ফের ডেঙ্গিতে মৃত্যুর অভিযোগ শিলিগুড়িতে। শনিবার সকালে মাটিগাড়ার উপনগরী এলাকার একটি নার্সিংহোমে মারা যান রাজেশ পাল (৪২) নামে ওই ব্যক্তি। বাড়ি পুরসভার ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডের শ্রীমা সরণিতে। জেলা স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র জানিয়েছে, ম্যাক এলাইজা টেস্টের রিপোর্টে ওই ব্যক্তির শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। তবে তাঁর মৃত্যু কারণ অন্য।
ডেঙ্গিতে তাঁর মৃত্যু হয়েছে কি না সে ব্যাপারে স্বাস্থ্য দফতরের তরফে পুর কর্তৃপক্ষকে কিছু জানানো হয়নি বলে মেয়র অশোক ভট্টাচার্য জানিয়েছেন। নার্সিংহোম থেকে মৃত্যুর শংসাপত্রে কারণ লেখা হয়েছে মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক অসিত বিশ্বাসকে বারবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তিনি ফোন ধরেননি। মোবাইল ফোনে এসএমএস করে জানতে চাওয়া হলেও কোনও উত্তর মেলেনি। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, গত রবিবার জ্বরে আক্রান্ত রাজেশবাবুর এনএসওয়ান রক্ত পরীক্ষা রিপোর্টে ডেঙ্গির জীবাণু ধরা পড়ায় তাঁকে কলেজপাড়ার একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। বুধবার দুপুরে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলে তাঁকে মাটিগাড়ার নার্সিংহোমে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে সিটি স্ক্যান পরীক্ষায় মাথায় রক্ত জমে রয়েছে বলে জানা যায়। ওই দিন এবং তারপর দিন দু’টি অস্ত্রোপচারও হয়। শনিবার ভোরে তিনি মারা যান।
এ দিন জেলা স্বাস্থ্য দফতরের বিরুদ্ধে ডেঙ্গির তথ্য গোপনের অভিযোগ তুলেছেন মেয়র। তাঁর অভিযোগ, গত শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্য দফতরের তরফে একটি রিপোর্ট পাঠিয়ে জানানো হয় ডেঙ্গি আক্রান্তের সংখ্যা ১২৫ থেকে বেড়ে হয়েছে ১৫০ জন। তবে এই সমস্ত রোগীর পরীক্ষা হয়েছে ৯ থেকে ১৯ নভেম্বরের মধ্যে। সে কারণেই তথ্য গোপনের প্রশ্ন তুলেছেন মেয়র। তিনি বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বলছেন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রিপোর্ট মিলবে। অথচ ৯ নভেম্বর এক জনের রক্ত পরীক্ষা হলে পুরসভাকে রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে ৮ দিন পরে। ১৭ নভেম্বর রক্ত সংগ্রহ করে রিপোর্ট দেওয়া হচ্ছে ২৭ নভেম্বর। এটা কি তথ্য গোপন নয়? যখন রোগীরা সেরে উঠছে তার পর জানানো হচ্ছে। পুরসভার তরফে সংশ্লিষ্ট এলাকায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতেও দেরি হচ্ছে।’’ তাঁর অভিযোগ, ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়ে ক্ষুদিরামপল্লির বাসিন্দা অমিত ছেত্রী মারা যাওয়ার পর তাঁর রক্ত পরীক্ষা রিপোর্ট দিয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।
শিলিগুড়িতে ডেঙ্গি ‘মহামারী’র আকার নিয়েছে বলে পর্যটন মন্ত্রী গৌতম দেব জানানোয় অসন্তুষ্ট মেয়র। তিনি বলেন, ‘‘রোগ নিয়ে রাজনীতি করা হচ্ছে। কলকাতা, শ্রীরামপুর, সল্টলেক, বালুরঘাটে ডেঙ্গি ‘মহামারী’ কি না বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর কাছে জানতে চাইব।’’ গত ৩০ নভেম্বর বিরোধী দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে বৈঠকে পর্যটন মন্ত্রী, পুর কমিশনার, পুর সচিবকে ডাকায় তা নিয়েও মেয়র প্রশ্ন তোলেন। এর পর থেকে তাঁর অনুমতি না পেলে পুর কমিশনার এবং পুর সচিবদের এ ধরনের বৈঠকে যেতে নিষেধ করেছেন। গৌতমবাবুর শুধু ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ডেঙ্গি পরিস্থিতি দেখতে যাওয়া নিয়ে মেয়রের অভিযোগ, ‘‘ওই ওয়ার্ডে উপনির্বাচন বলে মন্ত্রী শুধু সেখানে গিয়েছেন।’’ ওই দিন ওয়ার্ডে আবর্জনা তুলতে পুরসভার ট্রাক গেলে মন্ত্রীকে দেখাবেন বলে তাঁর লোকেরা জঞ্জাল তুলতে দেয়নি বলে অভিযোগ।
এ দিন সন্ধ্যায় মৃত রাজেশ পালের বাড়িয়ে যান পর্যটন মন্ত্রী। দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে আজ রবিবার জরুরি বৈঠক ডেকেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ডেঙ্গি পরিস্থিতি মোকাবিলায় পুরসভার ব্যর্থতা নিয়ে তীব্র আন্দোলন হবে।’’ তাঁর দাবি, ‘‘এই মেয়র ঔদ্ধত্যপূর্ণ, দাম্ভিক, স্বৈরতান্ত্রিক। পুর কমিশনাররা বৈঠকে যাওয়ায় তিনি ধমকাচ্ছেন। এর ফল ভাল হবে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy