জখম সুলেখা সরকার। — নিজস্ব চিত্র
মাত্র তিন দিন আগেই শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করে মদ্যপদের হাতে খুন হয়েছিলেন ইংরেজবাজার শহরে বাসিন্দা অর্জুন দাস। তাঁকে খুনের ঘটনায় এখনও কেউ গ্রেফতার হয়নি। থমথমে শহরের কুলদীপ মিশ্র কলোনি। তার রেশ কাটার আগেই ফের প্রতিবাদ করে জেলায় আক্রান্ত হলেন এক মহিলা ও তাঁর বৃদ্ধা শাশুড়ি। সুলেখা সরকার ও তাঁর শাশুড়ি সরলাদেবীর সঙ্গে এ বারের ঘটনাটি ঘটেছে মঙ্গলবার রাতে গাজল থানার করলা ভিটে এলাকায়।
পুলিশ জানিয়েছে, সুলেখাদেবীর আঘাত গুরুতর। তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন মালদহ মেডিক্যালে। সরলাদেবী ভর্তি গাজল গ্রামীণ হাসপাতালে। অভিযোগ, বাড়ির সামনে মদ্যপ অবস্থায় তাঁদের প্রতিবেশী দুই যুবক গালিগালাজ করছিল। প্রতিবাদ করায় তাঁদের উপরে হামলা চালায় তারা। ওই রাতেই গাজল থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হলেও তাদেরও কাউকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। মালদহের পুলিশ সুপার অর্ণব ঘোষ বলেন, ‘‘দু’টি ঘটনারই তদন্ত চলছে। অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।’’
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সরলাদেবীর স্বামী বছর দশেক আগেই মারা গিয়েছেন। তাঁর তিন ছেলেই বিয়ের পর পৃথক থাকেন। সরলাদেবী তাঁর ছোট ছেলে নিমাই সরকারের সঙ্গে থাকেন। নিমাইবাবু দিল্লিতে নির্মাণ শ্রমিকের কাজ করেন। এখনও তিনি দিল্লিতেই রয়েছেন। বাড়িতে সুলেখাদেবী তাঁর দুই মেয়ে এবং বৃদ্ধা শাশুড়িকে নিয়ে থাকতেন। অভিযোগ, মঙ্গলবার রাত সাড়ে সাতটা নাগাদ পড়শি বিশ্বজিৎ সিংহ ও তাঁর ভাই রাজকুমার সিংহ মদ্যপ অবস্থায় নিজেদের মধ্যে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করছিলেন। সেই সময় দুই মেয়েকে পড়াচ্ছিলেন সুলেখাদেবী। অশ্লীল গালিগালাজ সহ্য করতে না পেরে তিনি ঘর থেকে বেরিয়ে প্রতিবাদ করেন।
তখনই বচসা শুরু হয় এবং বিশ্বজিৎ হাঁসুয়া দিয়ে সুলেখাদেবীর মাথায় কোপ মারে। তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে আক্রান্ত হন তাঁর শাশুড়ি সরলাদেবীও। ঘটনায় হইচই শুরু হয়ে গেলে অভিযুক্তেরা পালিয়ে যায়।
পরে প্রতিবেশীরা ওই মহিলা ও তাঁর শাশুড়িকে উদ্ধার করে গাজল গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে গেলে রাতেই সুলেখাদেবীকে স্থানান্তরিত করা হয় মালদহ মেডিক্যালে। সুলেখা দেবী বলেন, ‘‘প্রায়ই ওই দুই ভাই মদ্যপ অবস্থায় অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করতেন। এ দিন আর সহ্য করতে না পেরে ওদের চুপ করতে বলি। তখনই ওরা আমাদের উপরে হামলা চালায়। আমরা চাই পুলিশ তাদের গ্রেফতার করে শাস্তি দিক। পুলিশ জানিয়েছে, বিশ্বজিৎ ও রাজকুমার শ্রমিকের কাজ করেন। তাদের খোঁজে তল্লাশি চালানো হচ্ছে।
প্রতিবাদ করলেই কেন হামলার মুখে পড়তে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে? গৌড়বঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার অধ্যাপক তথা বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ বিকাশ রায় বলেন, ‘‘সমাজের একাংশ শোনার অভ্যাস হারাচ্ছেন। যার জন্য একের পর এক প্রতিবাদীকে আক্রান্ত হতে হচ্ছে। এই সব ক্ষেত্রে পুলিশের উচিত কড়া পদক্ষেপ করা।’’
ইংরেজবাজারের প্রতিবাদী যুবক অর্জুন দাসের মৃত্যুর পর তিন দিন কেটে গেলেও এখনও শোকস্তব্ধ হয়ে রয়েছে পুরো এলাকায়। মঙ্গলবার রাতে এলাকার মহিলা এবং পুরুষেরা মোমবাতি নিয়ে মৌন মিছিল করেন। এ দিনও এলাকায় মোতায়ন রয়েছে পুলিশ পিকেট। বিয়ের অনুষ্ঠানে মহিলার শ্লীলতাহানির প্রতিবাদ করায় খুন হতে হয়েছিল অর্জুনকে। খুনের ঘটনায় এখনও অভিযুক্ত মুকান্দর চৌধুরী ও তাঁর দাদা সিকান্দর-সহ কাউকেই ধরতে পারেনি পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy