Advertisement
E-Paper

জীবন ক্যানভাসে দুর্গা আঁকল মেয়েরা

কপালে ত্রিনয়ন, হাতে ত্রিশূলও। কিন্তু পড়নে নেহাতই আটপৌড়ে ছাপা শাড়ি। দশভুজা নয়। পদতলে অসুরও নেই। দু’হাতে যে ত্রিশূল ধরা তার একদিক ভোঁতা। সারা গায়ে জড়িয়ে রয়েছে মাকড়সার জালের মতো কিছু ।

অনির্বাণ রায়

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০১:৪৩

কপালে ত্রিনয়ন, হাতে ত্রিশূলও। কিন্তু পড়নে নেহাতই আটপৌড়ে ছাপা শাড়ি।

দশভুজা নয়। পদতলে অসুরও নেই। দু’হাতে যে ত্রিশূল ধরা তার একদিক ভোঁতা। সারা গায়ে জড়িয়ে রয়েছে মাকড়সার জালের মতো কিছু । সেই জাল সরিয়ে যেন বেরিয়ে আসার চেষ্টা করছেন মাথায় মুকুট পরা সেই দেবী। ক্যানভাসে আঁকা এই ছবির সঙ্গে দেবী দুর্গার প্রচলিত রূপের কোনও মিল নেই। যদিও, তিতলি, সাহানা, নাসিফারা পুজোর ক’দিন সেই দুর্গার ছবির সামনেই ফুল রাখবে, ধূপ জ্বেলে দেবে। ওরা সবাই জলপাইগুড়ির অনুভব হোমের আবাসিক।

প্রতি বছর নিয়ম মেনে পুজোর সময় আবাসিকদের একদিন বা দু’দিন শহরের বিভিন্ন মণ্ডপে পুজো দেখতে নিয়ে যাওয়া হয়। সন্ধেবেলায় যখন শহর মুড়ে যায় আলোর মালায়, মণ্ডপে ঢল নামে দর্শনার্থীদের, ঢাকের বোলে তুঙ্গে ওঠে উৎসবের মেজাজ, তখনই ওদের ফিরে আসতে হয় ক্লাব রোডের হোমে। হোমের জানালা দিয়ে দেখা যায় আকাশের গায়ে আলোর ছটা, দূর থেকে ভেসে আসে ঢাকের শব্দ।

তিতলির মনে পড়ে যায়, মায়ের কথা। মায়ের মুখটা ভাল করে মনে পড়ে না। সেই কোন ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছিল। পরিবারের এক মদ্যপ সদস্যের অত্যাচারে এরপর বাড়ি ছেড়ে পালিয়ে গিয়েছিল। ঘুরে ঘুরে ঠাঁই হয় এই হোমে।

পুজোর দিনগুলিতে সাহানার বেশি করে মনে পড়ে ভাইয়ের কথা। পরিবারের কয়েকজনই কাজের লোভ দেখিয়ে এক পড়শির সঙ্গে দিল্লি রওনা করিয়ে দেয়। সেখানে তাকে বিক্রি করে দেওয়া হয়। তারপরে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের হাত ঘুরে হোমে চলে আসা। বাড়ি ফিরতে চায়নি সাহানা। তবে উৎসবের দিনগুলিতে বেশি করে মনে পড়ে ছোট ভাইয়ের কথা। চোখে জল আসে।

তাই ওদের উৎসবকে আরও একটু রঙীন করে তুলতে উদ্যোগী হয়েছে হোম কর্তৃপক্ষ।

হোমের কর্ণধার দীপশ্রী রায় বলেন, ‘‘সারা বছরই মেয়েগুলি বড্ড কষ্টে থাকে। উৎসবের দিনগুলিতে সেই কষ্ট যেন আরও বেড়ে যায়। সে কারণেই আমরাও উৎসবের আয়োজন করেছি। দুর্গাপুজো হয়ত করা যাবে না, তবে দেবীর ছবি রেখে উৎসবের আবহ তৈরি করে আড্ডা, ভালমন্দ খাওয়াদাওয়া সবেরই আয়োজন হয়েছে।’’ সেই ছবি আঁকতে গিয়েই দেবীকে জালে জড়িয়ে ফেলেছে হোমের মেয়েরা।

তিতলি-সাহানারা ছবি এঁকেছে। সামিল হয়েছে দীপশ্রী, দেবীরাও। হোমের মেয়েদের আঁকা দূর্গাও ওঁদের মতোই নানা বাধায় জড়িয়ে। দীপশ্রীদেবীর কথায়, ‘‘শুধু জালে জড়ানো দেখলে হবে না, ত্রিশূল-হাতে নিয়ে জাল কেটে বেরিয়ে আসছেন দেবী। মেয়েরাও কিন্তু মূলস্রোতে ফেরার নিরন্তর চেষ্টা চালাচ্ছে।’’

জালের প্রতীকী নামকরণও করেছে মেয়েরা। কোনও জালে লেখা রয়েছে ভ্রুণহত্যা, কোনটায় অশিক্ষা, ধর্ষণ, নারীনিগ্রহ, কুসংস্কার। ছবির নীচে লেখা ‘‘বেড়াজাল ভেঙে বেরোতেই হবে/দুর্গা তোদের কে, /নিজেকেই নিজে রক্ষা করব/সময় এসেছে।’’

ছকভাঙা দেবীর অবয়বে নিজেদেরই যেন খুঁজ নিচ্ছে অনুভবের এই মেয়েরা।

Durga puja Children home
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy