Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

পড়ে থাকা দেহ খেল কুকুরেরা

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের রোগীদের রান্নাঘরের কাছে করিডরে আশ্রয় নিয়েছিলেন এক ভবঘুরে বৃদ্ধ। বুধবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। তাঁর দেহ সেখানেই ছিঁড়ে খেল কুকুরেরা।

দেহের পাশে কুকুর। নিজস্ব চিত্র।

দেহের পাশে কুকুর। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ১৫ এপ্রিল ২০১৬ ০৩:০১
Share: Save:

উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজের রোগীদের রান্নাঘরের কাছে করিডরে আশ্রয় নিয়েছিলেন এক ভবঘুরে বৃদ্ধ। বুধবার সন্ধ্যায় তিনি মারা যান। তাঁর দেহ সেখানেই ছিঁড়ে খেল কুকুরেরা। বৃহস্পতিবার সকালে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এ দৃশ্য দেখে সেখানকার কর্মী, রোগীর আত্মীয়, এলাকার বাসিন্দাদের অনেকেই আঁতকে উঠেছেন। কেন ওই বৃদ্ধের দেহ সরানো হয়নি, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

হাসপাতালের রোগীদের জন্য রান্নার ঘরের কাছেই করিডরে এই ঘটনা নিয়ে হইচই পড়েছে। হাসপাতালের রান্নার কাজে যুক্ত কর্মীরা, সেখানে থাকা হাসপাতালের সরঞ্জাম ধোওয়া-কাচার কাজে যুক্ত ব্যক্তিরা বৃদ্ধর দেহ করিডরে প্রায় বিবস্ত্র অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে বুধবার সন্ধ্যাতেই হাসপাতালের সুপারের দফতরে খবরও পাঠান। অথচ পরদিন দুপুর পর্যন্ত উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। দেহটি ওখানেই পড়েছিল। তারপরে যায় কুকুরের কবলে।

এ দিন সাড়ে বারটা নাগাদ হাসপাতালের সুপার নির্মল বেরা ঘটনা শুনে বলেন, ‘‘এমন ঘটনা কেউ জানায়নি। এখনই যাতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয় দেখছি।’’ এ দিন নববর্ষের ছুটি থাকায় সুপারের দফতর বন্ধ ছিল। ঘটনা জানতেন না হাসপাতালের ডেপুটি সুপার বিজয় থাপাও। বিষয়টি নিয়ে হইচই হওয়ার পরে নিয়মমাফিক পুলিশকে জানিয়ে, কুকুরে খুবলে খাওয়া অজ্ঞাতপরিচয় দেহটি এ দিন দুপুরে মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান। হাসপাতাল সুপার জানান, এ ধরনের বিষয় কেউ খবর দিলে তখনই তা পুলিশকে জানানোর কথা বলা রয়েছে। দফতরে যদি কেউ খবর দিয়ে থাকেন, তবে তখনই তা করা হয়নি কেন, দেখা হচ্ছে।

প্রত্যক্ষদর্শী হাসপাতালের কর্মীদের কয়েক জন জানিয়েছেন ভোরের দিকে তাঁরা দেখেন অন্তত ৫টি কুকুর করিডরের উপরে বৃদ্ধর মৃতদেহটি খুবলে খাচ্ছে। দেহটি কামড়ে টানা-হেঁচড়া করছে। কুকুরের দল তাঁর দুটি পায়ের মাংস খুবলে খাওয়ায় হাড়-মাংস বেরিয়ে পড়েছে। কুকুরগুলি দেহটিকে করিড়রের উপর থেকে টেনে নামায় পাশে ঝোপের ধারে। তা দেখে হাসপাতালের কর্মীরা কুকুরগুলিকে তাড়ান। মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল সূত্রেই জানা গিয়েছে, করিড়রে ভবঘুরে বেশ কিছু লোক ঘুরে বেড়ান। অনেকে দিনের পর দিন সেখানেই থাকেন। মানবিকতার খাতিরে হাসপাতালের রোগীদের খাবার তৈরি হলে সেখান থেকে তাঁদেরও দেওয়া হয়। কেউ গুরুতর অসুস্থ হলে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসাও করানো হয়। সুস্থ হয়ে ওয়ার্ড থেকে বেরিয়ে আবার করিডরেই আস্তানা করেন তাঁরা। এই বৃদ্ধও অনেক দিন ধরেই করিড়রে থাকছিলেন বলে জানিয়েছেন হাসপাতালের কর্মীদের কয়েকজন। ভবঘুরেদের এক জন সন্তোষ বর্মন অসমের বাসিন্দা। আগে গাড়ি চালাতেন। কিন্তু দুর্ঘটনায় পা নষ্ট হওয়ায় এখন ক্র্যাচে ভর দিয়ে হাঁটেন। বাড়িতে দেখভালের কেউ নেই। চিকিৎসা করাতে এখানে এসে তিনি গত কয়েক বছর ধরে হাসপাতালের ক্যাম্পাসেই থাকেন। তিনি বলেন, ‘‘কুকুরে মৃতদেহটি ছিঁড়ে খাচ্ছে দেখে আমিও কুকুরগুলিকে কয়েকবার তাড়িয়েছি। পাশেপাশে পড়ে থাকা কাপড়, চাদর দিয়ে ঢেকে দিয়েছিলাম। দেহটি না সরানোয় কুকুর খুবলে খাচ্ছিল।’’

নববর্ষের দিন হাসপাতালে ওই সমস্ত অসহায় লোকদের সাহাষ্য করতে, খাবার, জল বিলি করতে গিয়েছিলেন খাপরাইলের বাসিন্দা ফুলমণি টোপ্পো, সীতা কুমারীরা। তাঁরাও মৃতদেহটি ওই অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে যান। সীতাকুমারী বলেন, ‘‘এত বড় মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল অথচ পরিষেবা ঠিক নেই। এ ভাবে একজন মরে পড়ে রয়েছেন, কুকুরে খাচ্ছে এটা দেখার কেউ নেই। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদাসনীতার জন্যই এই অমানবিক ঘটনা দেখতে হচ্ছে।’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

deadbody dogs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE