Advertisement
১৬ মে ২০২৪

মেটেনি ডার্বির টিকিট-বিতর্ক

শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কর্তা তথা তৃণমূল নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে ডার্বি ম্যাচের অন্তত দুই হাজার টিকিট চেপে রাখার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। ইস্টবেঙ্গলের তরফে জানানো হয়েছে, ম্যাচের আগের দিন রাতে তাঁদের সাড়ে তিন হাজার টিকিট বিক্রি হয়নি বলে ফিরিয়ে দিয়েছে মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০৪ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:৩৭
Share: Save:

শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের কর্তা তথা তৃণমূল নেতাদের একাংশের বিরুদ্ধে ডার্বি ম্যাচের অন্তত দুই হাজার টিকিট চেপে রাখার অভিযোগ উঠেছে। অভিযোগ অবশ্য উড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা। ইস্টবেঙ্গলের তরফে জানানো হয়েছে, ম্যাচের আগের দিন রাতে তাঁদের সাড়ে তিন হাজার টিকিট বিক্রি হয়নি বলে ফিরিয়ে দিয়েছে মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ।

এক দিকে ওই টিকিট বিক্রি না হয়ে নষ্ট হওয়া, অন্য দিকে ম‌্যাচের আগে দুই দিন ধরে অনেকেই কাউন্টারে এসে টিকিট না পেয়ে ফিরে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে ক্রীড়া পরিষদ এবং ইস্টবেঙ্গলের কর্মকর্তাদের একাংশ একে অপরকে দূষছেন। ম্যাচের তিন দিন আগে থেকে টিকিট নিয়ে ব্যাপক কালোবাজারির অভিযোগ উঠেছিল। কালো বাজারিতে মদত দিতেই দুই দিন আগে থেকে টিকিট নেই বলে চাউর করে কাউন্টার থেকে টিকিট বিক্রি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল বলেও অভিযোগ। তা নিয়ে তদন্তের দাবি উঠেছে।

কত টিকিট করা হয়েছিল আর কত টিকিট বিক্রি হয়েছিল তা নিয়েও এখনও অস্পষ্টতা রয়ে গিয়েছে। পুলিশ এবং মহকুমা ক্রীড়া পরিষদের একটি সূত্রেই জানা গিয়েছে, বৈঠক করে ঠিক হয়েছিল ৩০ হাজারের দর্শকাসন থাকলেও নিরাপত্তার দিকটি খতিয়ে দেখে ২৫ হাজার টিকিট করার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। ইস্টবেঙ্গল কর্মকর্তাদের দাবি, পুরো টিকিট ক্রীড়া পরিষদের হাতেই ছিল। তাদের কাছ থেকে নিয়ে সাড়ে ৪ হাজার টিকিট মোহনবাগান ক্লাবকে দেওয়া হয়েছিল। ইস্টবেঙ্গল ক্লাব নিয়েছিল ১৯৮০ টি টিকিট। তা ছাড়া অন লাইনে আরও হাজার দুয়েক টিকিট বিক্রি করেছে ইস্টবেঙ্গল। পরে টিকিট মিলছে না, টিকিটের অভাবের কথা জানানো হলে আরও চার হাজার টিকিট করতে বলা হয়। সে হিসাবে মোট টিকিট ছাপা হয়েছিল ২৯ হাজার।

অভিযোগ, ক্রীড়া পরিষদের কর্তা তথা শাসক দলের নেতাদের কেউ ১০ হাজার, কেউ ১৫ হাজার, কেউ ৫ হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কিনে রেখেছিলেন। তাতেই টিকিটের ঘাটতি হয়। পরে তাঁরাই অবিক্রিত টিকিট প্রচুর পরিমাণে ফেরত দেন বলে অভিযোগ। আয়োজনের দায়িত্বে থাকা ইস্টবেঙ্গলের অন্যতম কর্মকর্তা বাবু চক্রবর্তী বলেন, ‘‘ম‌্যাচের আগের দিন রাতে সাড়ে তিন হাজার টিকিট বিক্রি হয়নি বলে আমাদের ফিরিয়ে দিয়েছে মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ কর্তৃপক্ষ। অথচ বহু লোক টিকিট না পেয়ে ফিরে গিয়েছেন। কেন এমন হল তা বুঝতে পারছি না।’’

ক্রীড়া পরিষদের পাল্টা দাবি, আয়োজক ইস্টবেঙ্গলের হেফাজতেই সমস্ত টিকিট ছিল। তাদের অনুমতি নিয়েই টিকিট বিক্রি হয়েছে। ম‌্যাচের আগের দিন ইস্টবেঙ্গলই আড়াই হাজারের মতো টিকিট দিয়ে বলেন ওই সমস্ত টিকিট বিক্রি হয়নি। কলকাতায় দুর্ঘটনার জন্য অনেকেই খেলা দেখতে আসতে পারছেন না। তাতে টিকিট বাড়তি রয়ে গিয়েছে। শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ ঠিক কথা বলছেন না বলে দাবি বাবু চক্রবর্তীর। তিনি জানান, ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তারা ঠিক কথা বলছেন না। ইস্টবেঙ্গলের তরফে সমস্ত দায়িত্ব ক্রীড়া পরিষদের কর্তাদেরই দেওয়া হয়েছিল। মোট কত টাকার টিকিট বিক্রি হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি তারা। ক্রীড়া পরিষদের সচিব অরূপবাবু বলেন, ‘‘এ ভাবে ম‌্যাচের আয়োজন আমরা আর করতে চাই না।’’

ডার্বি ম্যাচের টিকিট অবিক্রিত থাকার কথা শুনে বিস্মিত জলপাইগুড়ির ইস্টবেঙ্গল ফ্যান ক্লাবের সদস্যরা। যদিও ম্যাচের দু’দিন আগে থেকেই স্টেডিয়ামের টিকিট কাউন্টার বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাঁদের খালি হাতেই ফিরতে হয়েছে। গত শনিবার ম্যাচের দিন কাউন্টার খুলে টিকিট বিক্রি হতে দেখে চমকে উঠেছিলেন ফ্যান ক্লাবের সদস্যরা। ফ্যান ক্লাবের মুখপাত্র দেবব্রত ভট্টাচার্য দাবি তুলেছেন, ম্যাচের কয়েকদিন আগে থেকে ইচ্ছাকৃত ভাবে টিকিটের কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করা হয়েছিল কি না খতিয়ে দেখতে হবে। দেবব্রতবাবু অভিযোগ করে বলেন, ‘‘জলপাইগুড়িতে টিকিটের জন্য হাহাকার চলেছে। শিলিগুড়িতে দীর্ঘ লাইন দিয়েই প্রচুর ফুটবলপ্রেমী ম্যাচের টিকিট পাননি। কেন এটা হল তা খতিয়ে দেখা হোক। ইস্টবেঙ্গল-মোহনবাগান ম্যাচের টিকিট বিক্রি হবে না, এটা মেনে নেওয়া যায় না।’’

ডার্বি ম্যাচের ভিভিআইপি টিকিট নিয়ে আয়োজক ইস্টবেঙ্গল জালিয়াতি করেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। মোহনবাগান ক্লাব সূত্রে দাবি করা হয়েছে, মোট পাঁচশো ভিভিআইপি টিকিট বিক্রি করা হলেও সেখানে খেলা শুরুর পর সাতশো লোক ঢুকে পড়েছিল। কী ভাবে তা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও এই বিষয়ে শিলিগুড়ি মহকুমা ক্রীড়া পরিষদ সচিব অরূপরতন ঘোষকে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি মন্তব্য করতে চাননি। মোহনবাগান ক্লাব সূত্রে জানানো হয়েছে, তারা মোট টিকিট পেয়েছে ৩ শো টাকার পাঁচশোটি, ২০০ টাকার দেড় হাজার এবং ৪ শো টাকার ৬০টি। এর মধ্যে কলকাতায় পাঠানো হয়েছে, ৩০০টি ৩ শো টাকার টিকিট, ৩০টি ভিভিআইপি টিকিট এবং পাঁচশোটি ২০০ টাকার টিকিট। বাকি টিকিট নিজেদের হাতে রেখে দেওয়া হয়েছিল বলে জানানো হয়েছে। ক্রীড়া পরিষদের দাবি, খেলার দিন সকালে ২ হাজার বিভিন্ন দামের টিকিট ক্রীড়া পরিষদের হাতে তুলে দিলেও শেষ মুহূর্তে তারা তা নিতে চায়নি। তখন ইস্টবেঙ্গল কর্তারা নিজেদের লোক দিয়ে বিক্রি করান।

তাতেও অধিকাংশ টিকিটও বিক্রি হয়নি। ২ হাজারের বেশি টিকিট অবিক্রিত থেকেছে বলে জানা গিয়েছে। ফলে ২৫ হাজার টিকিটের মাঠে ৩০ হাজারের বেশি দর্শক ঢুকেছে কী ভাবে? পুলিশের অবদান যতই থাকুক, হিসাব বহির্ভূত অতিরিক্ত টিকিট ছাপানো হয়েছে বলে দাবি করেছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ticket controversy derby
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE