সহপাঠীদের পাশে বসে অবশেষে পড়াশোনা পিঙ্কির। নিজস্ব চিত্র
দু’মাস পরে স্কুলে ফিরল পিঙ্কি। তাঁকে কাছে পেয়ে আনন্দে বিহ্বল হয়ে পড়ে সহপাঠীরা। কেউ তাঁকে জড়িয়ে ধরেছে, কেউ হাতে হাত রেখে বলেছে, “পড়াশোনা করে যেতে হবে।” তা দেখে আবেগতাড়িত হয়ে পড়েছিলেন শিক্ষকরাও। চোখে জল এসে গিয়েছিল পিঙ্কির। কোনওরকমে নিজেকে সামলে সে বলে, “আমি পড়াশোনা করতে চাই। কলেজে যেতে চাই। আর একটা চাকরি পেলেতো খুব ভাল হয়।” কোচবিহারের দিনহাটার বড় ফকিরতকেয়া গ্রামের বাসিন্দা পিঙ্কি দাস। বাড়ির এক কিলোমিটারের মধ্যেই জোরপাকুড়ি হাইস্কুলে পড়াশোনা করত সে। দু’মাস পরে সোমবার স্কুলেই ফিরল সে।
দশম শ্রেণির এই ছাত্রীর খবর পৌঁছে গিয়েছে কোচবিহারের জেলাশাসক কৌশিক সাহার কাছেও। তিনি বলেন, “কন্যাশ্রী ক্লাবের মেয়েরাই পিঙ্কির সহপাঠী। তাঁরা সবাই মিলে তাঁর বাড়িতে যায়। পিঙ্কি আবার স্কুলে ফিরেছে শুনে খুব খুশি হয়েছি।” স্কুলের প্রধানশিক্ষক কৌশিক সরকার জানান, তাঁরা চেষ্টা করেন কেউই যাতে স্কুলছুট না হয়। তারপরেও এমন ঘটনার মুখোমুখি তাঁদের হতে হয়। তিনি বলেন, “পিঙ্কি নিজেও কন্যাশ্রী ক্লাবের সদস্য। আচমকা সে স্কুলে আসা বন্ধ করে। পরে অন্য ছাত্রীরা জানতে পারে তাঁর অভিভাবকরা তাঁকে পড়াতে চান না। তখন সবাই মিলে তাঁর বাড়ি যায়। আবার ও ফেরায় আমাদের খুব ভাল লাগছে।”
স্কুল সূত্রের খবর, প্রত্যন্ত গ্রামের ওই স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের অনেকেই গরিব পরিবারের। পিঙ্কিও এমন এক পরিবারের। তাঁর বাবা বিমল দাস রাইস মিলে শ্রমিকের কাজ করতেন। কয়েক মাস আগে সেই কাজ চলে যায়। তাই ভিনরাজ্যে কাজের খোঁজে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। তিন মেয়ের মধ্যে পিঙ্কি ছোট। বড় দুই মেয়েকে স্কুল পাশ করিয়ে বিয়ে দিয়েছেন। ছোট মেয়ের পড়াশোনা নিয়ে তেমন কোনও আপত্তি ছিল না তাঁর। কিন্তু প্রতিকূল পরিস্থিতিতেই মেয়েকে বাড়িতে থাকতে বলেন। তিনি অবশ্য শিক্ষকদের জানিয়েছেন, এক মেয়ের বিয়ের অনুষ্ঠানে ব্যস্ত থাকাতেই দু’মাস স্কুলে যেতে পারেননি পিঙ্কি।
তাঁর সহপাঠীদের কয়েকজন জানান, একদিন রাস্তায় পিঙ্কির সঙ্গে দেখা হয় তাঁদের। পিঙ্কি আবার পড়াশোনা করতে চায় বলে তাঁদের জানায়। সে কথা জেনেই গত মঙ্গলবার তারা সবাই মিলে গিয়েছিল তাঁর বাড়িতে। সঙ্গে গিয়েছিলেন ওই স্কুলের শিক্ষক প্রদ্যোৎ মণ্ডল এবং বড় আটিয়াবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সুভাষ বর্মনও। এরপরেই তার বাবা মেয়েকে স্কুলে ফেরাতে রাজি হন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy