উত্তরের জঙ্গলে চোরাশিকারিদের দৌরাত্ম্য নতুন নয়। গন্ডার ও হাতি মৃত্যুর একাধিক ঘটনায় ওই বিষয়টি সামনে এসেছে।
বর্ষার মরসুমে ওই চোরাশিকারিরা জঙ্গল গভীর হয়ে যাওয়ার সুযোগ নিতে পারে এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন না বন আধিকারিকরা। তাই প্রজনন ঋতুতে বন্যপ্রাণীদের ঘিরে নিরাপত্তা বলয় তৈরি করতে উদ্যোগী হয়েছে বন দফতর। এর জন্য জঙ্গল সাফারির কাজ করা বাছাই করা হাতিদেরও এ বার জঙ্গল পাহারার কাজে লাগানো হচ্ছে। একই সঙ্গে গাইডদের আবেদনে সাড়া দিয়ে বন দফতর জঙ্গল বন্ধের তিন মাস তাঁদেরও পাহারার কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বছরে ন’মাস জঙ্গলে পর্যটকদের গাইড করেন ওরা। যে তিন মাস জঙ্গলে পর্যটকদের ঢোকা নিষিদ্ধ, সেই সময় গাইডরা ঘরে বসে থাকেন। জঙ্গল খোলা থাকার সময় যেটুকু উর্পাজন করে তাতেই জঙ্গল বন্ধের তিন মাস টেনেটুনে খুবই অনটনের মধ্যে দিয়ে সংসার চালান। তবুও তাঁরা বনদফতরের কাছে আবেদন করেন, ঘরে বসিয়ে রাখার চেয়ে বন্ধের তিন মাস জঙ্গলেই কাজ দেওয়া হোক তাঁদের। ওই গাইডদের আবেদনে সারা দিয়ে বনদফতর তাঁদের বন্ধের তিন মাস জঙ্গল পাহারার কাজে লাগানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যান গাইড অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক প্রবীর দাস বলেন, “জঙ্গল বন্ধের তিন মাস আমাদের কোনও কাজ থাকে না। বাড়িতে বসে থাকতে হয়। তাই আমরা বনকর্তাদের কাছে আবেদন করেছিলাম, এই সময় আমাদের জঙ্গলের কাজে লাগাতে। বনকর্তারা অনুমতি দেওয়ায় আমরা জঙ্গলকে ভালবেসে বিনা পারিশ্রমিকে তিন মাস পাহারার কাজ করব।” জলদাপাড়া জাতীয় উদ্যানের সহকারি বন্যপ্রাণ সহায়ক বিমল দেবনাথ বলেন, “গাইডরা একটা ভাল সিদ্বান্ত নিয়ে আমাদের জানিয়েছিল। তাই আমরাও ওদের জঙ্গল পাহারার কাজে লাগাতে পেরে খুশি।”
চম্পাকলি, মৈনাক, অনসূয়া, লক্ষ্মী, মধুমালা, মীনাক্ষীরা সবাই জলদাপাড়া বনাঞ্চলের প্রশিক্ষিত হাতি। জলদাপাড়া ও বড়ডাবরি এলাকায় মূলত ‘হাতি সাফারি’র কাজে ওদের লাগান হয়। বর্ষার মরসুমে ওদের সবাইকেই বনাঞ্চলে টহলদারির জন্য বেছে নেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গের বনপাল ( বন্যপ্রাণ) সুমিতা ঘটক বলেন, “অভয়ারণ্য বন্ধ বলে পর্যটক ভিড় নেই। ফলে ওই এলাকার সাফারির কাজে ব্যবহৃত হাতিরাও পাহারায় সময় দিচ্ছে।”
চিলাপাতা, কোদালবস্তি, মেন্দাবাড়ি থেকে হলং সর্বত্র ওই এক ছবি। দফতরের এক কর্তার কথায়, “উত্তরে দফতরের পোষা হাতির সংখ্যা ৮০টি। সুনসান পর্যটক মরসুমে আমরা কোন ঝুঁকি নিতে চাইছি না। সেইসঙ্গে কোনও হাতির ওপরেই যাতে বেশি চাপ না পড়ে সেজন্য পর্যটনের কাজে যুক্তদের বসিয়ে না রেখে পাহারার কাজে লাগান হচ্ছে। তাতে কারও চাপ বাড়ছে না, আবার সবাই ফুরফুরেও থাকছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy