Advertisement
০৮ মে ২০২৪

রাসমেলায় জিলিপি বনাম তন্দুরি চিকেনের লড়াই তুঙ্গে

ক্লোজ্‌ড সার্কিট ক্যামেরা আছে। তাতেও যেন কুছ পরোয়া নেই। কেউ গরম তেলে চুবিয়ে তুলছে তো কেউ গনগনে আগুনে ‘ফ্রাই’ করছে। একপক্ষ, জিলিপি অপরপক্ষ, ফাস্ট ফুড। দুইয়ের লড়াইয়ে এখন তপ্ত কোচবিহারের রাসমেলা।

ভোজনরসিক: রাসমেলায় জিলিপির স্বাদ নিচ্ছেন জেলাশাসক কৌশিক সাহা এবং জেলা প্রশাসনের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র

ভোজনরসিক: রাসমেলায় জিলিপির স্বাদ নিচ্ছেন জেলাশাসক কৌশিক সাহা এবং জেলা প্রশাসনের কর্তারা। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৯ নভেম্বর ২০১৮ ০৫:২৭
Share: Save:

সন্ধে হলেই যেন যুদ্ধ।

পুলিশ আছে। ক্লোজ্‌ড সার্কিট ক্যামেরা আছে। তাতেও যেন কুছ পরোয়া নেই। কেউ গরম তেলে চুবিয়ে তুলছে তো কেউ গনগনে আগুনে ‘ফ্রাই’ করছে। একপক্ষ, জিলিপি অপরপক্ষ, ফাস্ট ফুড। দুইয়ের লড়াইয়ে এখন তপ্ত কোচবিহারের রাসমেলা।

‘ফুড জোনে’ গেলেই চোখে পড়বে সেই দৃশ্য। খাদ্যরসিকদের অনেকে অবশ্য সময়ের হেরফেরে বা দিনের হেরফেরে হাজির হয়ে যাচ্ছেন দুই টেবিলেই। খোদ কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহা দুই স্টলেই ঘুরেছেন। একদিন জিলিপি কিনেছেন, আর একদিন ফ্রায়েড চিকেন। তাঁর কথায়, “দুটো দু’রকম। দুটোই আমার কাছে ভাল লেগেছে। মেলায় এবার শুরু থেকেই ভিড় হচ্ছে। তাই দুই জায়গাতেই ভিড় হচ্ছে।”

একটা সময়, আজ থেকে দশ, পনেরো-কুড়ি বা তারও আগে রাসমেলার দখল ছিল শুধু জিলিপির। তার সঙ্গে মোগলাই, পোলাও বা ঢাকাই পরোটার মতো কিছু আইটেম থাকলেও সেসব জিলিপির চেয়ে পিছিয়ে থাকত অনেকটাই। গত কয়েক বছরে সেই খাবারের দুনিয়ায় এসেছে অনেক পরিবর্তন। চিকেন বিরিয়ানি তো রয়েইছে, সেই সঙ্গে ‘চিকেন ফ্রায়েড’, ‘স্টিম চিকেন’, ‘ক্রিপসি চিকেন’, ‘চিকেন তন্দুরি থেকে ‘হট ডগ’ এখন পাতে উঠছে এই প্রত্যন্ত এলাকার বাঙালির। শহরের মানুষেরা তো বটেই শহরতলি থেকে গ্রাম সব জায়গাতেই এখন খাবারের পছন্দের তালিকায় ফাস্ট ফুড রয়েছে। তাই বলে হারিয়ে যায়নি জিলিপি। রাসমেলা চত্বরও তা থেকে বাদ পড়েনি। তাই ফাস্ট ফুডের সঙ্গে সেই চিরায়ত জিলিপিও বিক্রি হচ্ছে মেলায়, হুড়োহুড়ি করেই।

ভেটাগুড়ির জিলিপি বরাবর কোচবিহারের রাসমেলার মানুষদের পছন্দের তালিকায় উপরের দিকেই থাকে। কয়েক দশক আগে ভেটাগুড়ির বাসিন্দা বিধুভূষণ নন্দী জিলিপি তৈরি করে সাড়া ফেলে দিয়েছিলেন। তাঁর হাতে তৈরি জিলিপি নিমেষে উবে যেত। তিনি মারা গিয়েছেন বহুদিন আগে। তাঁর পরিবার অবশ্য এখনও সেই জিলিপি নিয়ে হাজির হন মেলায়। এবারে ভেটাগুড়ির জিলিপি নিয়ে হাজির হয়েছেন অসিত নন্দী। তিনি জানান, সবমিলিয়ে ৩৫ জন কর্মী কাজ করছেন তাঁদের দোকানে। দশটি উনুনে জিলিপি ভাজা হচ্ছে। প্রতিদিন সাত থেকে আট কুইন্টাল জিলিপি প্রতিদিন বিক্রি হচ্ছে। তিনি বলেন, “আমাদের বিক্রি কমেনি। মেলার শেষের দিকে ওই বিক্রি দ্বিগুণের বেশি হয়ে যাবে। ফাস্ট ফুড আমাদের বাজার নিতে পারেনি। এটুকু বলতে পারি।”

মেলাতেই এবারে ফাস্টফুডের দোকান দিয়েছেন প্রলয় সাহা। সেই দোকানেও ভিড় হচ্ছে প্রতিদিন। তিনি জানান, ২০১২ সাল থেকে তিনি ফাস্ট ফুডের ব্যবসায় নেমেছেন। সেই সময় থেকে রাসমেলায় স্টল দিচ্ছেন। বিক্রি ভালই হচ্ছে বলে জানালেন তিনি। প্রলয়বাবু বলেন, “চিকেনের নানা পদের চাহিদা রয়েছে। সন্ধে থেকে ভালই ভিড় হচ্ছে। ওই ভিড় আরও বাড়বে বলেই আশা করছি।” সেই সঙ্গে ‘ফুড জোনে’ রয়েছে বিরিয়ানি, পোলাও থেকে শুরু করে মুর্শিদাবাদের ‘চপ’। কোচবিহারের বাসিন্দা প্রাথমিক শিক্ষক বিল্লোল সরকার মেলায় দু’দিন গিয়েছেন বলে জানালেন। দুই জায়গাতেই ঢুঁ দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ভেটাগুড়ির জিলিপি আমার প্রিয়। তাই প্রথমদিন সেখানেই গিয়েছি। পরে অবশ্য একদিন ফ্রায়েড চিকেনেও নিয়েছি। সেটাও ভাল লাগে। বাড়ির ছোটরাও খুব পছন্দ করে।”

জিলিপি আর ফাস্ট ফুডের লড়াইয়ে দু’দিকেই সমান তাল মেলালেন মন্ত্রী রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। তাঁর ব্লাড সুগার রয়েছে। তবুও রাসমেলার জিলিপির স্বাদ থেকে নিজেকে বঞ্চিত রাখতে চাননি। আবার চিকেনেরও ভক্ত তিনি। তাই ফাস্ট ফুডের প্রতিও তাঁর এখন নির্মেদ টান। এরই মধ্যে মেলায় বিভিন্ন স্টল ঘুরে তাই জিলিপির সঙ্গে চিকেন পকোড়াও চেখে দেখেছেন মন্ত্রী।

জিলিপি আর ফাস্ট ফুডের লড়াই প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, ‘‘দুটোর মধ্যে সরাসরি কোনও সংঘাত তো নেই। খাবারের পছন্দ যাঁর যাঁর নিজের। আমার কাছে দুটোই খুব পছন্দের খাবার। আর ভোজনরসিক মানুষজনও তো দুটোকেই তাঁদের পছন্দের তালিকার উপরে রেখেছেন। কাজেই জিলিপি হোক আর ফাস্ট ফুড, মনের মতো স্বাদের জিনিস হলে কে আর লড়াইয়ের কথা ভাবে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Festival Food Cooch Behar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE