Advertisement
E-Paper

দুর্গা নয়, দুরামারিতে কদর বেশি লক্ষ্মীর

প্রতিমা দেখার আকর্ষণ যে শুধু দুর্গাপুজোতেই থাকে না তা বোঝা যায় এখানে এলে। ধূপগুড়ির ছোট্ট জনপদ দুরামারি গ্রাম। ডুয়ার্সের খুট্টিমারি জঙ্গল থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে নাথুয়াহাট রাজ্য সড়কে দুরামারি আদতে চারদিকে তিন ফসলি জমি ঘেরা কৃষি বলয়।

রাজকুমার মোদক

শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০১৬ ০২:৪৭
দুরামারি গ্রামে লক্ষ্মীপুজোর আলোকসজ্জা। — নিজস্ব চিত্র

দুরামারি গ্রামে লক্ষ্মীপুজোর আলোকসজ্জা। — নিজস্ব চিত্র

প্রতিমা দেখার আকর্ষণ যে শুধু দুর্গাপুজোতেই থাকে না তা বোঝা যায় এখানে এলে। ধূপগুড়ির ছোট্ট জনপদ দুরামারি গ্রাম।

ডুয়ার্সের খুট্টিমারি জঙ্গল থেকে প্রায় ৪ কিলোমিটার পশ্চিমে নাথুয়াহাট রাজ্য সড়কে দুরামারি আদতে চারদিকে তিন ফসলি জমি ঘেরা কৃষি বলয়। যেখানে বাসিন্দারা সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন লক্ষ্মী পুজোর জন্য।

গ্রামে যত্ন নিয়ে দুর্গাপুজো হলেও মায়ের চেয়ে মেয়ের কদরই বেশি এখানে। এখানে শুধু বাড়িতে লক্ষ্মী পুজো আটকে থাকে না। ধুমধামের সঙ্গে সর্বজনীন লক্ষ্মীপুজোও হয়। দুরামারি বাজার, হাইস্কুল, একটি প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র ও চারপাশের এক দেড় কিলোমিটার এলাকার মধ্যে বিভিন্ন পাড়ায় বিভিন্ন ক্লাব রয়েছে। শান্তিপাড়া তরুণ সঙ্ঘ, কাশিয়াবাড়ি ভাই ভাই ক্লাব, বাবুপাড়া, মধ্যপাড়া, নিউ গ্রীন স্পোর্টিং ক্লাব-সহ ৩১টি সর্বজনীন লক্ষ্মী পুজো হয় এখানে।

শহরের পুজোর মত এখানেও কমিটিগুলোর মধ্যে মণ্ডপ ও আলোকসজ্জা নিয়ে প্রতিযোগিতা শুরু হয়ে যায়। তরুণ সঙ্ঘের সম্পাদক রনি সরকার বলেন, “আমাদের যত আশা, আকাঙ্খা সব জমে থাকে লক্ষ্মী পুজোর ক’দিনের জন্য। দু’তিন দিন মণ্ডপে প্রতিমা রাখতে হয় দর্শনার্থীদের ভিড় সামলাতে।’’

মেলা ও মণ্ডপে মণ্ডপে প্রতিমা ও আলোকসজ্জা দেখতে মানুষ ভিড় জমায়। এবার প্রতিমা বিসর্জন হবে ১৮ অক্টোবর। দু’দিন মেলার মাঠে চলবে প্রতিমার প্রদর্শনীও। হবে মেলা। সর্বজনীন প্রতিমাগুলির বির্সজন হলেও গৃহস্থের অনেকেই প্রতিমা প্রদর্শনী করে তা বাড়িতে রেখে সারা বছর পুজো করেন। লক্ষ্মী এখানে একা আসেন না। সঙ্গে থাকে জয়া-বিজয়া নামে দুই সখি। এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে লক্ষ্মী পুজোর আনন্দ ভাগ করে নিতে আসেন গয়েরকাটা, বানারহাট, নাগড়াকাটা, নাথুয়াহাট-সহ ডুয়ার্সের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা। দল বেঁধে আসেন মোঘলকাটা, তোতাপাড়া, গয়েরকাটা-সহ বিভিন্ন চা বাগানের শ্রমিক ও বনবস্তির বাসিন্দারা।

এবার বৃষ্টিতে দুর্গা পুজোয় প্রতিমা দর্শনের ঘাটতিটা লক্ষ্মী পুজোয় সাধ মিটিয়ে পূরণ করে নিতে চান স্থানীয়রা। এলাকার খুদেরা এই দিনগুলির জন্যই স্কুলের টিফিন বাঁচিয়ে মাটির ঘটে পয়সা জমায়। লক্ষ্মী পুজো শুরু হতেই ঘট ভেঙে তার হিসাব চলে। ফের পরের বছরের মেলার জন্য পয়সা জমাতে মেলা থেকে কেনা হয় মাটির ঘট। পুজো উপলক্ষে এলাকার সব বাসিন্দাদের বাড়ি ভরে যায় আত্মীয় স্বজনে। স্থানীয় বাসিন্দা তরুণ দত্ত বলেন, “এলাকায় যত বাসিন্দা আছে সবার বাড়ি কুটুম্বে ভর্তি হয়। যত দূরেই আত্মীয় থাকুক লক্ষ্মী পুজোয় দুরামারি আসবেই।’’ মাথাভাঙা থেকে আসা তরুণবাবুর আত্মীয় কৃষ্ণ দত্ত বলেন, “প্রতিবছর এসময় দুরামারিতে আসা বাধা থাকে।’’ শহর থেকে দূরের একটি গ্রামে যে এত সুন্দর প্রতিমা ও মেলা হয় তা না এলে বোঝাই যেত না বলে জানান তিনি।

৩৭ তম দুরামারি লক্ষ্মী পুজা ও মেলা কমিটির সম্পাদক নির্মলকুমার রায় জানান, সব জাতি ধর্ম মিলে এক হয়ে যায় লক্ষ্মী পুজো ও মেলার ক’দিন। তিনি আরও বলেন, ‘‘আমরা কৃষক মানুষ। মা লক্ষ্মীর কৃপায় অন্ন জোটে। সেই বিশ্বাসেই এই উৎসব।’’

Duramari people Laxmi puja
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy