Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

কুলিক সাফাই কাজে এ বার পরিবেশপ্রেমীরা

প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে ‘কুলিক সাফাই অভিযান’ কর্মসূচি পালন করল পরিবেশপ্রেমী সংগঠন হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ার্স অ্যান্ড ট্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশন। রায়গঞ্জের কুলিক নদীকে দূষণমুক্ত করার জন্য বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাস সংলগ্ন প্রায় দেড় কিলোমিটার নদী ও নদী সংলগ্ন এলাকা সাফাই করেন।

নিজস্ব সংবাদদাতা
রায়গঞ্জ শেষ আপডেট: ০৬ জুন ২০১৬ ০২:৪০
Share: Save:

প্রশাসনের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলে ‘কুলিক সাফাই অভিযান’ কর্মসূচি পালন করল পরিবেশপ্রেমী সংগঠন হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ার্স অ্যান্ড ট্রেকার্স অ্যাসোসিয়েশন। রায়গঞ্জের কুলিক নদীকে দূষণমুক্ত করার জন্য বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা রায়গঞ্জের কুলিক পক্ষিনিবাস সংলগ্ন প্রায় দেড় কিলোমিটার নদী ও নদী সংলগ্ন এলাকা সাফাই করেন।

সংগঠনের ডাকে সাড়া দিয়ে ওই অভিযানে সামিল হয়েছিলেন রায়গঞ্জের বিভিন্ন ব্যবসায়ী, স্বেচ্ছাসেবী ও পশুপ্রেমী সংগঠনের সদস্যরা। রায়গঞ্জ পুরসভার তরফ থেকে একদন সাফাইকর্মী এই কাজে সাহায্য করে। কোদাল, বেলচা, ঝুড়ির সাহায্যে কুলিক নদীতে ভেসে থাকা আবর্জনা ও থার্মোকল উঠিয়ে নদীর ধারে জমা করেন। পাশাপাশি, নদীর দুই ধারে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা গৃহপালিত প্রাণীদের মৃতদেহ, প্লাস্টিক-সহ বাসিন্দাদের ফেলে যাওয়া বিভিন্ন আবর্জনাও সাফ করেন তাঁরা। পরে পুরসভার সাফাইকর্মীরা আবর্জনাগুলি সংগ্রহ করে শহরের বন্দর এলাকার ডাম্পিং গ্রাউন্ডে ফেলে দেন।

অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক কৌশিক ভট্টাচার্যের অভিযোগ, প্রশাসনের গাফিলতির জেরে প্রায় বছরখানেক ধরে কুলিক নদীতে দূষণ বাড়ছে। দূষণ রুখতে প্রশাসনের কোনও নজরদারি নেই বলেও দাবি করেন তিনি তিনি। তিনি বলেন, ‘‘অ্যাসোসিয়েশনের তরফে গত ছ’মাস ধরে প্রশাসনের কাছে একাধিকবার নদীকে দূষণমুক্ত করার দাবি জানানো হলেও কোনও লাভ হয়নি।’’ প্রশাসনের টনক নড়াতেই এ দিন প্রতীকি সাফাই অভিযান করা হল বলে জানান তিনি।

কুলিক নদীকে ঘিরে রয়েছে কুলিক পক্ষিনিবাস। প্রতিবছর মে থেকে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত পক্ষিনিবাসে বসবাসকারী পরিযায়ী পাখিরা কুলিক নদী থেকেই মাছ, শামুক, শ্যাওলা সহ বিভিন্ন জলজপ্রাণী খাবার হিসেবে সংগ্রহ করে।

অ্যাসোসিয়েশনের অভিযোগ, প্রশাসনের নজরদারির অভাবে দীর্ঘদিন ধরে রায়গঞ্জের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ রাতের অন্ধকারে নদী ও নদীর ধারে বস্তাবোঝাই করে বিভিন্ন গৃহপালিত প্রাণীর মৃতদেহ ও আবর্জনা ফেলে যাচ্ছেন। এছাড়াও এলাকার বাসিন্দারা প্রতিদিন নদীতে শতাধিক মোষ স্নান করানোর পাশাপাশি বাসন ও পোশাক ধোওয়ার কাজ করছেন বলেও অভিযোগ। গরমের সময়ে নদীর চরে বেআইনিভাবে ভুট্টাচাষও করা হয়। যার ফলে সার, কীটনাশক ও রাসায়নিক পদার্থ নদীর জলে মিশে যাওয়ায় দূষণ আরও বাড়ছে। এছাড়াও প্রতিদিন দিনভর ভিন রাজ্যের একাধিক মাছ সরবরাহকারী ট্রাকের চালক শহরের বিভিন্ন বাজারে মাছ নামিয়ে সেইসব খালি ট্রাকগুলিকে নদীর চরে নামিয়ে সাফাই করার ফলে দিনভর নদীতে ভেসে বেড়াচ্ছে থার্মোকলের তৈরি মাছের বাক্সের ছোটবড় টুকরো।

অ্যাসোসিয়েশনের ডাকে সাড়া দিয়ে এ দিনের কুলিক নদী সাফাই অভিযানে মোট ১২টি সংগঠনের সদস্যরা সামিল হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম রায়গঞ্জ মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও পিপল ফর অ্যানিম্যালের রায়গঞ্জ শাখার সম্পাদক অজয় সাহা বলেন, ‘‘অবিলম্বে প্রশাসন নদী ও সংলগ্ন এলাকায় দূষণ রুখতে পরিকল্পিত পদক্ষেপ না নিলে দিনে দিনে দূষণ বাড়তে থাকবে।’’ পরিযায়ীরা খাবারের অভাবে পক্ষিনিবাস বিমুখ হবে বলেও আশঙ্কা জানিয়েছেন তিনি।

রায়গঞ্জের বিভাগীয় বনাধিকারিক দীপর্ণ দত্তের মতে, বাসিন্দারা পরিবেশ সম্পর্কে সচেতন না হলে নদীদূষণ রোখা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, ‘‘ভবিষ্যতে কীভাবে নদী ও সংলগ্ন এলাকায় স্থায়ীভাবে দূষণ রোখা সম্ভব সেই বিষয়ে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে দফতরের তরফে প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে।’’ জেলাশাসক রণধীর কুমার পরিবেশের স্বার্থে উপযুক্ত পদক্ষেপ নেবেন বলে জানিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

environment workers cleaning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE