Advertisement
০৫ মে ২০২৪
দাদার টক্করে ছোটভাই

রক্ষণ ভেঙে গোল পাবেন কি এ বার

বামেদের প্রবল ডিফেন্সকে ভাঙতে শিলিগুড়ির ভোটের মাঠে এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফরওয়ার্ড ভাইচুং ভুটিয়া! লোকসভাতেও দার্জিলিং আসনে ভাইচুংকে প্রার্থী করেছিলেন দলনেত্রী। সে বার পাহাড় সমতল মিলিয়ে ভাইচুংকে হারতে হয়েছিল প্রায় ২ লক্ষ ভোটে। এ বার ভাইচুং (যার আক্ষরিক অর্থ ছোটভাই) শুধু শিলিগুড়ির সমতলে নেমে এসে একদা তাঁর ঘনিষ্ঠ ‘অশোকদাকে’ কেমন টক্কর দেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে দলের অন্দরেই।

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৫ মার্চ ২০১৬ ০২:২৭
Share: Save:

বামেদের প্রবল ডিফেন্সকে ভাঙতে শিলিগুড়ির ভোটের মাঠে এ বার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ফরওয়ার্ড ভাইচুং ভুটিয়া! লোকসভাতেও দার্জিলিং আসনে ভাইচুংকে প্রার্থী করেছিলেন দলনেত্রী। সে বার পাহাড় সমতল মিলিয়ে ভাইচুংকে হারতে হয়েছিল প্রায় ২ লক্ষ ভোটে। এ বার ভাইচুং (যার আক্ষরিক অর্থ ছোটভাই) শুধু শিলিগুড়ির সমতলে নেমে এসে একদা তাঁর ঘনিষ্ঠ ‘অশোকদাকে’ কেমন টক্কর দেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে দলের অন্দরেই।

২০১১ সালে এই আসনেই অশোক ভট্টাচার্যকে হারিয়েছিলেন রুদ্রনাথ ভট্টাচার্য। এসজেডিএ-র দুর্নীতির ঠেলায় এ বার তাঁকে সরতে হয়েছে বলে মনে করছেন তৃণমূলেরই একাংশই। পুরসভার ৩৩টি ওয়ার্ড নিয়ে শিলিগুড়ি বিধানসভা। দলের অন্দরের খবর, পরিবর্তনের হাওয়ার ২০১১ সালের তুলনায় সিপিএমের অশোক ভট্টাচার্যরা এখন অনেকটাই ‘শক্তিশালী’। গত এক বছরের পুরসভার, পঞ্চায়েত ভোটে বামেদের পরপর জয় তৃণমূলকে অনেকটাই ব্যাকফুটে ঠেলেছে। অশোকবাবু এখন খোদ শহরের মেয়র। তিনি প্রার্থী হলে লড়াইটা যে ভাইচুং-এর জন্য বেশ কঠিন হবে তা বলাই বাহুল্য।

তার উপরে বিষফোঁড়ার মতো রয়েছে এসজেডিএ দুর্নীতি। আবার একাধিক টিকিটের দাবিদারকে সরিয়ে অনেকটাই অরাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ভাইচুংকে দিয়ে সমতলের ভোট ব্যাঙ্ক কী সামলানো যাবে, এই প্রশ্ন চিহ্ন থেকে যাচ্ছে শাসক দলের নেতাদের মনেই। এ দিন সন্ধ্যা থেকে শাসক দলের অফিস লাগোয়া হিলকার্ট রোডের প্রতিটি আড্ডায় উঠে এসেই এমনই সংশয়ের কথাই।

প্রার্থী ভাইচুং অবশ্য বলেছেন, ‘‘ফুটবলে কোচের কথায় ফরওয়ার্ড বা মিডফিল্ডে নানা সময়ে খেলতে হয়েছে। এখানেও মমতাদি আমার কোচ। আমি কী করব তা তো উনিই ঠিক করে দেবেন।’’ তিনি বলেন, ‘‘অশোকবাবু শিলিগুড়ি থেকে প্রার্থী হতে পারেন বলে শুনেছি। উনি আমার বড় দাদার মতো। ভোটে কোনও ব্যক্তিগত কুৎসা বা প্রচার করব না। পুরোটাই রাজনৈতিক লড়াই হবে। রাজ্য সরকারের কর্মকাণ্ডকে সামনে রেখে জেতার জন্য লড়াই করব।’’

দলের নেতারা মনে করছেন, অশোকবাবুর এক সময়কার ‘ঘনিষ্ঠ’ এবং বামেদের তারকা প্রচারক ভাইচুংকে ময়দানে নামিয়ে পরিস্থিতি মোকাবিলার চেষ্টা করেছেন তৃণমূল নেত্রী। অশোকবাবু অবশ্য ভাইচুং অস্বস্তি এড়িয়ে তৃণমূলকে হারানোই লক্ষ্য বলে মনে জানিয়েছেন। বিকেলে শাসক দলের প্রার্থীর নাম ঘোষণা হতেই সিপিএম অফিসের সামনে থেকে ছাত্র, যুবরা তৃণমূলকে হঠানোর ডাক দিয়ে মিছিল নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়েন। অশোকবাবু বলেন, ‘‘ওঁদের কে দাঁড়াবে তাতে আমাদের কী! এতো রাজনৈতিক লড়াই। তৃণমূলকে যে কোনও মূল্যে হারাতে হবে। নিবার্চন কমিশন যেভাবে ভোট করানোর কথা বলছে তা হলে জয় নিশ্চিত।’’

২০১৪ সালে লোকসভায় বিজেপির সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়ার কাছে ভাইচুং ভুটিয়া হেরেছিলেন প্রায় ১ লক্ষ ৯৭ হাজারের কিছু বেশি ভোটে। পাহাড়ের রাজনৈতিক সমীকরণ, সমতল শিলিগুড়ি ফুটবলের জনপ্রিয়তা সব মিলিয়ে ভাইচুংকে সে বার প্রার্থী করা হয়। তাও লোকসভায় ৭টি বিধানসভা এলাকার মধ্যে ৬টিতেই পিছিয়ে পড়ে তৃণমূল।

এ বার সেখানে পুর এলাকার ভোট। আদতে সিকিমের বাসিন্দা ভাইচুং-এর পরিচিতি শিলিগুড়িতে রয়েছে। তাঁর পেট্রোল পাম্পের অংশীদারি ব্যবসাও রয়েছে শহরে। সেই পরিচিত মুখকে সামনে রেখেই অশোকবাবুর ‘শিলিগুড়ি মডেলে’র টক্কর দেওয়ার চেষ্টা করছে তৃণমূল।

দলের জেলার শীর্ষ কয়েকজন নেতা জানান, ভাইচুংকে নিয়ে দলের অন্দরেই অস্বস্তিও রয়েছে। জেলার কার্যকরী সভাপতি থাকাকালীন বৈঠকে না আসা, নিজের মতো ভোটের প্রচার করা, স্থানীয় নেতাদের বিশেষ গুরুত্ব না দেওয়ার অনেক কথা শোনা গিয়েছে। ২০১১ সালের সিপিএম আর নেই। পাহাড়ের ভোট নেই। যোগ রয়েছে এসজেডিএ। তাই কী হবে কে জানে! সেবার তো পরিবর্তনের হাওয়া সত্ত্বেও অশোকবাবু মাত্র ৫০০৬ ভোটে হেরেছিলেন। টিকিট না পেলেও বিদায়ী বিধায়ক রুদ্রবাবু বলেছেন, ‘‘ভাইচুং জনপ্রিয় প্রার্থী। আমরা শিলিগুড়িতে জিতব আশা করি।’’

ভাইচুং প্রার্থী হওয়ায় শহরের ক্লাবগুলির মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গিয়েছে। খেলোয়াড় হিসাবে ভাইচুংয়ের জুড়ি না থাকলেও রাজনৈতিক ময়দানে তাঁর সাফল্য নিয়ে অনেকেই সংশয় প্রকাশ করেছেন। আবার অনেকে মনে করছেন মাঠে যে ভাবে বারবার তাঁকে ঘুরে দাঁড়াতে দেখা গিয়েছে, রাজনীতির ময়দানেও তা দেখা যাবে।

শিলিগুড়ির শহরের রথখোলা স্পোর্টিং ক্লাবের কর্মকর্তা তথা তৃণমূল নেতা সোনা চক্রবর্তী বলেন, ‘‘গত বারও আমাদের প্রার্থী জিতেছে। এ বারও প্রার্থীকে আমরা জেতাব।’’ অগ্রগামী সঙ্ঘের অন্যতম কর্মকর্তা জয়ন্ত ভৌমিক বলেন, ‘‘খেলা এবং রাজনীতি দুটি আলাদা জগৎ। রাজনীতিতে মানুষ কী ভাবে তাঁকে নেবেন সেটাই দেখার।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

baichung bhutia left election vote siliguri
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE