এই কুয়ো থেকেই মিটবে পানীয় জলের সঙ্কট। ছবি: মনোজ মুখোপাধ্যায়।
তিনি মালদহের বিশিষ্ট চিকিৎসক। চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজেই কয়েক বার গিয়েছিলেন মহিষবাথান গ্রামে। তখনই তাঁর চোখে পড়ে গ্রামের জীবনধারণের সমস্যাগুলি। শেষে আদিবাসী অধ্যুষিত এই গ্রামটিকে দত্তক নেওয়াই মনস্থ করেন মানবেশ প্রামাণিক। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এর মধ্যেই আদর্শ গ্রাম যোজনায় গ্রাম দত্তক নেওয়া চালু করেছেন। বাংলার দুই বিজেপি সাংসদ বাবুল সুপ্রিয় এবং সুরেন্দ্র সিংহ অহলুওয়ালিয়া দু’টি গ্রাম দত্তকও নিয়েছেন। বাবুলের গ্রামে কিছু কাজ হয়েছে। কিন্তু নকশালবাড়ির কাছে হাতিঘিষা নামে যে গ্রামটি অহলুওয়ালিয়া দত্তক নেন, সেখানে কোনও কাজ শুরু হয়নি।
মানবেশবাবু এই রাজনৈতিক চৌহদ্দির বাইরে গিয়ে গ্রামের উন্নয়নের লক্ষ্যে দত্তক নিতে চলেছেন মহিষবাথানকে। আজ, শুক্রবার বিধানচন্দ্র রায়ের জন্ম ও মৃত্যুদিন। এই দিনটি চিকিৎসক দিবস হিসেবে পালন করা হয়। মানবেশবাবু এই দিনটিকেই বেছে নিয়েছেন মালদহ ব্লকের ভাবুক গ্রাম পঞ্চায়েতের একেবারে প্রত্যন্ত এলাকার এই গ্রামটি আনুষ্ঠানিক ভাবে দত্তক নেওয়ার জন্য।
মালদহ জেলা সদর থেকে খানা-খন্দে ভরা রাস্তা পেরিয়ে যেতে হয় এই গ্রামে। যাতায়াতে ভরসা মালদহ-রানিগঞ্জ রুটের কয়েকটি ট্রেকার। তা-ও চলে দিনে এক-দুবার। গ্রামে ৬৯টি পরিবার বাস করে। অথচ মাত্র চারটি বাড়িতে পাকা শৌচাগার। পঞ্চায়েতে ৯০০ টাকা করে জমা দিয়ে শৌচাগার পাওয়ার ক্ষমতা বেশির ভাগ গ্রামবাসীরই নেই।
গ্রামে পানীয় জলের সঙ্কটও মারাত্মক। দুটি কুয়ো থাকলেও চৈত্র মাসে সেগুলি শুকিয়ে যায়। গ্রামের একেবারে শেষ প্রান্তে একটি গভীর নলকূপ রয়েছে। সেখান থেকেই খাবার জল সংগ্রহ করেন বাসিন্দারা। তবে গরমে সেই জলে পুরো গ্রামের চলে না। নেই কোনও প্রাইমারি স্কুল। গ্রামের জনা কুড়ি ছাত্রছাত্রী পড়তে যায় দু’কিলোমিটার দূরের সুকানদিঘি প্রাইমারি স্কুলে।
মানবেশবাবু দত্তক নেওয়ার পরে শুক্রবার থেকেই গ্রামে চালু হবে বিষ্ণুধারা নামে পানীয় জলের প্রকল্প, ছাত্রবন্ধু নামে স্কুলে যাওয়ার ভ্যানরিকশা ও ভ্রাম্যমাণ দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র। এর পর থেকে প্রতি রবিবার করে চিকিৎসা কেন্দ্রটি চলবে। মানবেশবাবুর পরবর্তী পদক্ষেপ হবে, গ্রামের সব বাড়িতে পাকা শৌচাগার। এই উদ্যোগ নিয়ে অতিরিক্ত জেলাশাসক দেবতোষ মণ্ডল বলেন, গ্রামটি দত্তক নেওয়ার ব্যাপারটি তিনি মৌখিক ভাবে জানিয়েছিলেন। কোনও ব্যক্তি যদি উদ্যোগী হয়ে পানীয় জল, শৌচাগার, চিকিৎসা ও ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে যাতায়াতের ব্যবস্থা করেন, তা হলে এর চেয়ে ভাল কী হতে পারে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy