Advertisement
০৩ মে ২০২৪
কে বাড়ির লোক, তা চেনা দায়

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ‘ভিজিটিং আওয়ার্স’ যেন হট্টমেলা

ভাগাভাগি: জায়গার অভাবে একই শয্যায় সদ্যোজাতকে নিয়ে দুই প্রসূতি। সেখানে বসেই চলছে গপ্পো। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

ভাগাভাগি: জায়গার অভাবে একই শয্যায় সদ্যোজাতকে নিয়ে দুই প্রসূতি। সেখানে বসেই চলছে গপ্পো। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে। ছবি: বিশ্বরূপ বসাক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৭ ০২:২৭
Share: Save:

নিয়ম-নীতি মানেন না কেউই। ‘ভিজিটিং আওয়ার্স’ মানেই প্রসূতি বিভাগে হট্টমেলা। কয়েকশো লোক ঢুকে পড়েছেন ওয়ার্ডের মধ্যে। তার মধ্যে কে রোগীর আত্মীয়, কে অন্য মতলবে ঢুকছেন, তা বোঝার উপায় নেই।

কলকাতার মেডিক্যাল কলেজে শিশু চুরির ঘটনার পরে হাসপাতালের নিরাপত্তা নিয়ে তাই উদ্বিগ্ন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের কর্মীরা। মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, এক জন রোগী পিছু ৬ থেকে 8 জনও ঢুকে পড়েন ওয়ার্ডে। তাই এখন প্রসূতি মায়েদের তাঁরা বলেই দিচ্ছেন, ‘‘রোগী দেখতে বাড়ির লোকদের আসার সময় হলে বাচ্চাকে নিজের কাছে রাখবেন। তাকে কাছ ছাড়া করবেন না।’’

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষই জানিয়েছেন, নিয়ম মাফিক রোগীর পরিবারের এক থেকে দু’জন ভিজিটিং কার্ড নিয়ে ভিতরে যেতে পারবে। বাস্তব হল, কার্ড ছাড়াই দলে দলে লোক ঢোকেন। যা নিয়ে উদ্বিগ্ন পুলিশও। রয়েছেন অন্তত ১৫ জন আয়া। তাঁদের অনেকের কোলেও ঘুরছে সদ্যোজাতরা।

কিন্তু তা কতটা নিরাপদ, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কেন না আয়ারা হাসপাতালের কর্মী নন। রোগীর পরিবারের লোক পরিচয়ই দিয়ে থাকেন তাঁরা। জরুরি বৈঠক করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দিয়েছেন, ওয়ার্ডে স্বাস্থ্যকর্মী, চিকিৎসক, নার্স সকলকেই গলায় পরিচয়পত্র ঝোলাতে হবে। উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের সুপার মৈত্রেয়ী কর বলেন, ‘‘পরিচয়পত্র গলায় ঝোলান বাধ্যতামূলক। দুই এক দিনের মধ্যেই নোটিস করে তা জানিয়ে দেওয়া হবে।’’ আয়াদের রাখতে হলে এ বার থেকে রোগীর পরিবারকে লিখিত বয়ান দিতে হবে বলেও তিনি
জানিয়ে দেন।

বহিরাগত: ভিড়ে ঠাসা ওয়ার্ডে অবাধ ঘোরাফেরা বেড়ালেরও। —নিজস্ব চিত্র।

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের ক্যাম্পাসটি বেশ বড়। আসেপাশে অনেকটা ফাঁকা জায়গাও রয়েছে। এত বড় এলাকাটি কড়া নিরাপত্তার বাঁধনে বেঁধে ফেলা বেশ শক্ত। স্থানীয় বাসিন্দাদের মত, এই এলাকায় রোজই বাইরে থেকে অনেক লোক আসেন। তাঁদের কে রোগী বা তাঁর পরিজন, তা বোঝা মুশকিল। নিরাপত্তা নিয়ে তাঁরাও তাই উদ্বিগ্ন। তাঁদের দাবি, এই এলাকায় রাস্তা, দোকানগুলিতেও কড়া নজরদারি প্রয়োজন। এলাকায় অনেকেই বাড়ি ভাড়া দেন। সেখানেও যাঁকে ভাড়া দেওয়া হচ্ছে, তাঁর সম্বন্ধে সব তথ্য রাখা দরকার।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে শিশু চুরির ঘটনার পরে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালে প্রসূতি বিভাগ, শিশু বিভাগ, সিক নিউ বর্ন কেয়ার ইউনিটের মতো বিভাগগুলোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

নবান্ন থেকে নির্দেশ পেয়ে বৃহস্পতিবার নড়েচড়ে বসেছে পুলিশ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সকলেই। এ দিন পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে প্রসূতি, শিশু বিভাগ-সহ কোথায় কোথায় ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো দরকার, তা খতিয়ে দেখেন উত্তরবঙ্গ মেডিক্যালের সুপার, তাঁর দফতরের কর্মী ও নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিরা। মাস কয়েক আগে গোটা ৩০টি ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানো হলেও, তা প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। সুপার জানান, আরও শতাধিক ক্লোজড সার্কিট ক্যামেরা বসানোর প্রয়োজন রয়েছে। প্রসূতি বিভাগ, শিশু বিভাগ-সহ সমস্ত ওয়ার্ডগুলোর নিরাপত্তার জন্যই তা বসানো হবে। নিরাপত্তার বিষয়টি সামনে রেখেই শনিবার স্বাস্থ্য দফতরের বৈঠকে ডাকা হয়েছে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

North Bengal Medical College Visiting Hours
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE