পুরসভার সেমিনারে খাওয়ার লাইন।—নিজস্ব চিত্র।
পুরসভার জাতীয় স্তরের সেমিনারের আয়োজনের খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলল বিরোধীরা। তাদের অভিযোগ, বোর্ড মিটিঙে কোনও আলোচনা না করেই সেমিনারের আয়োজনে দেদার খরচ করা হয়েছে।
সংবিধান মেনে স্থানীয় স্বায়ত্তশাসিত সংস্থাগুলির রাজ্য সরকারের থেকে প্রাপ্য অর্থ পাওয়া উচিত—এই বিষয়ে শিলিগুড়ি পুরসভার তরফে রবিবার জাতীয় স্তরের সেমিনারের আয়োজন করা হয়। দার্জিলিং মোড়ের একটি অভিজাত হোটেলে সেমিনারের আয়োজন হয়। এই সেমিনারের খরচ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে বিরোধীরা। পুরসভা সূত্রের খবর, সেমিনারের আয়োজনে প্রথমে বরাদ্দ হয়েছিল ১ লক্ষ টাকা। সেমিনারে দূরদূরান্ত থেকে জনপ্রতিনিধিরা আসবেন বলে খাওয়ার আয়োজনও রাখা হয়। প্রথমে পুরসভা জানিয়েছিল, খাওয়ার খরচ মেটাবে এক ‘স্পনসর’। পরে সেমিনারের ‘স্পনসর’ নিয়ে পুরসভার বিরোধী দল তৃণমূলের তরফে প্রশ্ন তোলায় সিদ্ধান্ত বদলে ফেলে পুর কর্তৃপক্ষ। স্থির করে পুরসভা নিজের খরচেই সেমিনার করবে। তবু খরচ-বির্তক পিছু ছাড়ছে না পুরসভার। স্পনসর না নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরে, সেমিনারের জন্য বরাদ্দ খরচ এক লক্ষ থেকে বাড়িয়ে তিন লক্ষ করা হয়েছে। যদিও সেমিনারের আয়োজনের বহর দেখে বিরোধীদের দাবি, খরচের অঙ্ক তিন লক্ষও ছাড়িয়ে যাবে।
শিলিগুড়ির মেয়র অশোক ভট্টাচার্যের কথায়, ‘‘কোনও স্পনসর রাখা হয়নি। পুরসভা নিজের থেকেই টাকা খরচ করেছে। তিন লাখের মতো খরচ হবে। অনেক দূর থেকে অতিথিরা সেমিনার শুনতে এসেছিলেন, তাই কিছু খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল। আমরা চেয়েছি, শিলিগুড়ি থেকেই স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার সাংবিধানিক অধিকার সুনিশ্চিত করার বির্তক বা আলোচনা শুরু হোক। রাজ্য বা দেশের নিরিখে এটা এখন বাস্তব প্রয়োজন। সেমিনারে আসা সকলেই সহমত হয়ে পুরসভার উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন।’’ এ দিনের সেমিনারে উপস্থিত প্রাক্তন কেন্দ্রীয় নগরোন্নোয়ন মন্ত্রী জয়রাম রমেশ, প্রাক্তন বিচারপতি সমরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতার প্রাক্তন মেয়র বিকাশ ভট্টাচার্য সকলেই অশোকবাবুর সেমিনারের উদ্যোগের প্রশংসা করেন।
যদিও, তৃণমূলের বিরোধী দলনেতা নান্টু পালের কটাক্ষ, ‘‘অশোকবাবু মেয়র হয়ে ব্যয় সঙ্কোচনের কথা বলেছিলেন। অথচ মেয়র হয়ে একটি সেমিনার করেই তিন লাখের বেশি টাকা উড়িয়ে দিলেন। সেমিনার হোক, কিন্তু এমন এলাহি আয়োজনের কোনও প্রয়োজন ছিল কি?’’
শিলিগুড়ির অভিজাত হোটেলের দুটি হলঘর ভাড়া করেছিল পুরসভা। একতলার ‘ইম্পিরিয়াল’ হলে ছিল খাবারের ব্যবস্থা। খাবারের আয়োজন ছিল বুফেতে। কর্ন স্যুপ, দু’রকমের স্যালাড দিয়ে দিয়ে বুফে শুরু হয়। মূল মেনুতে ছিল বাটার-নান, জিরা রাইস, দু’রকেমর ডাল, দই-আলু, মিক্সড সবজি, রুই মাছের কালিয়া, চিকেন দোপেঁয়াজা। শেষ পাতে ছিল ফ্রুট কাস্টার্ড এবং গরম পান্তুয়া। লাঞ্চ শেষ হওয়ার পরে যারা এসেছেন, তাদের জন্য প্যাকেটে চিকেন বিরিয়ানির ব্যবস্থা ছিল। বিরোধীদের দাবি, মেনুতে কিছু কম হলেও কোনও ক্ষতি ছিল না। সেমিনারের আয়োজন ছিল দোতলার সভা ঘরে। পুরকর্মীদের নিয়ে আসা-যাওয়ার জন্য দু’টি বাস ভাড়া করা হয়েছিল। ভাড়া করা হয়েছিল বেশ কয়েকটি ছোট গাড়িও। বিরোধী দল নেতা নান্টুবাবুর অভিযোগ, ‘‘সরকারি টাকায় এটা বামেদের বিজয় উৎসব হল। এই খরচের বোঝা মেটাতে শহরের বাসিন্দাদের ওপরেই কর বসবে।’’
পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, সেমিনারের জন্য প্রথমে দীনবন্ধু মঞ্চ চাওয়া হয়েছিল। প্রথমে সেই হল দেওয়া হবে বলে পুরসভাকে জানানো হলেও, পরে বাতিল করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মেয়র অশোকবাবুর কথায়, ‘‘দীনবন্ধু মঞ্চ না পাওয়াতেই বাধ্য হয়েই হোটেলে সেমিনার করতে হয়েছে।’’ সেমিনারে এসেছিলেন কংগ্রেস নেতা অরুণাভ ঘোষ। তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘রাজ্য সরকার প্রতি পদে পদে দলতন্ত্র করছে। এই দলতন্ত্রের জন্যই বিরোধীদের কোথাও হল দিচ্ছে না, কোথাও আবার সভার অনুমতি দেওয়া হয় না।’’
যদিও, অভিযোগ মানতে চাননি উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। তাঁর পাল্টা যুক্তি, ‘‘দীনবন্ধু মঞ্চ রাজনৈতিক কাজে ব্যবহার করতে দেওয়া হয় না। গত সপ্তাহে টিএমসিপিকেও দেওয়া হয়নি। কিন্তু এক বাম নেতার স্মরণসভার জন্য প্রথা ভেঙে মঞ্চ ব্যবহার করতে দেওয়া হয়েছিল। সেই সৌজন্য নিশ্চয়ই ওঁরা ভুলে যাননি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy