Advertisement
E-Paper

বাঁক নিয়ে তেড়ে এসে ভাসিয়ে দিল নদী

মাঝে মাত্র ২২টি দিন। এই ব্যবধানে গঙ্গায় অন্তর্জলী যাত্রার স্মৃতি ফের আরও ভয়াবহ হয়ে ফিরে এল মালদহের বীরনগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে। গত ২৯ জুলাই রাতে প্রায় ৫০০ মিটার মার্জিনাল বাঁধ ভেঙে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকারটোলা ও চিনাবাজার গ্রামের অন্তত ৬০টি বাড়ি গঙ্গা গর্ভে বিলীন হয়েছিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০১৬ ০২:০৪
ঘরের উঠোনে বইছে গঙ্গা। ছবিটি তুলেছেন মনোজ মুখোপাধ্যায়।

ঘরের উঠোনে বইছে গঙ্গা। ছবিটি তুলেছেন মনোজ মুখোপাধ্যায়।

মাঝে মাত্র ২২টি দিন। এই ব্যবধানে গঙ্গায় অন্তর্জলী যাত্রার স্মৃতি ফের আরও ভয়াবহ হয়ে ফিরে এল মালদহের বীরনগর ১ গ্রাম পঞ্চায়েতে। গত ২৯ জুলাই রাতে প্রায় ৫০০ মিটার মার্জিনাল বাঁধ ভেঙে ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের সরকারটোলা ও চিনাবাজার গ্রামের অন্তত ৬০টি বাড়ি গঙ্গা গর্ভে বিলীন হয়েছিল। খোদ এলাকার বিধায়কেরও বাড়ির একাংশ নদীতে তলিয়ে গিয়েছিল। আর শনিবার রাত ১০টা থেকে রবিবার সকাল পর্যন্ত সেই ভেঙে পড়া মার্জিনাল বাঁধের আরও প্রায় ১০০ মিটার ভেঙে নদীতে মিলিয়ে যায়। সঙ্গে সরকারটোলা তো বটেই, পাশের রবিদাসপাড়া মিলিয়ে প্রায় ৬০টি পরিবারের অন্তত একশো বাড়িকে গঙ্গা গ্রাস করে। আর গঙ্গার সেই আগ্রাসী রুপ দেখে অন্তত দু’শো পরিবার তাদের বাড়িঘর ভাঙা ও আসবাবপত্র সরিয়ে নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন। ওই তালিকায় রয়েছেন ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের খোদ প্রধান ডলি মণ্ডলও। তিনি জানিয়েছেন, বাড়ি এই মুহূর্তে না ভেঙে নিলেও আসবাবপত্র বীরনগর ২ গ্রাম পঞ্চায়েতে থাকা এক আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে এসেছেন। ধেয়ে আসা নদীর পাড় থেকে তাঁর পাকা বাড়ির দূরত্ব এখন প্রায় ২৫ মিটার। একই দূরত্ব রয়েছে বীরনগর বালিকা বিদ্যালয়ের ভবনও। দুর্গতদের অনেকেই এদিন আশ্রয় নিয়েছেন বীরনগর হাইস্কুলে।

এ দিকে, ত্রাণ নিয়ে দুর্গতদের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভ ছড়িয়েছে। তাঁদের অভিযোগ, সকাল গড়িয়ে বিকেল হলেও তাঁরা কোনও ত্রাণ পাননি। ত্রিপল তো দূরের কথা, সামান্য চিঁড়ে পর্যন্ত তাঁদের জোটেনি। কালিয়াচক ৩ ব্লকের দুই যুগ্ম বিডিও সকালের দিকে কিছুক্ষণের জন্য এলাকায় গেলেও বিডিও বা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কোনও আধিকারিকের দেখা দুপুর তিনটে পর্যন্ত কেউই পাননি। বিকেল সাড়ে তিনটে নাগাদ জেলাশাসক শরদ দ্বিবেদী ঘটনাস্থলে যান। তিনি ভাঙন কবলিত এলাকা দেখে বীরনগর হাইস্কুলে এসে দুর্গতদের বিক্ষোভের মুখে পড়েন। দুর্গতরা ত্রাণ না মেলায় বিক্ষোভ দেখান। সেখানে থাকা পুলিশ পরিস্থিতি সামাল দেয়।

পরে জেলাশাসক বলেন, ‘‘কিছু মানুষ ত্রাণ না পেয়ে ও পুনর্বাসনের দাবিতে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। আমি বিষয়টি তাঁদের বুঝিয়েছি। বাড়ি নদীতে তলিয়ে গিয়েছে এমন ৫২ জনকে আমরা চিহ্নিত করে তালিকা তৈরি করেছি। এ দিন বিকেলের মধ্যেই গ্রাম পঞ্চায়েত অফিস থেকে ওই তালিকায় থাকা নাম ঘোষণা করা হবে। তারপর ওই তালিকাভুক্তদের বিডিও অফিস থেকে ত্রাণ হিসেবে ডিসাস্টার ম্যানেজমেন্ট কিট বিলি করা হবে। আর ক্ষতিগ্রস্তদের বাড়ি তৈরিতে অর্থ সাহায্যের ব্যাপারে সোমবারই ফোরম্যান কমিটি বৈঠক করে তালিকা চূড়ান্ত করবে। সেই তালিকা সরকারের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া হবে।’’

গত মাসের ২৯ তারিখ রাতে বীরনগরের মার্জিনাল বাঁধের প্রায় ৫০০ মিটার অংশ ভেঙে গঙ্গা ঢুকে পড়েছিল সরকারটোলা ও চিনাবাজারে। গ্রাস করেছিল প্রায় ৫৫টি বাড়ি। এ ছাড়া, শতাধিক পরিবার আতঙ্কে ঘরবাড়ি ভেঙে নিয়েছিল। ২২ দিনের মাথায় ফের ওই এলাকাতেই থাবা বসাল গঙ্গা।

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাত দশটা, সরকারটোলা ও রবিদাস পাড়ার বাসিন্দারা তখন কেউ খাচ্ছেন, কেউ শোওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। সে সময়ই ভেঙে পড়া সেই মার্জিনাল বাঁধের প্রায় ১০০ মিটার অংশ বিকট আওয়াজে ভেঙে পড়ে। তারপরই নদীর জলের ধারা বাঁক নিয়ে ফের সরকারটোলা ও রবিদাসপাড়ার দিকে ধেয়ে আসে। আর সেই ভাঙনের জেরে একের পর এক কাঁচা ও পাকা বাড়ি নদীতে পড়তে শুরু করে। অতুল মণ্ডল, পরিতোষ মণ্ডল, সন্তোষ মণ্ডল, প্রদীপ সরকার, প্রলয় সরকার, মনোজ মণ্ডল, পার্বতী রবিদাস, অখিল রবিদাসদের মতো প্রায় ৬০ জনের কাঁচা-পাকা বাড়িগুলি তলিয়ে যায়। তাঁদের দাবি, এত দ্রুত নদীর স্রোত ধেয়ে আসে যে তাঁরা পরিবার-পরিজন নিয়ে কোনওরকমে জীবন বাঁচাতে পেরেছেন। পরিতোষবাবুর অবস্থা আরও করুণ। এলাকায় তাঁকে পাওয়া যায়নি। তাঁর দাদা অতুলবাবু বলেন, ‘‘বহু কষ্ট করে ভাই সদ্য পাকা বাড়ি তৈরি করেছে। এখনও গৃহপ্রবেশ করে ঢুকতে পর্যন্ত পারেনি। এরইমধ্যে রাতে বাড়িটি তলিয়ে গেল। ভাই উদভ্রান্তের মতো হয়ে গিয়েছে। আমরা চার ভাই সর্বস্ব হারিয়ে বীরনগর হাই স্কুলে ঠাঁই নিয়েছি।’’ তাঁরা ছাড়া আরও অনেক পরিবারই ওই স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। কিন্তু এদিন সেখানে কোনও ত্রাণ শিবির চালু করা হয়নি বলে অভিযোগ। এদিকে গঙ্গার আগ্রাসী মনোভাবে এদিন সকাল থেকে এলাকার প্রায় দুশো পরিবার তাদের পাকা বা কাঁচা বাড়িগুলি ভেঙে নেওয়ার কাজ শুরু করেছেন।

গঙ্গা ভাঙন অব্যাহত রয়েছে ওই ব্লকেরই পারদেওনাপুর-শোভাপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকাতেও। সেখানে মূলত আবাদি জমি নদী গ্রাস করছে। এ ছাড়া ওই গ্রাম পঞ্চায়েতের বেশ কিছু এলাকাতে গঙ্গার জল ঢুকেও পড়েছে। সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন গঙ্গার জলস্তর ছিল ২৫.১০ মিটার। যা বিপদসীমার চেয়ে ৪১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে বইছে। জলস্তর আরও বাড়ার দিকে।

Flood maldah Relief
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy