Advertisement
E-Paper

ডেঙ্গির দোসর ম্যালেরিয়া, মালদহ, আলিপুরদুয়ারে মৃত তিন

ডেঙ্গির পাশাপাশি ম্যালেরিয়ার প্রকোপ ছড়াচ্ছে উত্তরে। মালদহ ও আলিপুরদুয়ারে ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এদের দু’জনের রক্তেই প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরাম জীবাণু মিলেছে বলে জানা গিয়েছে।

নিজস্ব প্রতিবেদন

শেষ আপডেট: ০৯ অগস্ট ২০১৬ ০৩:০৬
বালুরঘাটে হাসপাতাল চত্বরেই জমে রয়েছে জল। — নিজস্ব চিত্র

বালুরঘাটে হাসপাতাল চত্বরেই জমে রয়েছে জল। — নিজস্ব চিত্র

ডেঙ্গির পাশাপাশি ম্যালেরিয়ার প্রকোপ ছড়াচ্ছে উত্তরে। মালদহ ও আলিপুরদুয়ারে ইতিমধ্যেই মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। এদের দু’জনের রক্তেই প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরাম জীবাণু মিলেছে বলে জানা গিয়েছে।

স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, রবিবার মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয় এক যুবকের। হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত ওই যুবকের নাম ক্ষিতীশ দাস (৩০)। তার বাড়ি পুরাতন মালদহ ব্লকের কোর্ট স্টেশন এলাকায়। মালদহ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ প্রতীপকুমার কুণ্ডু বলেন, ‘‘ক্ষিতীশ দাস নামে ওই রোগী সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে মারা গিয়েছেন। এই হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রয়োজনীয় সমস্ত চিকিৎসাই করা হয়েছিল। তাঁকে বাঁচানো যায়নি।’’

স্থানীয় ও স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষিতীশবাবু কয়েকমাস আগে মোবাইল ও বিদ্যুতের টাওয়ার বসানোর কাজের শ্রমিক হিসেবে মুম্বই গিয়েছিলেন। কিছুদিন আগে সেখানেই তিনি জ্বরে আক্রান্ত হন। অসুস্থ অবস্থাতেই বাড়ি ফেরেন তিনি।

আলিপুরদুয়ারেও জ্বরে ভুগে যে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে, তাঁরা সম্পর্কে পিসি-ভাইঝি। শুক্রবার আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালে প্রথমে মৃত্যু হয় সঙ্কোশ চা বাগান এলাকার বাসিন্দা ছাবিনা বিবির। তাঁর রক্তেও প্লাসমোডিয়াম ফ্যালসিফেরাম জীবাণু মিলেছে। তাঁর মেয়ে আলিজাও ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হয়ে সিসিইউতে ভর্তি। ছাবিনার ভাইঝি নূরজাহান খাতুনের (১৮) বাড়ি আলিপুরদুয়ার শহরে। আলিপুরদুয়ার জেলা হাসপাতালের সুপার চিন্ময় বর্মন বলেন, ‘‘হাসপাতালে বর্তমানে ৬ জন জ্বরের রোগী রয়েছে। তার মধ্যে আলিজা খাতুনের পিএফ রয়েছে। তাঁকে সিসিইউতে রাখা হয়েছে। আলিজার মায়ের পিএফ ম্যালেরিয়ায় মৃত্যু হয়েছে।’’

এই অবস্থায়, জাপানি এনসেফেলাইটিসে আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মিলেছে জলপাইগুড়িতে৷ ক্রান্তির রাজাডাঙার উত্তর মাঝগ্রাম এলাকায় ধীরেন রায় নামে এক বৃদ্ধ জাপানি এনসেফেলাইটিসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানা গিয়েছে৷ জেলা স্বাস্থ্য দফতরও তা স্বীকার করে নিয়েছে৷ জলপাইগুড়ির মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক প্রকাশ মৃধা বলেন, ‘‘জাপানি এনসেফেলাইটিসে আক্রান্ত হয়ে ওই বৃদ্ধ দিন কয়েক আগে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন৷ কিন্তু প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না করিয়েই তিনি ছুটি নিয়ে বাড়ি ফিরে আসেন৷’’ তবে এ দিন তাঁকে ফের মালবাজার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

জ্বরের প্রকোপ বেড়ে চলেছে মালদহ জেলাতেও। সোমবারও প্রচুর রোগী জ্বরের উপসর্গ নিয়ে মালদহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আউটডোরে চালু ফিভার ক্লিনিকে চিকিৎসা করাতে আসেন। এদের মধ্যে ২২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। রোগীদের ভিড়ে এখন ঠাঁই নেই অবস্থা। বর্তমানে এই হাসপাতালে ডেঙ্গিতে আক্রান্ত এক মহিলা সহ দু’জন রোগীরও চিকিৎসা চলছে। জেলায় ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেওয়ায় এ দিন বিকেলে মালদহ জেলা প্রশাসনিক ভবনে বৈঠক করেন জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী। ওই বৈঠকে জেলা স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিক ও পুলিশ প্রশাসনের আধিকারিকরাও উপস্থিত ছিলেন। সেখানে ডেঙ্গু রুখতে জেলায় জোর প্রচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

কোচবিহারে জ্বরের প্রকোপ বাড়লেও এখনও ম্যালেরিয়া আক্রান্তের খবর পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য দফতরের তরফে অবশ্য ম্যালেরিয়া যে কোনও সময় থাবা বসাতে পারে আশঙ্কা করে প্রচার শুরু করা হয়েছে। কোচবিহার জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক সুমিত গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, “জেলায় ম্যালেরিয়া নেই। তবে ওই ব্যাপারে আমরা সচেতনতা প্রচার শুরু করেছি। সব এলাকায় আমাদের ট্যাবলো ঘুরে বেড়াচ্ছে। পরীক্ষার জন্য বাড়ি বাড়ি ঘুরে রক্ত সংগ্রহও করা হচ্ছে।”দিনহাটা হাসপাতালের সুপার রঞ্জিত মণ্ডল বলেন, “এই মুহূর্তে জ্বর নিয়ে হাসপাতালে ৪০ জন রোগী ভর্তি। কিন্তু ম্যালেরিয়া আক্রান্ত নেই।”

ডেঙ্গি রুখতে সচেতনতা অভিযান শুরু হয়েছে উত্তর ও দক্ষিণ দিনাজপুরেরও। জেলা স্বাস্থ্য দফতর সূত্রের খবর, গত ৪ অগস্ট থেকে ৬ অগাস্ট পর্যন্ত রায়গঞ্জ জেলা হাসপাতালে ডেঙ্গির উপসর্গ নিয়ে ৮ জন ভর্তি হন। তাঁদের দু’জনের শরীরে ডেঙ্গির জীবাণু মেলে।

বর্তমানে তাঁরা হাসপাতালের ক্রিটিকাল কেয়ার ইউনিটে চিকিত্সাধীন। উত্তর দিনাজপুরের মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক জগন্নাথ সরকার জানান, সোমবার থেকে জেলার বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতা অভিযান শুরু হয়েছে। স্বাস্থ্যকর্মীরা ন’টি ব্লকের ৯৮টি গ্রাম পঞ্চায়েত ও চারটি পুরসভা এলাকায় বাসিন্দাদের সচেতন করার কাজ শুরু করেছেন। আজ, মঙ্গলবার দক্ষিণ দিনাজপুরের বালুরঘাটে ডেঙ্গি রুখতে কর্মশালার আয়োজন করেছে স্বাস্থ্য দফতর। চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল মদনমোহন কর্মকারের দাবি, শহরের প্রতি ওয়ার্ডে মশা মারার তেল স্প্রে করা হচ্ছে। জঞ্জালও নিয়মিত সাফাই চলছে।

Alipurduar Malaria Dengue
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy