Advertisement
E-Paper

সারা গায়ে কাদা, হাতে রক্ত, ফিরেই খিচুড়ি-পাঁপড়ভাজা

যে উত্তেজনা এবং রোমাঞ্চ নিয়ে এবড়োখেবড়ো পথ গাড়িতে ডিঙ্গিয়ে আমরা ডোলেতে পৌঁছলাম, তা অনেকটাই মিইয়ে দিল প্রকৃতি। দুপুরেই ঘন অন্ধকার। বৃষ্টি পড়েই চলেছে। এখানে এসে জেনেছি নেওড়ার জঙ্গলে সারা বছর বৃষ্টি হয়।

অনিমেষ বসু

শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৮ ০৬:২৭

তাঁবু খাটিয়ে অস্থায়ী বাসস্থান। অস্থায়ী রান্নাঘর থেকে শৌচাগার সবই তৈরি হয়েছে সমুদ্র থেকে কয়েক হাজার ফুট উঁচুর গহন জঙ্গলে। তৃতীয় এবং শেষ ক্যাম্পে এসে পৌঁছেছি আমরা। নেওড়াভ্যালির জঙ্গলের ডোলেতে পড়েছে আমাদের সমীক্ষা-ক্যাম্প।

যে উত্তেজনা এবং রোমাঞ্চ নিয়ে এবড়োখেবড়ো পথ গাড়িতে ডিঙ্গিয়ে আমরা ডোলেতে পৌঁছলাম, তা অনেকটাই মিইয়ে দিল প্রকৃতি। দুপুরেই ঘন অন্ধকার। বৃষ্টি পড়েই চলেছে। এখানে এসে জেনেছি নেওড়ার জঙ্গলে সারা বছর বৃষ্টি হয়। বছরে এমন কোনও মাস বৃষ্টি ছাড়া কাটে না। ডোলেতে গাড়িতে পৌঁছনোর পর হেঁটে পৌঁছতে হল ক্যাম্পে। হাঁটা মানে উতরাই পথে নীচে নামা। বৃষ্টিতে পাথর পিচ্ছিল হয়ে ছিল। সমীক্ষক দলে থাকা বিশেষজ্ঞদের এমন কেউ বাদ নেই যিনি বৃষ্টি ভেজা ঢালু পথে আছাড় খাননি। সব মিলিয়ে আমরা ৬৫ জন দলে ছিলাম। এক কথায় বলতে পারি সকলেই একবার না একবার পিছলে পড়ে, গায়ে কাদা মেখে তবেই ক্যাম্পে পৌঁছতে পেরেছিলাম। কাদা মেখে জোঁক, এঁটুলির কামড় খেয়ে যখন ক্যাম্পে পৌঁছলোম তখনও বৃষ্টি ঝরছে অঝোরে।

তবে ডোলের জঙ্গল যেন অন্য একটা জগৎ। তার প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য আমাদের ভরিয়ে দিয়েছিল। আমরা তখন সভ্য জগৎ থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন। কোনও মোবাইলে সিগন্যাল নেই। সভ্যতার সঙ্গে আমাদের জুড়ে রেখেছে একটাই ক্ষীণ বন্ধন তা হল বনকর্মীদের হাতে থাকা আরটি, অর্থাৎ ওয়ারলেস রেডিও সেট। তাতেই ভাঙা, অস্পষ্ট ভাবে মাঝেমধ্যে কানে আসছে সভ্যতার কণ্ঠস্বর। আমাদের পৌঁছতে তিনটে বেজে গিয়েছে। বৃষ্টির কারণে সেদিন আর সমীক্ষা হল না। তাঁবুতে তৈরি অস্থায়ী হলে পরের দিনের সমীক্ষার পরিকল্পনা ছকে ফেলা হলো। কতগুলি দল যাবে, সেই দলে কারা থাকবে, কোন দিকে যাওয়া হবে সবকিছু। তাঁবুর সেই ‘ডাইনিং হলে’ই রাতের খাবার সারা হল। পরদিন মানুষের পায়ের চিহ্ন না থাকা গভীর জঙ্গলের নতুন জীববৈচিত্র্যের খোঁজ মিলবে এই আশা নিয়েই ঘুমোতে গিয়েছিলাম সকলে।

পরদিন সকালে উঠে তাঁবুর বাইরে এসেই মন খারাপ হয়ে গেল। মনে হল অভিযানে জলই ঢেলে দিল প্রকৃতি। বৃষ্টি আরও বেড়ে গেল। আশেপাশে জল জমে গিয়েছে, ঢালা পথে স্রোতের মত বৃষ্টির জল বইছে। কাদায় থকথকে জমির এলাকাগুলি। জুতোর ভিতরে জল ঢুকে ফুলে ফেঁপে উঠেছে। এদিকে অভিযান শেষ হবে আর তিন দিন পরে। হাতে সময়ও নেই। অতএব তাঁবুর ঘরে বসে থাকা নয়। বর্ষাতি গায়ে চাপিয়ে, ছাতা মাথায় সকলে বেরিয়ে পড়লাম জঙ্গলে, নতুন প্রাণের খোঁজে। ঠিক ছিল সকলে দুপুর দু’টোর মধ্যে ফিরে আসব। একে বৃষ্টি তায় নতুনের সন্ধানের নেশা সকলে ফিরতে ফিরতে তিনটে পনেরো মিনিট হয়ে গেল। ফেরত আসা দলের কারও সারা গায়ে কাদা, কারও হাত থেকে রক্ত ঝরছে কোনও অজানা পোকার কামড়ে। কারও হাত পায়ে জঙ্গলি লতার ছোঁয়ায় লাল চাকাচাকা দাগ। যাই হোক, সবাই ফেরার পর তখনই শুরু হল দুপুরের খাওয়াদাওয়া। বৃষ্টির সকালেই আবদারটা সেরে রেখেছিলেন সকলে। নানা আনাজ দিয়ে তৈরি খিচুড়ি, পাঁপড়ভাজা আর বেগুনভাজা।

(চলবে)

Neora Valley Tiger Survey Camp
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy