নামেই বাঘবন। কিন্তু বাঘ কোথায়? বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পকে ঘিরে সেই প্রশ্নই ক্রমশ প্রকট হচ্ছে।
২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসে বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের জঙ্গলে বন দফতরের পাতা ট্র্যাপ ক্যামেরায় একটি বাঘের ছবি ধরা পড়ে। তা নিয়ে হইচই শুরু হয়। বছর দুই পর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসেও ট্র্যাপ ক্যামেরায় বাঘের ছবি ধরা পড়ে। দিন কয়েকের ব্যবধানে দুইবার সেই ছবি বন দফতরের তরফে প্রকাশও করা হয়। সেই সময় বন দফতরের কর্তাদের আরও দাবি ছিল, ওই দুটি ছবিই নয়, ট্র্যাপ ক্যামেরায় বাঘের আরও কিছু ছবিও ধরা পড়ে। তবে নিরাপত্তার খাতিরে সেগুলি আর প্রকাশ করা হয়নি। তার পর কেটে গিয়েছে এক বছরেরও বেশি সময়। বাঘের ছবির আশায় বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পে চলতি বছর ট্র্যাপ ক্যামেরার সংখ্যা বাড়িয়ে ২২৬টি করা হয়েছিল। কিন্তু চলতি শীতে সেই ক্যামেরাগুলিতে একটি বাঘের ছবিও ধরা পড়েনি। ফলে প্রশ্ন উঠছে নামে ব্যাঘ্র প্রকল্প হলেও, বক্সায় আদৌ কী বাঘ রয়েছে কি না।
বন দফতরের কর্তাদের অবশ্য দাবি, বক্সায় বাঘ রয়েছে। যার পরোক্ষ (ইনডাইরেক্টলি) প্রমাণও তাঁদের কাছে রয়েছে। তবে সেই প্রমাণ সর্বোচ্চ স্তরে গ্রাহ্য না হওয়ায় তাঁরা আপাতত এ নিয়ে চুপ। আর সেই কারণেই বিষয়টিতে কোনও মন্তব্য করতেও নারাজ বন দফতরের কর্তারা। বক্সা ব্যাঘ্র প্রকল্পের ক্ষেত্র অধিকর্তা অপূর্ব সেন বলেন, ‘‘এ ব্যাপারে এই মুহূর্তে কোনও মন্তব্য করব না। সময় হলে অবশ্যই জানতে পারবেন।’’
বন দফতর সূত্রে খবর, বাঘের খোঁজ পেতে মরিয়া বন কর্তারা। তাই নির্দিষ্ট সময় পর ২২৬টি ট্র্যাপ ক্যামেরার বেশির ভাগ খুলে নেওয়া হলেও, কিছু ক্যামেরা এখনও রাখা হয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞ থেকে শুরু করে পরিবেশকর্মীদের একাংশের কথায়, বক্সায় দীর্ঘ দিন ধরেই বাঘ নেই। অনেক সময় প্রবল শীতের কারণে বাঘ যে সব বন্যপ্রাণীদের শিকার করে, তারা পাহাড় থেকে নীচে নেমে আসে। আর সেই কারণেই সাম্প্রতিক অতীতে দু’বার সেই শিকারের লক্ষ্যে বক্সায় বাঘকে আসতে দেখা গিয়েছিল। এই পরিস্থিতিতে বক্সায় বাঘের বসবাসের আরও সুষ্ঠ পরিবেশ গড়ে তোলার দাবিও উঠছে।
রাজ্যের প্রাক্তন প্রধান মুখ্য বনপাল রবিকান্ত সিনহা বলেন, ‘‘বক্সার চার দিকে যেভাবে মানুষের বসতি দেখা যায়, তাতে করে সেখানে বাঘের দেখা পাওয়া কঠিন। তাই বক্সায় বাঘ দেখতে হলে আগে সেখানে সেই পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।’’ পরিবেশপ্রেমী সংগঠন ন্যাফের কো-অর্ডিনেটর অনিমেষ বসুও বলেন, ‘‘বক্সায় বাঘের দেখা পেতে হলে সেখানে বাঘের বসবাসের পরিবেশ আরও ভাল করে গড়ে তুলতে হবে।” বনকর্তারা জানিয়েছেন, বক্সায় বাঘের বসবাসের পরিবেশ গড়ে তুলতে সেখানে গত কয়েক বছর ধরে কাজ চলছে।
(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)