পাড়ার স্কুলে সরস্বতী পুজো। বসেছে হাতে খড়ির আসর। স্কুল থেকেই দেওয়া হচ্ছে নতুন স্লেট, পেনসিল। আর তা জানতে পেরে বড় ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে স্কুলে সটান হাজির মা। স্কুলে গিয়েই মহিলার ঘোষণা, ‘‘আমিও লেখা শিখব।’’ তখনই তিনি স্লেট, পেনসিল চেয়ে ছেলেকে নিয়ে বসে পড়লেন হাতে খড়ির আসরে। ছেলের সঙ্গে নিজেও জীবনে প্রথমবার স্লেটে পেনসিল দিয়ে লিখলেন ‘অ, আ’। রবিবার বিকেলে মা-ছেলের হাতে খড়ি নেওয়ার অদম্য ইচ্ছে দেখে হতবাক মালদহের ২ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে সরস্বতী পুজোর উদ্বোধনে হাজির থাকা স্কুল কর্তৃপক্ষ সহ প্রশাসনিক আমলারাও।
সরস্বতী পুজোতেই তো হাতে খড়ি দেওয়ার রেওয়াজ। তবে এখানে হতবাক কেন?
মালদহ প্রাথমিক শিক্ষা সংসদের চেয়ারম্যান আশিস কুন্ডু বলেন, “মা ছেলেকে হাতে খড়ি দিতে স্কুলে নিয়ে আসবেন সেটা স্বাভাবিক। তবে সত্তরোর্ধ্ব মহিলা তাঁর ৫০ বছরের ছেলেকে নিয়ে এক সঙ্গে হাতে খড়ি দিচ্ছেন, তা দেখা যায় না।” ইংরেজবাজার শহরের ২ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনির বাসিন্দা ওই বৃদ্ধা রুনু ধর বলেন, “খুব ছোট থাকতেই বাবা মারা যান। তাই অভাবের সংসারে আর স্কুলে যাওয়া হয়নি। বিয়ে হলেও অভাব সঙ্গ ছাড়েনি। তাই চার ছেলে-মেয়ের মধ্যে বড় ছেলে সমীরকে স্কুলে ভর্তি করার সুযোগ পাইনি।” তবে এই বয়সে ছেলেকে কি স্কুলে ভর্তি করবেন? তিনি বলেন, “শুনেছি বয়স্ক মানুষদের স্কুলের তরফে পড়াশোনা শেখানো হবে। তাই শুধু ছেলে নয়, আমিও ভর্তি হব। যাতে শেষ বয়সে টিপসই না দিয়ে স্বাক্ষর করতে পাড়ি।” আর মায়ের পাশে বসে মুচকি মুচকি হাসছেন সমীর বাবু। তিনি বলেন, “মা আমাকে স্কুলে ভর্তি করেই ছাড়ল।”