Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Travel

ক্ষতির পাহাড়ে পর্যটন

ওই ব্যবসায়ীদের কথায়, শুধুমাত্র হোটেল, লজ বা হোম স্টে ব্যবসায় রোজ ক্ষতি হচ্ছে ১১ কোটি টাকা। এর উপর রয়েছে পরিবহণ, ট্রাভেল এজেন্ট ও গাইডদের ক্ষতির হিসেব।

ফাইল চিত্র

ফাইল চিত্র

কৌশিক চৌধুরী
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ২০ মার্চ ২০২০ ০৭:৪৫
Share: Save:

করোনা সংক্রমণের আশঙ্কায় নিষেধাজ্ঞা বসেছে পাহাড় এবং জঙ্গলে। তার জেরে উত্তরবঙ্গে পর্যটন রোজ প্রায় ২৫ কোটি টাকার লোকসানের মুখে পড়ছে, জানালেন পর্যটন ব্যবসায়ীরা।

ওই ব্যবসায়ীদের কথায়, শুধুমাত্র হোটেল, লজ বা হোম স্টে ব্যবসায় রোজ ক্ষতি হচ্ছে ১১ কোটি টাকা। এর উপর রয়েছে পরিবহণ, ট্রাভেল এজেন্ট ও গাইডদের ক্ষতির হিসেব। সব মিলিয়ে আগামী তিন মাসের গরমের মরসুম বিরাট লোকসানের আশঙ্কায় মাথায় হাত পড়েছে পর্যটন ব্যবসায়ীদের। এর মধ্যে ট্যুর, পরিবহণ, টিকিটের বুকিং বাতিলের পরিমাণ ৯০ শতাংশ ছুঁয়ে ফেলেছে। এই লোকসান আগামী কত দিনে সামাল দেওয়া সম্ভব হবে, তার বুঝে উঠতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। অনেকেই বলছেন, ২০১৭ সালে টানা ১০৪ দিন বন্‌ধের ধাক্কাও সামলে ওঠা গিয়েছিল। কিন্তু করোনা-আতঙ্ক কাটিয়ে কবে যাতায়াত শুরু হবে, তা ঘোরতর অনিশ্চিত।

ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, বছরের পর্যটন মরসুমের ৬০ শতাংশ ব্যবসা হয় গরমে। মার্চ থেকে জুন মাস অবধি এই মরসুম চলে। অনেক ক্ষেত্রে এক বছর বা ছ’মাস আগে থেকে‌ই ট্যুর, বিমান টিকিট, গাড়ি বুকিং শুরু হয়ে যায়। ট্রেনের টিকিট বুকিং হয় চার মাসে আগে। এ বছরও তাই হয়েছিল। বিশেষ করে বিদেশি পর্যটকেরা তো এক বছর আগেই বুকিং সেরে ফেলেন। বর্তমান পরিস্থিতিতে পুরো মরসুমের ব্যবসা কার্যত শূন্যে এসে দাঁড়াচ্ছে।

আরেক দল ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, উত্তরবঙ্গ এবং সিকিম গত কয়েক বছর ধরেই পর্যটন ব্যবসা নানা কারণে ক্ষতির মুখে পড়ছে। ২০১৫ সালে ভয়ঙ্কর ভূমিকম্প, ২০১৭ সালে ১০৪ দিন টানা বন্‌ধের জের পরবর্তী ছ’মাস ধরে টানতে হয়েছে। এর পরেই এসেছে নোটবন্দি, জিএসটি মিলিয়ে আর্থিক ঝিমুনি। এবার করনো সংক্রমণ। এদিনই রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারের সতর্কতা এবং বিভিন্ন নিয়মাবলীর পাশে থেকেই পর্যটন সম্পর্কিত সকল স্তরের ব্যবসায়ী প্রধানমন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রী, জিটিএ চেয়ারম্যানকে এবং নানা সরকারি স্তরে চিঠি পাঠিয়েছেন। দার্জিলিঙের সাংসদ রাজু বিস্তাও বৃহস্পতিবার লোকসভায় পর্যটন ব্যবসার জন্য বিশেষ আর্থিক প্যাকেজের দাবি তুলেছেন।

উত্তরবঙ্গ, সিকিমের বিভিন্ন পর্যটন সংস্থার যৌথ মঞ্চ হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজম ডেভলপমেন্ট নেটওয়ার্কের উপদেষ্টা রাজ বসু সরকারি স্তরে সাহায্যের দাবি তুলেছেন। এদিন তিনি জানান, ‘‘পর্যটন নির্ভর আমাদের এই বিরাট অঞ্চল। প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষভাবে লক্ষাধিক মানুষ এই শিল্পের উপর নির্ভরশীল। আমরা সকলে জিএসটি, বিদ্যুৎ, টেলিফোন, ব্যাঙ্কিং, ট্রেড লাইসেন্ড, পিএফ, ফুয়েল মিলিয়ে ১৪টি ক্যাটেগরিতে কোটি কোটি টাকা কর দিয়ে আসছি।’’ তিনি বলেন, ‘‘আমরা সরকারের প্রতিটি কাজকে সমর্থন করছি। কিন্তু আমাদেরও বাঁচতে হবে। কর্মীদের বেতন দিয়ে পরিবার চালাতে হবে। তাই সব ক্ষেত্রে করের ছাড়, বাড়তি সময় বা ঋণ শোধ করতে সময় দেওয়া হোক।’’

গত তিন দিন ধরে প্রথমে সিকিম, তার পরে দার্জিলিং, কালিম্পং বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ডুয়ার্সের প্রতিটি অভয়ারণ্য বা জাতীয় উদ্যান বন্ধ। আপাতত ১৫ এপ্রিল সময় দেওয়া হলেও এপ্রিলের শেষেও পরিস্থিতি বদলাবে না বলে ব্যবসায়ীরা মনে করছেন। পর্যটন সংগঠনটির তরফে সম্রাট সান্যাল, তন্ময় গোস্বামীরা জানান, এই অঞ্চলের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়ছেন হোটেল, লজ মালিক আর গাড়ির মালিকেরা। কারণ বেশিরভাগই লিজ় নিয়ে ব্যবসা করছেন। গাড়ির ব্যবসায়ীদের ঋণের কিস্তি দিতেই হবে। ট্রাভেল এজেন্ট, গাইডরা বসে পড়েছেন। সরকার পাশে না দাঁড়ালে আমরা পরিবার, কর্মীদের নিয়ে কোথায় গিয়ে দাঁড়াব বুঝতে পারছি না।’’

সাংসদ রাজু বিস্তা বলেছেন, ‘‘কেন্দ্রের কাছে আবেদন পর্যটনের এই কঠিন সময়ে ব্যবসায়ীরা পাশে দাঁড়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Travel Tourism Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE