নম্বর থেকে, বীরেনবাবুর স্ত্রী রেবা দেবী ১২ নম্বর থেকে তৃণমূলের হয়ে লড়ছেন। এ ছাড়াও তাঁর কাছের লোক বলে পরিচিত ছিলেন এমন কয়েকজনও ভোট লড়াইয়ে রয়েছেন। তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ যে ওয়ার্ডে প্রচারে যাচ্ছেন ঘুরে ফিরে আনছেন বীরেনবাবুর নাম।
বিরোধীদের অভিযোগকে আমল না দিয়ে তাঁর পাল্টা দাবি, “শহরের মানুষ জানেন বীরেনবাবু কী কাজ করেছেন। শহরের রাস্তা, নিকাশি থেকে শুরু দৈনন্দিন পরিষেবা পাল্টে দিয়েছেন তিনি। মানুষের বিপদে সবসময় পাশে থাকতেন। তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে কোনও লাভ হবে না।”
বামেদের কটাক্ষ করেছেন বিদায়ী চেয়ারম্যান দীপক ভট্টাচার্যও। তিনি বলেন, “বামেরা বসন্তের কোকিলের মতো। ভোটের সময় এমন সব অভিযোগ তুলছেন। যে সময় দুর্নীতির কথা বলা হচ্ছে সে সময় তো বামেরা বিরোধী আসনে ছিলেন। তখন কথা বলেননি কেন?”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy