বছর খানেক আগেও ফলন নিয়ে চিন্তায় থাকতেন তুফানগঞ্জের ধলপলের বাসিন্দা নরেন্দ্রনাথ দাস। একই ব্যাপারে উদ্বেগে থাকতেন কোচবিহার সদরের ঢাংঢিংগুড়ির বীরেন দাসও। কিন্তু এখন অবস্থা পাল্টেছে। ‘জলদি ফুলকপি’র হাত ধরে মুখে হাসি ফুটেছে কৃষকদের।
কোচবিহার জেলার প্রায় হাজারখানেক চাষি লাভের মুখ দেখেছেন এই ‘জলদি ফুলকপি’ চাষ করে। উদ্যান পালন দফতরের পরিসংখ্যানও বলছে, কৃষিকাজে অনিশ্চয়তা থাকলেও এই চাষে লাভ হওয়ায় জেলায় চাষের এলাকা দু’বছরে দ্বিগুণ বেড়েছে।
উদ্যান পালন দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, কোচবিহারে ফুলকপি চাষের উৎসাহ বরাবরের। বিশেষ করে তুফানগঞ্জ মহকুমায় প্রতি বছর বিস্তীর্ণ এলাকায় ফুলকপি চাষ হতো। জেলায় উৎপাদিত ফুলকপি অসম, মেঘালয়ে ব্যাপক রফতানি করা হতো। এক দশকের বেশি সময় আগে থেকে ওই সব রাজ্যেও উৎপাদন শুরু হওয়ায় ফুলকপির চাহিদা কমতে শুরু করে। তার ওপর এক সঙ্গে বিপুল ফলন বাজারে চলে আসায় দাম কমে যাওয়ায় সমস্যায় পড়তে হয় চাষিদের। ওই সমস্যা দূর করতেই বছর পাঁচেক আগে কোচবিহারে পরীক্ষামূলকভাবে ‘জলদি ফুলকপি’ চাষে উৎসাহ দিতে আসরে নামেন উদ্যানপালন দফতরের কর্তারা। শুরুতে সেভাবে সাড়া না মিললেও তিন বছরের মধ্যে প্রায় ৫০০ হেক্টর এলাকায় ওই চাষ শুরু হয়। বাকি জায়গা থেকে আগে ফলন শুরু হওয়ায় সকলেই লাভের মুখ দেখেছেন ওই চাষে। শেষ দু’বছরে চাষের এলাকা দ্বিগুণ বেড়ে এক হাজার হেক্টরে দাঁড়িয়েছে। আগে গ্রিন হাউসে চাষ হলেও এখন জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায় উঁচু জমিতে ‘জলদি ফুলকপি’র চাষ হয়েছে। উদ্যানপালন দফতরের কোচবিহার জেলা আধিকারিক খুরশিদ আলম বলেন, “বাজারে ফুলকপির কম জোগান ও বেশি চাহিদা থাকায় এবারও ভাল দাম মিলেছে।’’ জেলায় এই চাষে উৎসাহও বাড়ছে বলে জানান তিনি।
দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, অগস্ট মাস থেকে ‘জলদি ফুলকপি’র বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হয়। ৫০-৬০ দিনের মাথায় ফলন মেলে। ধলপলের বাসিন্দা নরেন্দ্রনাথ দাস বলেন, “গ্রিন হাউসে আটশো চারা লাগাতে খরচ হয়েছে দু’হাজার টাকা। অর্ধেক ফলন বিক্রি করেই প্রায় ছ’হাজার টাকা ঘরে তুলেছি।” ঢাংঢিংগুড়ির কৃষক বীরেন দাস জানান, ৮০-১০০ টাকা কেজি দরে পাইকারি ফুলকপি বিক্রি করেছেন তিনি। কম সময়ে এত ভাল লাভ অন্য কোনও সব্জি দেয় না বলেও জানান বীরেনবাবু। উত্তরবঙ্গ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সব্জি বিজ্ঞান বিভাগের কর্তারাও কোচবিহারে ‘জলদি ফুলকপি’ চাষ নিয়ে আশাবাদী। ওই বিভাগের শিক্ষক রঞ্জিত চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে জেলায় এর চাষ আরও প্রসার করা সম্ভব। তিনি জানান, অধিক বৃষ্টি ও তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে এমন চারা নির্বাচন জরুরি। জমি হবে উঁচু, নিকাশিযুক্ত। বিভিন্ন পুজোর সময় ফলন তোলার পরিকল্পনা থাকলে লাভের সম্ভবনা আরও বাড়বে। তার জন্য ধাপে ধাপে চারা লাগাতে হবে বলে জানিয়েছেন রঞ্জিতবাবু।