Advertisement
E-Paper

পুজোর মুখে প্রৌঢ় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে বৃদ্ধার হাতেখড়ি

পাড়ার স্কুলে সরস্বতী পুজো। বসেছে হাতে খড়ির আসর। স্কুল থেকেই দেওয়া হচ্ছে নতুন স্লেট, পেনসিল। আর তা জানতে পেরে বড় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে সটান হাজির মা। স্কুলে গিয়েই মহিলার ঘোষণা, ‘‘আমিও লেখা শিখব।’’

অভিজিৎ সাহা

শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৮ ০২:১৯
অক্ষর: জীবনে প্রথম অক্ষর লেখার স্বাদ পেলেন রুনুদেবী। নিজস্ব চিত্র

অক্ষর: জীবনে প্রথম অক্ষর লেখার স্বাদ পেলেন রুনুদেবী। নিজস্ব চিত্র

পাড়ার স্কুলে সরস্বতী পুজো। বসেছে হাতে খড়ির আসর। স্কুল থেকেই দেওয়া হচ্ছে নতুন স্লেট, পেনসিল। আর তা জানতে পেরে বড় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে সটান হাজির মা। স্কুলে গিয়েই মহিলার ঘোষণা, ‘‘আমিও লেখা শিখব।’’ তখনই তিনি স্লেট, পেনসিল চেয়ে ছেলেকে নিয়ে বসে পড়লেন হাতে খড়ির আসরে। ছেলের সঙ্গে নিজেও জীবনে প্রথমবার স্লেটে পেনসিল দিয়ে লিখলেন ‘অ, আ’। রবিবার বিকেলে মা-ছেলের হাতে খড়ি নেওয়ার অদম্য ইচ্ছে দেখে হতবাক মালদহের ২ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজোর উদ্বোধনে হাজির থাকা স্কুল কর্তৃপক্ষ সহ প্রশাসনিক আমলারাও।

সরস্বতী পুজোতেই তো হাতে খড়ি দেওয়ার রেওয়াজ। তবে এখানে হতবাক কেন?

মালদহ প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান আশিস কুন্ডু বলেন, “মা ছেলেকে হাতে খড়ি দিতে স্কুলে নিয়ে আসবেন সেটা স্বাভাবিক। তবে সত্তরোর্ধ্ব মহিলা তাঁর ৫০ বছরের ছেলেকে নিয়ে এক সঙ্গে হাতে খড়ি দিচ্ছেন, তা দেখা যায় না।” ইংরেজবাজার শহরের ২ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনির বাসিন্দা ওই বৃদ্ধা রুনু ধর বলেন, “খুব ছোট থাকতেই বাবা মারা যান। তাই অভাবের সংসারে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। বিয়ে হলেও অভাব সঙ্গ ছাড়েনি। তাই চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে সমীরকে স্কুলে ভর্তি করার সুযোগ পাইনি।” তবে এই বয়সে ছেলেকে কি স্কুলে ভর্তি করবেন? তিনি বলেন, “শুনেছি বয়স্ক মানুষদের স্কুলের তরফে পড়াশোনা শেখানো হবে। তাই শুধু ছেলে নয়, আমিও ভর্তি হব। যাতে শেষ বয়সে টিপসই না দিয়ে স্বাক্ষর করতে পাড়ি।” আর মায়ের পাশে বসে মুচকি মুচকি হাসছেন সমীর বাবু। তিনি বলেন, “মা আমাকে স্কুলে ভর্তি করেই ছাড়ল।”

ইংরেজবাজার শহরের ৪ নম্বর ওয়ার্ডে রয়েছে ২ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়। রেল লাইন সংলগ্ন স্কুলে বহু পরিবারই অক্ষরজ্ঞানহীন। এলাকার অক্ষরজ্ঞান হীন মানুষদের স্বাক্ষর করার উদ্যোগ নিয়েছেন স্কুল কর্তৃপক্ষ। স্কুলেই বয়স্ক শিক্ষা কেন্দ্র চালুর উদ্যোগ নিয়েছেন তাঁরা। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে প্রচার করে ওই শিক্ষা কেন্দ্রে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হয়েছেন ২২ জন। কারও বয়স ষাটের উপরে। কেউ বা আবার সত্তরের উপরে। এমনই বয়স্ক পড়ুয়াদের এদিন বিকেলে হাতে খড়ি দেওয়ালেন জেলাশাসক কৌশিক ভট্টাচার্য ও প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান আশিস কুণ্ডু। এ ছাড়া উপস্থিত ছিলেন ইংরেজবাজার পুরসভার পুরপ্রধান নীহাররঞ্জন ঘোষ। স্কুল সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রতি রবিবার সকাল আটটা থেকে স্কুলে পঠন-পাঠন শুরু হবে। দেড় ঘন্টা করে পড়ানো হবে তাঁদের।

স্কুল কর্তৃপক্ষের এমন অভিনব উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন জেলা শাসক কৌশিক বাবু। তিনি বলেন, “মানুষ গুলোর ইচ্ছে খুব প্রশংসনীয়। আশা করছি আরও মানুষ উৎসাহিত হয়ে স্কুলে আসবেন।” সন্ধ্যা কর্মকার, সত্যবালা সাহারা বলেন, “শেষ বয়সে স্কুলে এসেছি শুধুমাত্র সই শেখার জন্য।”

Saraswati Puja Literacy Elderly Lady
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy